যৌন সম্পর্কের বদলে দেওয়া হবে বেশি নম্বর! ৬ বছর আগে এই যৌন কেলেঙ্কারিটি প্রকাশ্যে আসতে হইচই ফেলে দিয়েছিল তামিলনাড়ু সহ গোটা দেশে। আর ছাত্রীদের এমন প্রলোভন দেখানোর অভিযোগ উঠেছিল মাদুরাই কামরাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ দেবঙ্গ আর্ট কলেজের অধ্যাপিকা নির্মলা দেবীর বিরুদ্ধে। অবশেষে সেই মামলায় শুনানি শেষ করে সোমবার তামিলনাড়ুর শ্রীভিল্লিপুথুর মহিলা আদালত নির্মলা দেবীকে দোষী সাব্যস্ত করে। আর এবার আদালত সাজা ঘোষণা করেছে। তাতে নির্মলা দেবীকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সেই সঙ্গে ২.৪২ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: দেবগৌড়ার পৌত্রের 'সেক্স ভিডিয়ো' কাণ্ডে দায় ঝাড়লেন কুমারস্বামী, কী বলছে BJP?
এই মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ভি মুরুগন এবং গবেষক এস কারুপ্পাসামির বিরুদ্ধেও জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল। যদিও প্রমাণের অভাবে ওই দুজনকে বেকসুর খালাস করেছেন বিচারক টি বাগভাথিয়াম্মাল। এই মামলায় মোট ১০৪ জনের সাক্ষী গ্রহণ করা হয়। যার মধ্যে রয়েছেন নির্যাতিতা ছাত্রীরা, তাদের অভিভাবক, কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকরা।
গত শুক্রবার এই মামলার রায় দেওয়ার কথা ছিল। তবে নির্মলা দেবী আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় মামলাটি সোমবার পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়। সোমবার তিন অভিযুক্ত আইনজীবীদের সঙ্গে আদালতে উপস্থিত ছিলেন। যদিও সাজা ঘোষণার জন্য আরও দুদিনের সময় চেয়েছিলেন নির্মলা দেবীর আইনজীবী। তবে তাতে আপত্তি জানান সরকারি আইনজীবী।
কী ঘটেছিল?
দেশে তোলপাড় ফেলে দেওয়া এই ঘটনাটি প্রকাশ্যে এসেছিল ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি অডিয়ো টেপ ভাইরাল হয়েছিল। তাতে তৎকালীন অধ্যাপিকা নির্মলা দেবীর সঙ্গে কলেজ ছাত্রীদের কথাবার্তা ভাইরাল হয়। অডিয়ো টেপে বলতে শোনা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কের বদলে পরীক্ষায় ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত নম্বর পাওয়া যাবে। আর সেই সঙ্গে টাকা পাওয়া যাবে। কলেজ ছাত্রীদের নির্মলা দেবী সেই প্রস্তাব দিলেও অবশ্য তাঁরা রাজি হননি।
এই নিয়ে নির্মলার বিরুদ্ধে সেই সময় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন ৪ ছাত্রী। যদিও নির্মলা সেই সময় এই কথা অস্বীকার করেছিলেন। কিন্তু, এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুমুল তোলপাড় পড়ে যায় তামিলনাড়ুতে। বিভিন্ন নারীবাদী সংগঠন এবং বিরোধী দল এই ঘটনায় সরব হয়েছিল। পরে চাপে পরে সেই ঘটনায় অভ্যন্তরীন তদন্তের পর নির্মলা দেবীকে সাসপেন্ড করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।এই ঘটনার তদন্ত নেমে ২০১৮ সালে ১৬ এপ্রিল নির্মলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এর পরের দিন মামলাটি সিবি-সিআইডির হাতে স্থানান্তর করা হয়। পরে তদন্তে নেমে সিবি-সিআইডি ওই বছরের ২৪ এপ্রিল মুরুগনকে গ্রেফতার করে। তারপরের দিন অভিযুক্ত গবেষক মাদুরাই জেলা আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭০ এর ১, ১৩ এবং ১২০ (বি) ধারা এবং আইটি আইনে মামলার রুজু করা হয়। প্রায় এক বছরের মধ্যে তদন্ত শেষ করে ১,৩৬০ পাতার চার্জশিট দাখিল করে সিবি-সিআইডি। তবে ২০১৯ সালে জামিন পেয়ে যান নির্মলা দেবী। এবার সেই মামলায় তাকে কারাদণ্ড দিল আদালত।