হিজাব বিতর্কে এমনিতেই উত্তপ্ত কর্নাটক। এরই মাঝে রবিবার রাতে সেরাজ্যের শিবমোগা জেলায় খুন হন এক বজরঙ দলের সদস্য। এই আবহে ক্রমেই আরও ঘোরালো হয়ে উঠেছে দক্ষিণের এই রাজ্যের পরিস্থিতি। আর বাসবরাজ বোম্মাইয়ের সরকার ঘরে বাইরে এই নিয়ে চাপে রয়েছে। একদিকে যেখানে রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অরগা জ্ঞানেন্দ্র দাবি করেন যে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে হিজাব বিতর্কের যোগ নেই। যদিও বিজেপির অন্দরে এই ঘটনা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কর্নাটকের মাইসোর-কোডাগুর বিজেপি সাংসদ এই ঘটনা লজ্জার বলে আখ্যা দিয়েছেন। রাজ্যের মন্ত্রী ইএস ঈশ্বরাপ্পা সরাসরি এই ঘটনার জন্য ‘মুসলিম গুন্ডা’দের দোষারোপ করেছেন। এদিকে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা সিদ্দারামাইয়াও সরকারকে তোপ দেগেছেন। এই আবহে শিবমোগার ঘটনায় বেঙ্গালুরুর জগজীবন রাম নগর থেকে তিনজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে জানা গিয়েছে।
রবিবার রাতে শিবমোগা জেলা সদর শহরে ২৩ বছর বয়সী হর্ষকে খুন করা হয়। পেশায় একজন দর্জি হর্ষ বজরঙ দল সদস্য হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি কয়েকদিন আগেই হিজাবের বিরোধিতা করে পোস্ট করেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। পাশাপাশি অভিন্ন দেওয়ান বিধির পক্ষেও বারংবার সওয়াল করেছেন তিনি। এহেন হর্ষকে রবিবার চার থেকে পাঁচজন অজ্ঞাতপরিচয় লোক হত্যা করে। এরপরই জেলা জুড়ে সহিংস বিক্ষোভের ঘটনা ঘটতে শুরু করে। সারা দেশ থেকে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতারা এর নিন্দা করতে থাকেন। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হর্ষবর্ধন রাঠোর, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত এই ঘটনায় শোকের পাশাপাশি ক্ষোভও প্রকাশ করেন।
এদিকে হর্ষের শেষ যাত্রায়ও হিংসা ছড়ায় বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনায় এক চিত্রসাংবাদিক, মহিলা পুলিশকর্মী সহ অনেকেই জখম হন। এরপরই শহরজুড়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। শিবমোগা পুলিশ জানিয়েছে যে হর্ষের আততায়ীরা তাঁকে আক্রমণ করার আগে একটি গাড়িতে তাঁকে তাড়া করেছিল। ঘটনার পর তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানেই তিনি মারা যান।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে হর্ষের ভাই বলেন, ‘আমার ছোট ভাই আজ মৃত কারণ সে 'জয় রাম, শ্রী রাম' স্লোগান দিত। কারণ সে নিজেকে 'হিন্দু হর্ষ' বলে ডাকত। গতকাল (রবিবার) রাতে সে রাতের খাবার খেতে বাসা থেকে বের হয়। রাত সাড়ে আটটার দিকে, আমরা একটি ভিডিয়ো পাই এবং লোকেরা আমাদের জানায় যে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। মানুষ কীভাবে এত নিষ্ঠুর হতে পারে, ভাবাই যায় না। তাদের কি সন্তান নেই? আমি সকল যুবকদের কাছে প্রার্থনা করি, হিন্দু-মুসলিম উভয়ই, তোমরা তোমাদের পিতামাতার ভালো সন্তান হও। বাকিটা ভুলে যাও।’