তাঁর 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদী উল্লেখ করেছিলেন ৮৪ বছর বয়সী তেলাঙ্গানার বাসিন্দা প্রাক্তন অধ্যক্ষ ভিট্টালাচার্য কুরেল্লার নাম। ভূয়সী প্রশংসায় এই প্রাক্তন অধ্যক্ষের উদ্যোগকে ভরিয়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'শেখার আনন্দকে এগিয়ে নেওয়ার চেয়ে বড় সুখ আর নেই'। আর সেই সূত্র ধরেই রেডিওর অনুষ্ঠানে মোদী জানান দেন, তেলাঙ্গানার এই প্রবীণ শিক্ষাবিদ কীভাবে তিলে তিলে নিজের বাড়িকে রূপান্তরিত করেছেন আস্ত একটা লাইব্রেরিতে।
উল্লেখ্য, অধ্যাপক ভিট্টালাচার্য কুরেল্লার শখ হচ্ছে বই সংগ্রহ। আর শুধু সংগ্রহ নয়। তার সঙ্গে সেই বইকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে আগ্রহী তিনি। আর প্রাক্তন অধ্যক্ষের এই উদ্যোগকে প্রশংসা না করে থাকতে পারেননি স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী। তেলাঙ্গানার ইয়েলাঙ্কি গ্রামের বাসিন্দা কুরেল্লা নিজের বাড়িকে ২০১৪ সালে লাইব্রেরিতে রূপান্তরিত করে ফেলেছেন। এই লাইব্রেরিতে রয়েছে ২ লাখ বইয়ের সম্ভার। বইয়ের এই সংগ্রহে মোহিত গবেষক থেকে স্কুল পড়ুয়ারা। বই পড়তে যাঁরা ভালোবাসেন তাঁদের কাছে এই উদ্যোগ কার্যত উপহার স্বরূপ হয়ে রয়েছে। এদিকে দেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রশংসা করেছেন শুনে আপ্লুত প্রাক্তন অধ্যক্ষ কুরেল্লা। তিনি বলেন, 'এটা দারুণ সারপ্রাইজ ছিল। অল ইন্ডিয়া রেডিওর এক সাংবাদিক একথা আমাকে জানান যে প্রধানমন্ত্রী আমার সম্পর্কে রেডিওতে বলতে চলেছেন। আমি জানি না উনি তেলাঙ্গানার এই প্রত্যন্ত গ্রামে আমার কাজের কথা কীভাবে জানলেন।'
১৯৩৮ সালে পিতৃবিয়োগের পর থেকে বই একমাত্র সঙ্গী প্রাক্তন এই অধ্যক্ষের। তিনি বলেন, 'আমি সব বই রকম পড়তে ভালোবাসতাম। তবে বই কেনার ক্ষমতা ছিল না।' কখনও শিক্ষকদের কাছ থেকে কখনও-বা বন্ধুদের কাছ থেকে বই নিয়ে এসে পড়তেন কুরেল্লা। ইতিহাস থেকে শুরু করে সাহিত্য পর্যন্ত সমস্ত রকমের বই পড়তে ভালোবাসতেন এই শিক্ষাবিদ। এরপর স্বপ্ন দেখতেন লাইব্রেরি তৈরির। নিজের কর্মজীবন ধরে বহু সময়ে নানান বই সংগ্রহ করতে শুরু করেন তিনি। শিক্ষক হিসাবে কেরিয়ার শুরু করে অধ্যক্ষ হিসাবে কেরিয়ার শেষ করেন তিনি। আর এই গোটা কর্মজীবনে তেলুগু সাহিত্যের এই শিক্ষাবিদ নানান রকমের বইকে সংগ্রহে এনেছেন। তেলুগু সাহিত্যে ২০টিরও বেশি বই লিখেছেন কুরেল্লা।
উল্লেখ্য, বাড়িতে যে লাইব্রেরি কুরেল্লা খুলেছেন সেখানে তাঁর সকল শুভানুধ্যায়ীকে বই অনুদান দিতে আবেদন করছেন কুরেল্লা। তাঁর তৈরি এই লাইব্রেরি সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এই লাইব্রেরি আপাতত কলেবরে আরও বাড়িয়ে নেওয়ার বিষয়ে সচেষ্ট এই প্রবীণ। তেলাঙ্গানার কাকতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে গবেষকরা আপাতত ভিড় জমাচ্ছেন এই বিশেষ লাইব্রেরিতে।