আর পাঁচটি কিশোরীর মতোই জীবন কাটাচ্ছিল দেবনন্দা। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার। কিন্তু সেখানে সুখের অভাব ছিল না। কিন্তু সব সুখ সয় না। ক্লাস টুয়েলভের ছাত্রী দেবনন্দারও তা সয়নি। হঠাৎই আসে ভয়ঙ্কর খবর। তার বাবা ক্যানসারের আক্রান্ত। রোগ বাসা বেঁধেছে লিভারে। বাঁচানো খুব কঠিন। সঙ্গে সঙ্গেই জীবন পালটে যায় কেরলের দেবনন্দার।
দিন এগোতে থাকে। ক্রমশ দেবনন্দার বাবা হারাতে থাকেন কর্মক্ষমতা। আস্তে আস্তে এমন সময় আসে তার বাবা প্রায় সারা দিনই কাটিয়ে ফেলতেন বিছানায়। তিনিই পরিবারের এক মাত্র রোজগেরে। ফলে একপ্রকার মাথায় হাত হয়ে যায় এই পরিবারের। কিন্তু বাঁচাতে হবে বাবাকে। কী করে? চিকিৎসকরা জানান, লিভার প্রতিস্থাপনই একমাত্র রাস্তা।
লিভার প্রতিস্থাপন করার প্রক্রিয়াটি নেহাত সহজ নয়। তার জন্য দরকার প্রচুর টাকা। তার সঙ্গে দরকার একজন এমন মানুষ, যিনি নিজের লিভার দান করতে পারবেন। কোনও কিছুতেই এমন কাউকে পাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে এক সময়ে হাল ছেড়েই দেয় এই পরিবার। কিন্তু ভাগ্য তাদের পাশ থেকে সরে যায়নি।
চিকিৎসকরা জানান, পরিবারের কারও সঙ্গে রক্তের গ্রুপ মিললে তাঁর থেকেও নেওয়া যেতে পারে লিভারের অংশ। দেবনন্দার বাবার রক্তের গ্রুপ বি নেগেটিভ। এমনিতেই এই রক্তের গ্রুপের মানুষ পাওয়া যায় তুলনায় কম, তার উপর লিভার দানে তিনি কতটা ইচ্ছুক, সেটিও দেখতে হবে। ফলে সব মিলিয়ে আবার যে-কে-সেই অবস্থায় চলে আসে এই পরিবার।
এমন সময়ে দেবনন্দাই প্রস্তাব দেয়, বাবাকে বাঁচাতে সে নিজে রাজি আছে লিভারের অংশ দিতে। কিন্তু তার বয়স মোটে ১৭। প্রাপ্তবয়স্ক না হলে কারও পক্ষে অঙ্গদান সম্ভব নয়। তা আইনবিরুদ্ধ। এই কথায় কেরল হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় এই পরিবার। দেবনন্দার কথা শোনেন বিচারক। এবং শেষ পর্যন্ত তিনি রাজি হন এই বিষয়ে অনুমতি দিতে।
তাই দেবনন্দার লিভারের অংশ কেটে বসানো হয় তার বাবার শরীরে। আপাতত বাবা এবং মেয়ে দু’জনেই সুস্থ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ৬ থেকে আট সপ্তাহের মধ্যেই তাঁদের দু’জনের লিভার বেড়ে আগের মতো পূর্ণ আকার নেবে। ফলে এই নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আর দেবনন্দা? এই মুহূর্তে ভারতের কনিষ্ঠতম অঙ্গদানকারী হিসাবে নথিভুক্ত হয়ে গিয়েছে তার নাম। রেকর্ড করে ফেলেছে সে।
এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক https://htipad.onelink.me/277p/p7me4aup