নাবালিকারা গর্ভপাত করতে চাইলে পুলিশের কাছে পরিচয় প্রকাশের প্রয়োজন নেই চিকিৎসকদের। এমনই জানাল সুপ্রিম কোর্ট। যে বিষয়টি প্রোটেকশন অফ চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্স আইনে (পস্কো) উল্লেখ করা হয়েছে।
বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি এএস বোপান্না, বিচারপতি জেবি পার্দিওয়ালার বেঞ্চ জানিয়েছে, পুলিশের কাছে পরিচয় প্রকাশের বিষয়টি নিয়ে পস্কোর আইনে উল্লেখ থাকার কারণে সুরক্ষিত গর্ভপাতের বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারে নাবালিকারা। বিশেষত ‘সম্মতির’ ভিত্তিতে যদি সেই শারীরিক সম্পর্ক হয়ে থাকে, তাহলে সেই সম্ভাবনা আরও বেশি।
আরও পড়ুন: SC on Abortion right : বৈবাহিক ধর্ষণ বাস্তব, গর্ভপাত নিয়ে মামলায় বলল সুপ্রিম কোর্ট
তাই শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, মেডিকেল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি আইনের আওতায় কোনও নাবালিকা এবং তার অভিভাবকরা যদি আর্জি জানান, তাহলে পুুলিশের কাছে বা পরবর্তীতে কোনও ফৌজদারি মামলায় তাদের পরিচয় প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা নেই চিকিৎসকদের (Registered Medical Practitioners বা রেজিস্টার্ড মেডিকেল প্র্যাকটিশনার)।
১) বিবাহিত ও অবিবাহিত বা সিঙ্গল মহিলাদের সমানাধিকার
সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, মেডিকেল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি আইনের ৩বি ধারাকে ‘নিয়ন্ত্রিতভাবে’ ব্যবহার করা যাবে। অর্থাৎ ২০ সপ্তাহের পর অবিবাহিত মহিলাদের গর্ভপাতের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। যদি সেটা করা হয়, তাহলে ভারতীয় সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা লঙ্ঘিত হবে।
শীর্ষ আদালতে একেবারে স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, কারা সুবিধা পাবেন, তা সমাজের ক্ষুদ্র মানসিকতার ভিত্তিতে নির্ধারণ করতে পারে না কোনও আইন। বিবাহিত এবং অবিবাহিত মহিলাদের মধ্যে যে 'কৃত্রিম পার্থক্য' আছে, তা সাংবিধানিকভাবে মোটেও কার্যকরী হয় না। অর্থাৎ সংবিধানে সেই ‘কৃত্রিম পার্থক্য’-এর কোনও মূল্য নেই। বিষয়টি ধোপেও টিকবে না।
২) বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, গার্হস্থ্য হিংসা একেবারেই সমাজের বাস্তব এবং তা যদি বৈবাহিক ধর্ষণের পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তাহলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়তে পারেন মহিলা। ওই মহিলাদের যাতে অনিচ্ছার বিরুদ্ধে সন্তানের প্রসব করতে না হয়, সেজন্য মেডিকেল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি আইনের আওতায় বৈবাহিক ধর্ষণকেও ‘ধর্ষণ’ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
৩) শুধুমাত্র মহিলাদের সম্মতি প্রয়োজন
শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, কোনও মহিলা যদি সুরক্ষিতভাবে গর্ভপাত করতে চান, তাহলে অহেতুক বাড়তি আইনি জটিলতা তৈরি করা উচিত নয় চিকিৎসকদের। অনেক সময় মহিলাদের থেকে পরিবারের সম্মতি, নথি সংক্রান্ত প্রমাণ বা বিচারব্যবস্থা অনুমোদনের মতো শর্ত চাপানো হয়। কিন্তু সেই কাজ থেকে চিকিৎসদের বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, আইন মেনে কোনও মহিলা যদি গর্ভপাত করতে চান, তাহলে তাঁর সম্মতিই যথেষ্ট।