পাড়া, কর্মক্ষেত্রে থেকে বন্ধুবান্ধব। সকলের কাছেই হাজ্জা সিসার পরিচয় একজন পুরুষ হিসাবে। স্ত্রীর মৃত্যুর পর মানুষ করেছেন মেয়েকেও। কিন্তু সকলের সেই ধারণাটা একটু ভুল ছিল। আসলে ৬৭ বছরের সিসা পুরুষ নন, এক জন নারী। পুরুষের বেশেই ৪৩টা বছর পার করেছেন মিশরের সিসা।
কিন্তু কেন? সিসা জানিয়েছেন তাঁর মেয়ে তখন ছোট। বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় স্বামীর মৃত্যু হয়। ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েন তিনি। সেই সময়েই ঠিক করেন, যে করে হোক, উপার্জন করবেন। আর মেয়েকে বাবার অভাব বুঝতে দেবেন না।
কিন্তু পুরুষ সাজার কী ছিল? সিসা বলেন, 'সমাজ আমাকে বাধ্য করেছে। আমাদের সমাজে একজন মেয়ের ক্ষমতা থাকলেও সে পুরুষদের কাজ করতে পারে না। কিন্তু আমাকে, আমার মেয়েকে কে দেখবে? তাই আমি পুরুষের রূপ নিয়ে কাজ শুরু করলাম।'
স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর আবার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন সিসার পরিবার। কিন্তু তাতে তিনি রাজি হননি। মেয়েকে নিয়ে বাসস্থান বদলে ফেলেন সিসা। এরপর চুল কেটে ফেলেন। মাথায় বেঁধে ফেলেন পাগড়ি। সেই সঙ্গে গলা ভারী করে কথা বলা শুরু করেন। এর পাশাপাশি শুরু করেন মুচি হিসাবে জীবিকা নির্বাহ করা।
তিনি জানান, পড়াশোনা জানি না। এটাই আমার আয়ের সহজতম উপায় ছিল। এর মাধ্যমেই মেয়েকে বড় করেছি আমি।এভাবেই দীর্ঘ ৪৩টা বছর কাটিয়েছেন সিসা। তিনি বলেন, 'প্রথম প্রথম একজন মেয়ে হয়ে পুরুষ সেজে থাকতে ভীষণ কষ্ট হত। কিন্তু সন্তানের কথা ভেবে সব সহ্য করে নিয়েছি।'
৬৭ বছর বয়সে শারীরিক অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে গেলে তাঁর এই রহস্য ছড়িয়ে পড়ে। সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে ভাইরাল হয় তাঁর ছবি ও কাহিনী। সিসার সন্তানকে মানুষ করা ও নিজের উপার্জন করার অদম্য ইচ্ছার স্বীকৃতিস্বরুপ তাঁকে সম্মান জানায় মিশর সরকার। 'দেশের সেরা মা' সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে সিসাকে।