বাণিজ্য নগরী মুম্বই। সেখানে গৌতম আদানিকে অনেকে 'বহিরাগত' হিসাবেই দেখেছিলেন। কিন্তু ২০১৮ সালে এসে দ্রুত গতিতে সেখানে ব্যবসা বাড়াতে শুরু করে আদানি গোষ্ঠী। শহরতলির মুম্বইয়ে অনিল আম্বানির বিদ্যুত্ সরবরাহের ব্যবসা অধিগ্রহণ করে নেন গৌতম আদানি। আর সেভাবে এক লহমায় মুম্বইয়ের এক বিরাট অংশজুড়ে ব্যবসায়িক ব্যপ্তি সেরে ফেলেন তিনি।
তবে, এটা আদানির অশ্বমেধের সূচনামাত্র ছিল। এরপর পাঁচ বছরের মধ্যে মুম্বইয়ে দ্রুত হারে এগোতে থাকে আদানি গোষ্ঠী। মুম্বইয়ের বিমানবন্দর, বন্দর, শহরের রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্র, বিদ্যুত্ সরবরাহ এবং পরিকাঠামো খাতে ছড়িয়ে পড়ে আদানি গ্রুপের নাম।
বর্তমানে শেয়ার বিপর্যয়ে ক্রমেই নিম্নমুখী হচ্ছে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার। মার্কিন শর্ট-সেলারের রিপোর্টে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ার ম্যানিপুলেশন এবং ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের অভিযোগ তোলা হয়েছে। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টের পর মাত্র ৫ দিনেই শেয়ার বাজারে প্রায় ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হারিয়েছে আদানি গোষ্ঠীর ৭ সংস্থা। আরও পড়ুন: SEBI কর্তার মেয়েই তো আদানির পুত্রবধূ, নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তৃণমূল সাংসদ মহুয়ার
আর এরই মধ্যে আদানি গ্রুপের বরাতপ্রাপ্ত বড় প্রকল্পগুলির ভবিষ্যত নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ঠিক কোন কোন প্রকল্পের কথা বলা হচ্ছে?
১. মুম্বইয়ের কেন্দ্রস্থলে ৩০০ হেক্টর জুড়ে ধারাভি রিডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট চলছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আদানি রিয়েলটি ৫,০৬৯ কোটি টাকার দরে সেই বস্তি পুনর্নির্মাণের দরপত্র জেতে।
২. নাভি মুম্বই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বরাত পেয়েছে আদানি গোষ্ঠী। বর্তমানে তা নির্মাণাধীন। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ এই বিমানবন্দর চালু হয়ে যাওয়ার কথা।
৩. নাভি মুম্বইতে বিদ্যুত্ সরবারহের ব্যবসার সম্প্রসারণ।
এই বিষয়ে মহারাষ্ট্রের এক শীর্ষ আধিকারিক(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বললেন, সরকার এই কাজগুলি(আদানি সম্পর্কিত) এখন বেশ কড়া নজরে রাখছে। যে প্রকল্পগুলির কাজ এখনও শুরু করা হয়নি, বা বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে, সেগুলি এই অবস্থায় পিছিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি এখনও এই প্রকল্পগুলির টাকা জোগানোর বিষয়ে একটি অস্বস্তির মধ্যে রয়েছে। তারা কী করবে, এখনও ঠিক করে উঠতে পারছে না। তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই যে ফান্ডিং পেয়ে যাওয়ার কথা, সেগুলি হয় তো এসে যাবে। কিন্তু যে কাজগুলি এখনও শুরুই হয়নি, সেগুলিতে টাকা আসতে সময় লাগতে পারে। উদাহরণস্বরূপ ধারাভি পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের(DRP) ক্ষেত্রে এখন কিছুটা সময় লাগতে পারে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, চলতি মাসেই মহারাষ্ট্র সরকারের আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষরের কথা ছিল। যত সময় যাচ্ছে, ক্রমেই যেন সেই চুক্তির সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে।
হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের পর আদানি গোষ্ঠীর আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন বিরোধীরাও। মহারাষ্ট্র কংগ্রেসের দাবি, এখনই ধারাভির প্রকল্পের বরাত বাতিল করা হোক। আদানির থেকে সেই কাজ ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি করছেন তাঁরা। এর পাশাপাশি নাভি মুম্বই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাজ কেমন চলছে, তাই নিয়েও বাড়তি নজরদারির দাবি করা হয়েছে। আরও পড়ুন: আদানিকে কত টাকা দেওয়া হয়েছে? ব্যাঙ্কগুলিকে জানাতে বলল RBI - রিপোর্ট
মহারাষ্ট্র কংগ্রেসের প্রধান নানা পাটোলে বলেন, 'ধারাভিতে লক্ষ লক্ষ দরিদ্র মানুষের বাস। সেখানকাল বহু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এখন সংকটে। আদানি গোষ্ঠীর আসল অবস্থা এখন সবার সামনে উন্মোচিত হয়ে গিয়েছে। সরকারের উচিত তাঁদের কাছ থেকে ধারাভি পুনর্নবীকরণ প্রকল্পটি ফিরিয়ে নেওয়া।' তবে সরকারি তরফে এ হেন কোনও সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়নি।