সরকারি হাসপাতালে চূড়ান্ত অব্যবস্থা নিয়ে এই প্রথম সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুললেন মধ্য প্রদেশের শিবরাজ সিং চৌহান মন্ত্রিসভার এক সদস্য।
শুক্রবার ভোররাতে সরকারি হাসপাতালে গিয়ে কঠিন বাস্তবের সম্মুখীন হন মধ্য প্রদেশের বর্ষীয়ান পৌরমন্ত্রী গোপাল ভার্গব। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তিনি জানিয়েছেন, রাত আড়াইটের সময় বুন্দেলখণ্ডের সাগর জেলায় নিজের শহর গড়হাকোটায় সরকারি হাসপাতালে আচমকা উপস্থিত হয়েছিলেন মন্ত্রী।
ফেসবুকে তিনি জানিয়েছেন, ‘বেশ কিছু দিন ধরে অনেকেই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মীদের অনুপস্থিতি এবং এক্সরে-সহ বিভিন্ন পরিষেবার অভাবের অভিযোগ শুনছিলাম। তাই রাত ২.৩০ তে কয়েক জনকে নিয়ে হাসপাতালে হাজির হই। কিন্তু অনেক হাঁক ডাক করেও কোনও চিকিৎসক, কম্পাউন্ডার, নার্স, প্যারামেডিক্যাল কর্মী, এমনকী পিওনের দেখা পাইনি।’
তিনি লিখেছেন, ‘আমি শুধু ভাবছি ওখানে কত দায়িত্বজ্ঞানহীন মানুষ রয়েছেন যাঁরা রাজ্য সরকারের এক মন্ত্রী যখন রাত আড়াইটেয় তাঁর নিজের শহরের হাসপাতালে যান, তখন সেখানকার কর্মীরাই গরহাজির থাকেন। রাহলির প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্র ও শাজাপুরের হাসপাতালেও একই ছবি। আমি ঠিক করেছি, যখনই যেখানে রাত কাটাব সেখানকার সরকারি হাসপাতালে দিনে ও রাতে কমপক্ষে দুই বার হাজির হব এবং এমন দায়িত্বজ্ঞানহীনদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থাও নেব। এই অতিমারীর সময় স্বাস্থ্যের মতো জরুরি পরিষেবায় এমন গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না। একদিকে দিনে ২০০ টাকা রোজগার করতে একজন শ্রমিকের মাথার ঘাম পায়ে পড়ছে, অন্য দিকে প্রতিদিন ৩০০০-৪০০০ টাকা মোটা রোজগেরে চিকিৎসক ও আধিকারিকরা বাতানুকূল ঘরে বসে সুখে সময় কাটাচ্ছেন।’
নিজের মন্তব্যের সঙ্গে একটি ভিডিয়োও শেয়ার করেছেন ভার্গব, যেখানে দেখা যাচ্ছে যে তিনি হাসপাতালের কর্মীদের ডাকলেও কেউ সাড়াদিচ্ছে না। এর পরেই মোটরবাইকে উঠে তিনি হাসপাতাল ছেড়ে বাড়ি ফিরে যান।
শাসকদলের মন্ত্রীর এ হেন প্রতিক্রিয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই গলার জোর বেড়েছে বিরোধী কংগ্রেসের। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির মিডিয়া ব্যবস্থাপক নরেন্দ্র সালুজা বলেন, ‘মন্ত্রী গোপাল ভার্গবের সরস স্বীকারোক্তির প্রশংসা করতেই হয়। বিজেপি শাসনে স্বাস্থ্য পরিষেবা যে শিকেয় উঠেছে এবং তার জন্য সরকার কিছুই করছে না, সে বিষয়ে কংগ্রেসের অবস্থানই এ ক্ষেত্রে সত্যি প্রমাণিত হল।’
জেলাশাসক সাগর দীপক সিং জানিয়েছেন, ‘মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে প্রাতিষ্ঠানিক তদন্ত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি।’
এই বিষয়ে মধ্য প্রদেশের ডিরেক্টোরেট অফ হেল্থ সার্ভিসেস-এর কমিশনার সঞ্জয় গোয়েল বলেন, ‘মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের নির্দেশ অনুসারে ওই রাতে যে চিকিৎসকের হাসপাতালে উপস্থিত থাকার কথা ছিল, তিনি ও অন্যান্য কর্মীরা ভবনের অন্য প্রান্তে ছিলেন। এই কারণে মন্ত্রীর ডাক তাঁরা কেউ শুনতে পাননি। সেই রাতে ওই হাসপাতালে একটি সন্তান প্রসব হয়েছিল বলেও তাঁৎা ব্যস্ত ছিলেন। যাই হোক, ভিডিয়োটি যে হেতু এড়ানো সম্ভব নয়, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও করক্মীদের উদ্দেশে শো কজ নোটিশ জারি করে তাঁদের বিশ্লেষণ চাইতে বলেছি।’