নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মতিথি ২৩ জানুয়ারি পরাক্রম দিবস হিসাবে পরিচিত। ২০২৩ সালের নেতাজির ১২৬ তম জন্মতিথিতে এক বড় ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি জানান দেশের ২১ জন পরমবীর চক্রের অধিকারী ভারতীয় জওয়ানদের নাম নামাঙ্কিত হবে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ২১ টি দ্বীপ। একনজরে দেখে নেওয়া যাক সেই ২১ জন পরমবীর চক্রের অধিকারী জওয়ানদের পরিচিতি ও সাহসী অধ্যায়।
মেজর সোমনাথ শর্মা-মেজর সোমনাথ শর্মা দেশে প্রথম ব্যক্তি যিনি পরম বীর চক্র পুরস্কারে ভূষিত হন। তাঁর আক্মত্যাগে শত্রু আক্রমণ থেকে ৬ ঘণ্টা পিছিয়ে গিয়েছিল। ১৯৪৭ সালের ৩ নভেম্বর তাঁর আত্মবলিদান শত্রুকে আতঙ্কিত করে।
নায়েক জদুনাথ সিং- ঘটনা ১৯৪৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারির।নায়েক যদুনাথ সিং জম্মু ও কাশ্মীরের নৌশেরার কাছে তাইন ধর-এ একটি ফরোয়ার্ড পোস্টের নেতৃত্ব দেন। তখন শত্রুরা আক্রমণ করে। একক সাহসিকতায় তিনি এগিয়ে যান শত্রুদের দিকে। তিনি দেশের জন্য প্রাণ ত্যাগ করেন। শত্রুদের ছত্রভঙ্গ করে দেন।
সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট রামা রাঘোবা রানে- ১৯৪৮ সালের ৮ এপ্রিল, সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট রামা রাঘোবা রানেবম্বে স্ন্যাপারের হয়ে দায়িত্বে ছিলেন নৌশেরা রাজৌরি সেক্টরে। শত্রুর গোলাবর্ষণের সময়ও পিছপা হননি তিনি, আত্মত্যাগ করেন দেশের জন্য।
কোম্পানি হাবিলদার মেজর পিরু সিং-১৯৪৮ সালের ১৮ জুলাই জম্মু ও কাশ্মীরের থিতুয়াল এলাকায় শত্রু শিবিরের গ্রেনেড হামলার মোকাবিলা করতে গিয়ে তিনি লড়াই চালান। দেশের জন্য করেন প্রাণত্যাগ।
ল্যান্সনায়েক করম সিং- এই ঘটনা ১৯৪৮ সালের ১৩ অক্টোবরের। জম্মু ও কাশ্মীরের রিচমার গালি এলাকায় কর্মরত অবস্থায় তিনি আত্মত্যাগ করেন। প্রচুর রক্তক্ষরণ সত্ত্বেও, ল্যান্স নায়েক করম সিং বাঙ্কার থেকে বাঙ্কারে গিয়েছিলেন, তার কমরেডদের যুদ্ধ করতে উত্সাহিত করেছিলেন।
ক্যাপ্টেন গুরবচন সিং সালারিয়া- ১৯৬১ সালের ৫ ডিসেম্বর, কাটাঙ্গায় সেনাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি রাস্তায় অবরোধ দূর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ক্যাপ্টেন সালারিয়ার লোকেরা বেয়নেট, খুকরি এবং হ্যান্ড গ্রেনেড দিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান,৪০ জন শত্রুকে হত্যা করে এবং শত্রুর দুটি গাড়ি ধ্বংস করেন। তবে শেষে দেশের জন্য তাঁর আত্মবলিদান তাঁক দিয়েছে পরমবীরচক্রের সম্মান।
মেজর ধন সিং থাপা- ১৯৬২ সালের ভারত চিন যুদ্ধে চিনকে পরাস্ত করার জিগির ভারতীয় সেনার মধ্যে প্রবল। সেই সময় ২০ অক্টোবর এক সংঘাতে শহিদ হন মেজর ধন সিং থাপা।
সুবেদার জোগিন্দর সিং-১৯৬২ সালের চিন ভারত যুদ্ধে অরুণাচল প্রদেশের বুমলায় এক যুদ্ধে শহিদ হন সুবেদার জোগিন্দর সিং। তাঁর মহাপরাক্রমে শত্রুদের ২৩ জন সেনাকে হত্যা করতে সক্ষম হয় ভারতীয় সেনা।
মেজর শয়তান সিং-১৯৬২ সালের ১৮ নভেম্বর জম্মু ও কাস্মীরের সীমান্ত দিয়ে ১৭ হাজার ফুট উচ্চতায় চিনের সেনা ঢোকার চেষ্টা করছিল। একাই সাহসিকতার বলে রুখে দিয়েছিলেন মেজর শয়তান সিং। তাঁর আত্মোৎসর্গ আজও চর্চিত হয়।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরদেশির বুর্জরজি তারাপোরে- ঘটনা ১৯৬৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরদেশির বুর্জরজি তারাপোরে এগোচ্ছিলেন তাঁর রেজিমেন্ট নিয়ে। শত্রু শিবিরের হানায় তাঁরা পড়ে যান। চলে লড়াই। উজ্জ্বল হয়ে থাকে এই শহিদের আত্মত্যাগ।
