ছক ভেঙে কিছু করার সংকল্প যেন রক্তেই আছে কমলা হ্যারিসের। ১৯ বছরে মা শ্যামলা গোপালন ক্যালিফোর্নিয়ায় স্নাতকোত্তরের পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন। আজ থেকে ৬২ বছর আগে দাঁড়িয়ে খুব কম সংখ্যক মহিলাই সেই কাজ করেছিলেন। আর সেই মায়ের মেয়েই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক দলের ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। মার্কিন ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিসেবে কোনও প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াই করতে চলেছেন কমলা।
বছর ৫৫-এর কমলা চেন্নাইয়ে জন্মেছিলেন। নিজেদের সংস্কৃতি এবং পরিচয়ের যোগ রাখতে কমলা এবং তাঁর বোন মায়ার সংস্কৃত নাম রেখেছিলেন তাঁদের মা। যিনি ক্যানসার নিয়ে গবেষণা করতেন। ২০০৯ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। কমলার বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস জামাইকার। তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। খুব কম বয়সেই কমলার বাবা-মা'র বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল।
ছোটোবেলায় কমলার জীবনের অনেকটা অংশ জুড়ে ছিলেন মা। তাঁর জীবনে মা'র প্রভাব কতটা, তা রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর হিসেবে লড়াইয়ের সময় জানিয়েছিলেন কমলা। তিনি বলেন, ‘আমার মা যিনি ছিলেন, তাঁর বিশ্বাস, তাঁর স্বপ্ন পূরণের ক্ষমতা, পরে কাজ সম্ভব করে তোলার, আমার মা কোনওদিন কারোর থেকে অনুমতি চাননি তাঁর কাছে কী সম্ভব, আর সেই কারণেই একটা প্রজন্মের মধ্যে আমি এখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছি।’
শুধু মা নয়, কমলার জীবনে দাদু পি ভি গোপালনের ব্যাপক প্রভাব ছিল। ষাটের দশকের শেষের দিকে সরকারি চাকুরে গোপালনকে জাম্বিয়ায় পাঠানো হয়েছিল। সেখানে গিয়েছিলেন কমলা। পরে একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে ক্যালিফোর্নিয়ার সেনেটের বলেন, ‘মা ছাড়া আমার জীবনের অন্যতম প্রভাবশালী মানুষ হলেন আমার দাদু। উনি আমার অন্যতম প্রিয় মানুষ ছিলেন।’ ১৯৯৮ সালে দাদুর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক ছিল কমলার।
তারইমধ্যে আমেরিকায় চলে আসেন। ওকল্যান্ডে বড় হতে থাকেন তিনি। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে ভরতি হয়েছিলেন। তারপর আলামেদা কাউন্টির ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির অফিসে কাজ শুরু করেছিলেন কমলা। ২০০৩ সালে সান ফ্রান্সিসকোর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি হয়েছিলেন। তারপর একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০১৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার সেনেটর হিসেবে শপথ নেন কমলা। এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ে সামিলও হয়েছিলেন। পরে অবশ্য সরে আসেন। যদিও এবার ডেপুটি হওয়ার পদপ্রার্থী দৌড়ে ঢুকে নয়া নজির গড়লেন কমলা।