যাবতীয় জল্পনা সত্যি করে আজ মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করলেন নীতীশ কুমার। আরজেডি-কংগ্রেসের জোট সরকার থেকে বেরিয়ে এসে এবার তিনি বিজেপির হাত ধরতে চলেছেন। ২০২০ সালের বিধানসভ নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গী হয়েই লড়াই করে জিতেছিলেন নীতীশ। তবে ২০২১ সালে তিনি আরজেডির সঙ্গে সরকার গঠন করেন। সেই সময় বিজেপির তরফ থেকে তীব্র আক্রমণ শানানো হয়েছিল নীতীশের উদ্দেশে। এমনকী এও বলা হয়েছিল, নীতীশের সঙ্গে আর কোনওদিনও জোট গড়ার প্রশ্নই ওঠে না। তবে রাজনীতিতে কখনও কোনও দরজা চিরতরে বন্ধ হয় না। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় মোদী বিজেপির 'মুখ' হওয়ার সময় থেকেই বারবার সুযোগ বুঝে পালটি খেয়েছেন নীতীশ কুমার। গত এক দশকের সময়কালে পাঁচবার জোট বদল করেছেন নীতীশ। এহেন নীতীশ আজ ফের বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাতেই প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানান। (আরও পড়ুন: 'ইন্ডিয়া ব্লকের জন্য সবকিছু করছিলাম...', পদত্যাগের পর কী বললেন নীতীশ?)
আরও পড়ুন: ডিএ নিয়ে কথা দিয়েছিলেন মন্ত্রী, রাখবে রাজ্য? SC শুনানি ঘনিয়ে আসতেই উঠল প্রশ্ন
এর আগে ২০১৪ সালে মোদীর 'সাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তির' দোহাই দিয়ে 'চিরশত্রু' লালুর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন নীতীশ। এরপর ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে আরজেডি ছেড়ে ফের বিজেপির হাত ধরেন নীতীশ। এরপর ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে সঙ্গে নিয়েই লড়াই করেন নীতীশ কুমার। রাজ্যে তাঁর দলের শক্তিক্ষয় হলেও নিজের গদি ঠিকই টিকিয়ে রাখেন তিনি। পরে অবশ্য ২০২১ সালে ফের একবার আরজেডির সঙ্গে জোট বাঁধেন নীতীশ। এমনকী গতবছর বিরোধীদের ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম রূপকার ছিলেন এই নীতীশ। পটনায় হয়েছিল এই বিরোধী জোটের প্রথম সভা। তখন মোদীকে চ্যালেঞ্জ করে বিরোধী মুখ হতে চেয়েছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। তবে সেটা হয়নি। আর এরপর থেকেই ইন্ডিয়া ব্লক এবং মহাজোটের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে মতপার্থক্য দেখা দেয় এবং তা প্রকাশ্যে চলে আসে। আরজেডির তরফ থেকে তেজস্বী যদবকে 'ভবিষ্যতের মুখ্যমন্ত্রী' হিসেবে তুলে ধরা হলে নীতীশের রক্তচাপ আরও বৃদ্ধি পায়। এই আবহে বিরোধী জোট ছেড়ে তিনি ফের একবার বিজেপি-মুখী হলেন। (আরও পড়ুন: এবার ইরানি শহরে ৯ পাকিস্তানিকে হত্যা করল বন্দুকবাজরা! দুই দেশের মধ্যে এ কী চলছে?)
আরও পড়ুন: ফের জাহাজে মিসাইল হামলা, মাঝ সমুদ্র থেকে ২২ ভারতীয়, ১ বাংলাদেশিকে উদ্ধার নৌসেনার
প্রসঙ্গত, আজ সকাল ১০টা ১৫ মিনিট নাগাদ জেডিইউ-র সব বিধায়করা মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে বৈঠকে বসেন নীতীশের সঙ্গে। ওদিকে একই সময় বিজেপির রাজ্য সদর দফতরে বৈঠকে বসেন গেরুয়া শিবিরের বিধায়করা। এরপর সাড়ে ১০টার পর থেকেই পটনার রাজভবনের সামনে ব্যারিকেড পড়তে শুরু করে। এর কিছুক্ষণ পরেই জেডিইউ-র বৈঠকে বিধায়করা যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব নীতীশকে দেন। ১১টার কিছু আগে নীতীশ নিজের বাসভবন থেকে গাড়িতে রওনা দেন রাজভবনের উদ্দেশে। ১১টা ২ মিনিট নাগাদ সেখানে পৌঁছে রাজ্যপালের কাছে নিজের পদত্যাগপত্র তুলে দেন। এরপর রাজভবন থেকে বেরিয়ে এসে নীতীশ নিজের পদত্যাগের কারণ হিসেবে বলেন, সবকিছু ঠিকঠাক ছিল না। এর ঘণ্টা খানেক পরই বিজেপির তরফ থেকে বিহারের সরকার গঠনের ঘোষণা করা হল। বিজেপির জাতীয় সচিব বিনোদ তাওড়ে জানান, বিজেপির পরিষদীয় দলের নেতা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন সম্রাট চৌধুরী। এদিকে পরিষদীয় দলের ডেপুটি লিডার হয়েছেন বিজয় সিনহা। পরিষদীয় দলের বৈঠকে বিহারে এনডিএ জোট সরকারের বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান বিনোদ।