ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর কি তাঁর স্থানটি নিতে চেয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। মসনদ থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিলেন ইন্দিরা পুত্র রাজীবকে। এই নিয়ে আছে অনেক বিতর্ক, অনেক জল্পনা। নিজের আত্মজীবনীর দ্বিতীয় খণ্ড ‘The Turbulent Years: 1980-1996’-এ এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন যে কোনও ভাবেই তিনি পদের জন্য ছোটেননি। বরং প্রথম থেকেই তিনি রাজীবের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। কিন্তু তারপরেও হয় ভুল বোঝাবুঝি, দল ছাড়তে বাধ্য হন প্রণববাবু। তিন বছর পর অবশ্য ফের কংগ্রেসে যুক্ত হন তিনি।
সেই দিনের স্মৃতিচারণায় প্রণববাবু বলেন যে রাজীব উত্তরবঙ্গে জনসভায় ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন প্রণবও। তখনই খবর আসে ইন্দিরা গান্ধী গুলিবিদ্ধ। তখনই দিল্লির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তাঁরা। বিমানেই জানা যায় ইন্দিরা গান্ধী মারা গিয়েছেন। ভেঙে পড়েন প্রণববাবু। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে শান্ত ছিলেন রাজীব গান্ধী। তখনই অন্যদের সঙ্গে রাজীব গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী হতে বলেন প্রণববাবু। আনকোরা রাজীব তখন তাঁকে বলেছিলেন, আমি কি পারব? প্রণববাবু তখন বলেন যে কোনও সমস্যা নেই, সবাই মিলে সাহায্য করা হবে।
এই অবধি ঠিক ছিল। কিন্তু দিল্লিতে গিয়েই হল সমস্যা। এর আগে দুইবার অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার উদাহরণ রয়েছে। তাই অনেকেই ভাবছিলেন হয়তো এবারও সেরকম কিছু হবে ও দায়িত্ব নেবেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। বকলমে ক্যাবিনেটে দুই নম্বর প্রণব অবশ্য এর বিরোধিতাই করেছিলেন ও তিনি বলেন এই কঠিন সময় সহজে পরিস্থিতি সামলানোর জন্য রাজীবকেই দরকার। এমনকী রাষ্ট্রপতি জইল সিংকে যে চিঠি পাঠানো হয় সেটাও তিনি ড্রাফট করে দিয়েছিলেন।
তবে কংগ্রেস পার্লামেন্টারি পার্টি (সিপিপি) ডাকার সময় নেই বলে কংগ্রেস পার্লামেন্টারি বোর্ড (সিপিবি) ডাকা হয়। সেখানেই আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজীব গান্ধীকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত করা হয় ও সেই চিঠি পাঠানো হয় রাষ্ট্রপতিকে। সাধারণ সচিব মুপানারের সই করা চিঠিতে সম্মতি দেন প্রণব ও নরসিমা রাও।
সেই মুহূর্তে ওমানে ছিলেন তত্কালীন রাষ্ট্রপতি জৈল সিং। সেখানেই তাঁকে এই বিষয় বিস্তারিত বলার দায়িত্ব দেওয়া হয় অরুণ নেহেরুকে। এরপর নরসিমা রাও ও প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যান। সেখানে পূর্ব সাক্ষাত্কার নেওয়া ছিল না বলে রক্ষীরা তাদের প্রবেশ করতে দিচ্ছিলেন না প্রাথমিক ভাবে। পরবর্তী সময় অবশ্য তাঁরা প্রবেশ করেন। অন্যদিকে জৈল সিং আসার পর সোজা নিহত ইন্দিরা গান্ধীকে দেখতে এইমসে যান ও সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি ভবনে যান রাজীব গান্ধীর সঙ্গে। সেখানে তাঁকে চিঠি তুলে দেন প্রণব মুখোপাধ্যায়, মুপানার। জৈল সিং বলেন যে তিনি আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রাজীব গান্ধীকে সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন। সেদিনই সন্ধ্যাবেলা ৬.৪৫ মিনিটে চারজনের মন্ত্রীসভা নিয়ে শপথ নেন রাজীব। এরমধ্যে ছিলেন প্রণবও। একই সঙ্গে রাজীবেের শপথ ও ইন্দিরার মৃত্যুর খবর আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হয়।
সেদিনকার ঘটনা বিবৃত করে ইন্দিরার ঘনিষ্ঠ পিসি আলেক্সান্ডার ও রাষ্ট্রপতি জৈল সিংয়ের স্মৃতিচারণার কথাও তুলে ধরেন প্রণববাবু। অরুণ নেহেরু চেয়েছিলেন উপরাষ্ট্রপতিকে দিয়ে শপথের কাজ করিয়ে নেওয়ার যেহেতু জৈল সিং কোনও সমস্যা করবেন কিনা, সেই নিয়ে অরুণবাবুর মনে সন্দেহ ছিল। এই নিয়ে দলের মধ্যে একটা বিভাজন ছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য জৈল সিংই প্রধানমন্ত্রীর শপথ পাঠ করান রাজীবকে।