অর্চনা কাণ্ডে উত্তাল ওড়িশা বিধানসভা। বৃহস্পতিবার ওড়িশা বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন শুরু হয়। এবং প্রথমদিনই প্রতারক অর্চনা নাগের যৌন কেলেঙ্কারির চাঞ্চল্যকর ঘটনা নিয়ে হৈচৈ শুরু হয় বিধানসভায়। বিরোধী বিজেপি এবং কংগ্রেসের বিধায়করা মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের পদত্যাগ দাবি করেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, গোটা ঘটনায় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিকে এই কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটও। এই আবহে গতকালই শাসকদল বিজু জনতা দলের বিধায়কের ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ইডি কর্তারা। প্রসঙ্গত, যৌনচক্র চালিয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ব্ল্যাকমেল করে কোটি কোটি টারা আদায়ের অভিযোগে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছে অর্চনা নাগ। এই নিয়ে তোলপাড় ওড়িশার রাজনীতি।
প্রবীণ কংগ্রেস নেতা নরসিংহ মিশ্র বলেন, বেশ কয়েকজন নেতা ও মন্ত্রী এই যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনায় জড়িত ছিলেন। মিশ্রর অভিযোগ, ‘এর পরেও মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে কোনও বক্তব্য দিচ্ছেন না। ঘটনা নিয়ে একটি কথা না বলে তিনি তাঁদের রক্ষা করছেন। পদে থাকার কোনও নৈতিক অধিকার নেই তাঁর। অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত।’ তিনি বলেন, এ বিষয়ে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট যে তদন্ত করছে তা সঠিক পথেই চলছে। মিশ্র বলেন, ‘ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁদেরকে গ্রেফতার করছে যাঁদের পুলিশ ছেড়ে দিয়েছিল। এটি প্রমাণ করে যে পুলিশ অপরাধীদের সঙ্গে জড়ির সরকার।’ এ ব্যাপারে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন।
এদিকে বিজেপিও এই ইস্যুতে সরকারকে নিশানা করেছে এবং অভিযোগ করেছে যে পট্টনায়কের নীরবতা পালন করে অভিযুক্ত বিজেডি নেতাদের আড়াল করছেন। বিধানসভায় বিজেপির চিফ হুইপ মোহন মাঁঝি বলেন, ‘এই বিষয়ে যে বিজেডি নেতারা জড়িত, সেদিকেই ইঙ্গিত করছে মুখ্যমন্ত্রীর নীরবতা। তাই দেরি না করে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া উচিত নবীনের।’
এদিকে, অর্চনা নাগ মামলায় অর্থ পাচারের তদন্ত চলছে। ধেনকানালের বিজেডি বিধায়ক সুধীর সামালের ব্যবসায়ী ভাইকে এই মামলায় জেরা করেছে ইডি। তাঁর সঙ্গে অর্চনার ৩০ লক্ষ টাকা লেনদেনের কথা জানতে পেরেছে ইডি। এদিকে ধেনকানালের একটি গাড়ির শোরুমের মালিক গঙ্গাধর সামলকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারীরা। ইডি আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে অর্চনা এবং তাঁর স্বামীর রিমান্ডের জন্য খুরদা জেলা বিচারকের আদালতে একটি প্রোডাকশন আবেদন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ওড়িশার বহু বিধায়ক, রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী পা দিয়েছেন অর্চনা নাগের যৌনচক্রের ফাঁদে। ধনী ব্যবসায়ীরাও অর্চনার ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। এহেন অর্চনাকে নিয়েই সিনেমা বানাতে চান ওড়িয়া প্রযোজক শ্রীধর মার্থা। জানা গিয়েছে, অর্চনার যৌনচক্রের ‘শিকার’ হয়েছেন ২৫ জন রাজনীতিক। তাঁদের মধ্যে ১৮ জন বিধায়ক এবং দুই জন মন্ত্রী রয়েছেন। প্রতারণার টাকায় কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি নিজের নামে করেছে অর্চনা। এর তদন্তেই নেমেছে ইডি।