কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিচারপতি সৌমেন সেনের 'সংঘাত' মামলার শুনানি পিছিয়ে গেল সুপ্রিম কোর্টে। উচ্চ আদালতের দুই বিচিরাপতির সংঘাত মামলার পাশাপাশি সোমবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হওয়ার কথা ছিল মেডিক্যাল কলেজে ভরতিতে দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার। উল্লেখ্য, এই মেডিক্যাল ভরতি মামলাকে কেন্দ্র করেই দুই বিচারপতির সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়। তবে সোমবার এই দুই মামলার শুনানি হয়নি শীর্ষ আদালতে। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি এই মামলার শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
কলকাতা উচ্চ আদালতে দুই বিচারপতির সংঘাতের বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের নজরে পড়েছিল। তাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পদক্ষেপ করেছিল শীর্ষ আদালত। এই মামলার শুনানির জন্য গঠন করা হয় পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় ছাড়াও সেই বেঞ্চে আছেন বিচারপতি সঞ্জীব খন্না, বিচারপতি বিআর গাভাই, বিচারপতি সূর্যকান্ত, বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু। এই আবহে কলকাতা হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ বনাম ডিভিশন বেঞ্চের সংঘাতের জেরে মেডিক্যাল ভরতি সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলা সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল হাই কোর্ট থেকে। এদিকে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এই মামলায় যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাতে স্থগিতাদেশ জারি করে শীর্ষ আদালত। এদিকে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে রাজ্যের স্পেশাল লিভ পিটিশনের আবেদনে অনুমতি দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এছাড়া রাজ্য, সিবিআই, মামলাকারীকে নোটিশ জারি করে শীর্ষ আদালত। এই গোটা বিষয় নিয়ে শীর্ষ আদালত বলেছিল, 'আমরা এই নিয়ে কিছু বললে তাতে হাই কোর্টের গরিমা ক্ষুণ্ণ হবে। তাই অন্য ভাবে এই সংঘাতের সমাধান সূত্র বের করব আমরা।'
উল্লেখ্য, মেডিক্যাল কলেজে ভরতির অনিয়ম মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই নির্দেশের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করে রাজ্য। তখন বিচারপতি সৌমেন সেন বিচরপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের উপর মৌখিক স্থগিতাদেশ দেন। সেদিনই এই মামলাটি ফের একবার ওঠে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চে। তখন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ডিভিশন বেঞ্চের মৌখিক স্থগিতাদেশের কথা জানতে পারেন। তখন তিনি জানান, স্থগিতাদেশের লিখিত প্রমাণপত্র না পেলে তা মানা হবে না। সিবিআইকে তদন্ত শুরু করত নির্দেশ দেন তিনি।
এরপরই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন, 'কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে কি বাঁচানোর চেষ্টা করছেন বিচারপতি সেন? নইলে রায়ের কপি না দেখে কী করে আমার রায়ে স্থগিতাদেশ দিলেন তিনি? যে কেউ তাঁর এজলাসে গিয়ে এই আবদার করলে তিনি মানবেন তো? একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছেন তিনি। কেন তাঁর ইমপিচমেন্টের প্রক্রিয়া শুরু হবে না?'
এদিকে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর নির্দেশনামায় লেখেন, বড়দিনের ছুটির আগে শেষ যে দিন আদালতের কাজ হয়, সেদিন বিচারপতি অমৃতা সিনহাকে হাইকোর্টে নিজের চেম্বারে ডেকে পাঠিয়েছিলেন জাস্টিস সেন। বিচরপতি সিনহাকে তিনি রাজনৈতিক নেতার মতো নির্দেশ দিয়ে বলেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা রাজনৈতিক ভবিষ্যত রয়েছে। তাই তাঁকে বিরক্ত করা যাবে না। বিচারপতি সিনহার বেঞ্চের লাইভ স্ট্রিমিং বন্ধ করতে হবে। এছাড়া বিচারপতি সিনহার বেঞ্চে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত ২টি মামলা খারিজ করতে বলেন তিনি।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য এবং নির্দেশনামায় এই সব দাবির বিষয়ে বিচারপতি সৌমেন সেনকে জানান পশ্চিনঙ্গের এজি কিশোর দত্ত। এই আবহে বিষয়টি প্রধান বিচারপতিকে জানানোর নির্দেশ দেন বিচারপতি সেন। ওদিকে নিজের নির্দেশনামায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বিচারপতি সেনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে জানিয়েছেন তিনি। সেই কথা সুপ্রিম কোর্টের কানেও গিয়েছে।