মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত প্রক্রিয়া ফাঁসি। ভারত ছাড়া এই প্রক্রিয়া কার্যকর করা হয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশে।
বিশ্বের প্রাচীনতম ও সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রক্রিয়া ফাঁসি। ভারত ছাড়া এই প্রক্রিয়া চালু রয়েছে আফগানিস্তান, ইরান, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, লেবানন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর, জাপান, সিরিয়া, মালয়েশিয়া, কিনিয়া, জিম্বাবোয়ে, সুদান, বটসোয়ানা, মিশর এবং ক্যিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের অধিকাংশ দেশে। আমেরিকার ওয়াশিংটন রাজ্যে বিষ ইঞ্জেকশনের পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ড হিসেবে চালু রয়েছে ফাঁসিও।
প্রায় ২,৫০০ বছর আগে প্রাচীন পারস্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে ফাঁসির প্রচলন হয় প্রথম। অপরাধীকে চরম দণ্ড দেওয়ার এই রীতি কয়েকটি কারণে জনপ্রিয় হয়েছে। প্রথমত, এই প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে তাড়াতাড়ি দণ্ডিতের প্রাণনাশ হয়। দ্বিতীয়ত, এই প্রক্রিয়া কার্যকর করতে বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন হয় না। তৃতীয়ত, এই প্রক্রিয়ায় অপেক্ষাকৃত স্বল্পমেয়াদী মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করতে হয় আসামিকে।
গত ২,০০০ বছরে ঠিক কতজন আসামিকে ফাঁসিকাঠে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে, তার হিসেব না পাওয়া গেলেও মনে করা হয়, এই সংখ্যা অন্তত ৫ লাখ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোট চার রকম ফাঁসি প্রক্রিয়া চালু রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিজ্ঞানসম্মত হল ‘লং ড্রপ’ পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়ায় আসামির দেহের দৈর্ঘ্য, ওজন ও আকৃতি মেপে ফাঁসির প্রকোষ্ঠ তৈরি করা হয়। অর্থাৎ, গলায় ফাঁস লাগানোর পরে পায়ের নীচের পাটাতন সরে গেলে দেহটি ঠিক কত দূর পর্যন্ত পড়বে, তা আগেই নির্ধারণ করা হয়। প্রকোষ্ঠের ভিতরে দেহটি পড়ে যাওয়ার পরে সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মধ্যে দড়ির পতন আচমকা থেমে যায়। এর ফলে হ্যাঁচকা টান লেগে ভেঙে যায় কণ্ঠার হাড়। সঙ্গে সঙ্গে গভীর অচেতনতায় ডুবে যায় আসামির শরীর এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে মত্যু ঘনায়।
ফাঁসির এই প্রক্রিয়া ১৮৭৪ সালে ব্রিটেনে চালু হয় এবং কালক্রমে ব্রিটিশ উপনিবেশগুলিতেও বাস্তবায়িত হতে শুরু করে। ইংরেজের চালু করা মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সেই পদ্ধতি আজও অনুসরণ করছে ভারত।