বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই বিরোধীরা অভিযোগ করে এসেছে যে লাদাখের অনেক জমি দখল করে ফেলেছে চিন। তবে সেই দাবি এবার খারিজ করলেন লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নর তথা ভারতীয় সেনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার বিডি মিশ্র। লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নর বলেন, চিনা দখলদারি নিয়ে এই সব অভিযোগ আদতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। চিনারা জানে যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর চিনকে এক বর্গ ইঞ্চি জমিও নিতে পারবে না আমাদের থেকে। (আরও পড়ুন: চতুর্থ চন্দ্রাভিযানের পরিকল্পনা চলছে, এবারের লক্ষ্য হবে কী? কবে লঞ্চ হবে রকেট?)
বিডি মিশ্র বলেন, 'যখন লাদাখ জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের অংশ ছিল, তখন এখানকার বিধায়কের সংখ্যা কম ছিল। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কৃষি সহ সমস্ত খাতে লাদাখের জন্য বাজেট ছিল খুবই কম। এখন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে লাদাখের বাজেট বাড়ানো হয়েছে। এখানে একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নর, তাঁর সচিবালয় এবং উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে। এই উন্নয়ন এখানকার মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। আমাদের যে দুটি কাউন্সিল আছে, লাদাখ এবং কার্গিল পার্বত্য উন্নয়ন পরিষদ, তাদের সাথে পরামর্শ করা হচ্ছে। আমরা তাদের জিজ্ঞাসা করি তাদের কী প্রয়োজন এবং বাজেটে অনেক কিছু সেই চাহিদা অনুযায়ী করা হয়। সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলির জন্য আমাদের আলাদা কর্মসূচি রয়েছে। রাস্তা এবং টানেল এবং অন্যান্য পরিকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। এ ছাড়া আমরা স্বাস্থ্য ও শিক্ষার দিকে নজর দিচ্ছি।'
এদিকে লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবি উঠেছে সম্প্রতি। তা নিয়ে লেফটেন্যান্ট গভর্নর বলেন, 'দেশের সবথেকে ছোট রাজ্যগুলিরও জনসংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। কিন্তু লাদাখের জনসংখ্যা মাত্র ৩ লাখ। গণতান্ত্রিক ভাবে এই জনসংখ্যায় একটি আলাদা রাজ্য বাস্তবসম্মত নয়। আমাদের দেশের সবথেকে রাজ্যগুলির বিধনসভাতেও ৬০টি করে আসন (যদিও গোয়া, মিজোরাম, পুদুচেরিতে ৬০-এর কম আসন আছে) আছে। সেখানে লাদাখে ৬০ আসনের বিধানসভা করা হলে ২-৩ হাজার মানুষ মিলে একজন বিধায়ককে বেছে নেবেন। এটা বাস্তবসম্মত নয়।' এদিকে 'বহিরাগতদের' লাদাখে জমি বা চাকরি দেওয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রসঙ্গে মিশ্র বলেন, 'বাইরের থেকে আসা কাউকেই জমি দেওয়া হচ্ছে না। খুব বিশেষ ক্ষেত্রেই তা করা হচ্ছে। চাকরির ক্ষেত্রেও লাদাখের বাসিন্দা হওয়ার সার্টিফিকেট দিতে হবে। আমি গত ১০ মাস ধরে এখানকার লেফটেন্যান্ট গভর্নর হিসেবে রয়েছি। এক ইঞ্চি জমিও বহিরাগতদের দেওয়া হয়নি। একটা চাকরিও বাইরের কাউকে দেওয়া হয়নি।'
এদিকে চিনা দখলদারির অভিযোগ প্রসঙ্গে লেফটেন্যান্ট গভর্নর বলেন, '১৯৬২ সালে চিন আমাদের অনেক জমি দখল করেছিল। তখনকার সরকার সেই সময় চিনা হামলার কথা ভাবেনি। তবে আজকের সরকার এই বিষয়ে অবগত। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার এই পারে চিনা সৈনিকের একটি বুটও নেই। এদিকে গবাদি পশুর চারণ ভূমি নিয়ে যে অভিযোগ উঠছে তা নিয়ে বলি, কোনও জমি চিনারা দখল করেনি। তবে নো ম্যানস ল্যান্ড আছে। আগে সে জায়গায় গবাদি পশু নিয়ে যেতে পারত লোকে। তবে এখন নিরাপত্তার কারণে সেখানে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তার মানে এই নয় যে সেই চারণ ভূমি চিনের দখলে চলে গিয়েছে।'