মার্কিন মুলুকে ভোটে কিভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়, সেই নিয়ে অনেক কিছু লেখা হয়েছে। ভারতেও এরকম আইটি সেলের কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠছে। এবার প্রথমবার প্রকাশ্যে এল তথ্য যেখানে দেখা যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল বছরের শুরুর দিল্লি ভোটের আগে। যদিও সেটা নিরস্ত করেছিল ফেসবুক, কিন্তু প্রকাশ্যে সেই কথা জানায় নি তারা।
ফেসবুক থেকে বিতাড়িত এক ডেটা সায়েন্টিস্ট সোফি ঝ্যাংয়ের মেমো থেকে এটি জানা গিয়েছে। প্রায় ৬৬০০ শব্দের এই মেমো যেটা সোফি তাঁর সহকর্মীদের পাঠিয়েছিলেন, সেখানে উঠে এসেছে ফেসবুকের নানান কীর্তিকলাপের কথা। কীভাবে অনেক সময় ব্যবসার স্বার্থে ফেসবুক আপোষ করে নীতির সঙ্গে, সেগুলি তুলে ধরা হয়েছে এই মেমোতে। দিল্লি ভোটের প্রসঙ্গ এসেছে সেই সূত্রে। এই মেমো প্রকাশ করেছে বাজফিড।
এই মুহূর্তে ভারতে ফেসবুকের কার্যকলাপ খতিয়ে দেখছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। ভারতে ফেসবুকের পলিসি ডিরেক্টর বিজেপি নেতাদের হেট স্পিচের বিষয় ব্যবস্থা নিতে চাননি, কংগ্রেস হারায় খুশি হয়েছিলেন এই সব অভিযোগের জন্য ফেসবুককে সমন পাঠায় শশী থারুরের কমিটি। ফেসবুক অবশ্য জানায় তারা কোনও পক্ষ নেয় না ও কোনও হেট স্পিচের অভিযোগ এলে নীতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ফেসবুকের প্রাক্তন কর্মীর মেমোতে আজারবাইজান, হন্ডুরাস, স্পেন, ব্রাজিল, বলিভিয়া, ইকুয়েডর ও ভারতের কথা বলা হয়েছে যেখানে গণতন্ত্রকে দমিয়ে রাখার প্রচেষ্টা আটকাতে ফেসবুক তৎপর হয় নি বলে অভিযোগ। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তিনি বলার প্রায় এক বছর ফেসবুক ব্যবস্থা নেয় বলে জানান এই প্রাক্তন কর্মী।
সোফি জানিয়েছেন যে তিনি অসুস্থ অবস্থায় কাজ করেছিলেন দিল্লি নির্বাচনকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা রোখার জন্য। প্রায় হাজার জন কর্মী এই চেষ্টা করছিল বলে তিনি জানান। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই নেটওয়ার্ক ফেসবুক বন্ধ করেনি। চুপচাপ ডিলিট ও ব্যান করা হয়।। কোন দল এই প্রচেষ্টা করেছিল সেটা জানাননি তিনি।
ফেসবুকের সাইট ইনটেগ্রিটি ফেক এনগেজমেন্ট টিমের সঙ্গে ছিলেন এই কর্মী। তিনি জানান, তিন বছরে বহুবার তিনি দেখেছেন যে বিভিন্ন দেশের সরকার ফেসবুকের অপব্যবহার করেছে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।
এরকম কোন কোন ক্ষেত্রে তদন্ত করা দরকার, কি কি ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে হবে বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে হবে, সেটা নির্ধারণ করার দায়িত্ব ছিল সোফির। তাঁর অভিযোগ, কোনও কনটেন্ট নিয়ে তিনি আপত্তি জানালেও ব্যবস্থা নিতে অনেক দেরি করত সংস্থা। কিন্তু কোনও ভাবেই সেই বিষয়টি মিডিয়ায় লিক হয়ে গেলেই তখন ধামাচাপা দেওয়ার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে চাইত ফেসবুক। তাঁর এক সিনিয়র সোফিকে বলেন যে তেমন বড় সমস্যা হলে লোকজনই হট্টগোল করবে, তখন ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। ছোটোখাটো বিষয়ে বেশি মাথা না ঘামাতে তাঁকে পরামর্শ দেন সেই সিনিয়র।
কেন সোফিকে ফেসবুক বহিস্কার করে সেটা অবশ্য জানা যায় নি, কিন্তু বাজফিড জানিয়েছে সংস্থার থেকে ৬৪ হাজার ডলারের সেভারেন্স প্যাকেজ নিতে অস্বীকার করে সে। একবার সেভারেন্স নিলে আইনি ভাবে ফেসবুকের কার্যকলাপ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারতেন না সোফি। ফেসবুকের কর্মকাণ্ড নিয়ে ফের নতুন করে প্রশ্ন উঠে গেল তাঁর মেমো থেকে।