কোম্পানির কাতার মাস্টার হাবিলদার আব্দুল হামিদ- ১৯৬৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের সৈনদের গোলাবর্ষণে খেম করণ সেক্টরে প্রাণ হারাণ কোম্পানির কাতার মাস্টার হাবিলদার আব্দুল হামিদ। তবে তাঁর আত্মবলিদান আজও চর্চিত হয়।
ল্যান্সনায়েক আলবার্ট এক্কা- ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে প্রাণ হারান ল্যান্সনায়েক আলবার্ট এক্কা। সেই বছরের ৪ ডিসেম্বর তাঁর বাঙ্কারে শত্রুর গোলা হানার জেরে তিনি শহিদ হন।
ফ্লাইং অফিসার নির্মল জিত সিং শেখোঁ- ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শ্রীনগর এয়ারফিল্ডে কর্মরত ছিলেন ফ্লাইং অফিসার নির্মল জিত সিং শেখোঁ। ৪ টি পাকস্তানি সাবরেজ এয়ারক্রাফ্টের সঙ্গে লড়াই করে সেদিন তিনি প্রাণত্যাগ করেন। তবে রেখে যান এক অসামান্য অনুপ্রেরণাদায়ক উদাহরণ।
মেজর হোশিয়ার সিং- ১৯৭১ সালের ১৫ডিসেম্বর প্রবল গোলাবর্ষণের মাঝে জারপাল এলাকা দখলে ভার পড়েছিল মেজর হোশিয়ার সিংয়ের ওপর। কর্তব্য পালনে অসামান্য সাহসিকতা দেখিয়ে তিনি প্রাণত্যাগ করেন।
সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট অরুণ খেতারপাল- ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্কোয়ার্ডন এ থেকে বি-এর দিকে যাচ্ছিলেন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট অরুণ খেতারপাল ও তাঁর টিম। লক্ষ্য ছিল তার মাঝে থাকা শত্রুদের ৫ টি ঘাঁটি ঘুঁড়িয়ে ফেলতে হবে। তা সাহসিকতার সঙ্গে করেন তিনি। তবে রক্ষা করা যায়নি তাঁর প্রাণ। এই শহিদও পরমবীর চক্রের অধিকারী।
নায়েব সুবেদার বানা সিং-১৯৮৭ সালের ২৬ জুন সিয়াচেন হিমবাহে কর্তব্যরত ছিলেন নায়েব সুবেদার বানা সিং। ২১ হাজার ফুট উপরে শত্রুদের ধ্বংস করতে উদ্যত হন।
গ্রেনেডিয়ার যোগেন্দ্র সিং যাদব-১৯৯৯ সালের ৩ জুলাই জম্মু ও কাশ্মীরের দ্রাস সেক্টরে টাইগার হিল-এ শত্রু নিধনের লড়াইতে ছিলেন অগ্রণী। সেই যুদ্ধেই তিনি শহিদ হন।
রাইফেলম্যান সঞ্জয় কুমার-জম্মু ও কাশ্মীরের মুশকো উপত্যকায় ১৯৯৯ সালের ৪ জুলাই ফ্ল্যাট টপ দখলের লড়াইতে বড় ভূমিকা গ্রহণ করেন রাইফেলম্যান সঞ্জয় কুমার। তিনি শহিদ হন। তাঁর দল লক্ষ্য পূরণে সফল হয়।
ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রা- কার্গিল যুদ্ধের আঙিনায় তাঁকে ‘শোহশাহ’ বলে অভিহিত করা হত। তাঁর অসামান্য সাহসিকতা আজও গাথা হয়ে রয়েছে। ১৯৯৯ সালের ৭ জুলাই পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে সামনে থেকে লড়াইয়ের মধ্যে তিনি ৩ জন পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করেন। নেতৃত্ব দেন সামনে থেকে। তবে আহত হওয়াক পর বিক্রম বত্রাকে প্রাণে রক্ষা করা যায়নি। শহিদ হন কার্গিল যুদ্ধের ‘শেরশাহ’।
লেফটেন্যান্ট মনোজ কুমার পান্ডে- ১৯৯৯ সালের ৩ জুলাই জম্মু ও কাশ্মীরের বাটালিক সেক্টরে শত্রুর সঙ্গে লড়াইয়ে তিনি শহিদ হন। শত্রুদের ব্যাপক গোলাবর্ষণের মাঝেও তিনি তাদের ২ টি বাঙ্কার ধ্বংস করেন। হত্যা করেন শত্রু শিবিরের অনেককে।
মেজর রামস্বামী পরমেশ্বরন- ১৯৮৭ সালেক ২৫ নভেম্বর মেজর রামস্বামী পরমেশ্বরন ভূস্বর্গি জঙ্গি নিধনে অসামান্য সাহসিকতার পরিচয় দেন। সেই সংঘাতেই তিনি শহিদ হন। রেখে যান অসামান্য এক লড়াইয়ের অধ্যায়কে।