সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার রায় দিয়ে জানিয়ে দিল যে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিধায়ক বা কোনও আইনপ্রণেতার বাকস্বাধীনতার ওপর অতিরিক্ত বিধি নিষেধ আরোপ করা যায় না। আদালতের রায়, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৯(১)(এ)-এর অধীনে অন্যান্য নাগরিকদের মতো সমান বাকস্বাধীনতা ভোগ করেন আইনপ্রণেতারা। এই আবহে আইনপ্রণেতাদের বা কোনও সরকারি কর্মকর্তার বাকস্বাধীনতার মৌলিক অধিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা বা বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেওয়া যায় না। কৌশল কিশোর বনাম উত্তরপ্রদেশ সরকার এবং অন্যান্য-র মামলার প্রেক্ষিতে এই রায় দিল শীর্ষ আদালত। তবে এই রায়ের ক্ষেত্রেও ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম বিচারপতি বিভি নাগারত্না।
বিচারপতি এস আব্দুল নাজির, এএস বোপান্না, বিআর গাভাই, ভি রামাসুব্রমানিয়ান এবং বিভি নাগারত্নার একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ বলে যে সরকারি কর্মকর্তাদের বাকস্বাধীনতার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে তা সংবিধানের ১৯(২) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। এই ধারায় দেশের সকল নাগরিকের জন্য বাকস্বাধীনতার অধিকার প্রযোজ্য। উল্লেখ্য, সরকারি কর্তা এবং আইনপ্রণেতাদের বাকস্বাধীনতার পরিধিকে প্রশ্ন করে দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে এই রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এই আবহে আদালত বলেছে যে সরকারের সাথে যুক্ত মন্ত্রীর বক্তব্যের জন্য সরকারকে দায়ী করা যায় না। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, 'কোনও মন্ত্রী যদি এমন বিবৃতি দিয়ে থাকেন যা নাগরিক অধিকারের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, তাহলে সেটি অসাংবিধানিক বলে বিবেচিত হবে না। তবে সেই বিবৃতি যদি কোনও অপরাধ সংঘটিত করার ক্ষেত্রে উসকানি হয়ে থাকে করে তবে সেটি অসাংবিধানিক বলে বিবেচিত হবে।'
এদিকে বিচারপতি বিভি নাগারত্না একটি পৃথক রায়ে বলেছেন যে আদালত এই জাতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের বাকস্বাধীনতার মৌলিক অধিকারের উপর কোনও বৃহত্তর/অতিরিক্ত বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে না। তাঁর কথায়, সংসদকে নাগরিক স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আইনপ্রণেতা বা সরকারি কর্তাদের বাকস্বাধীনতার ওপর অতিরিক্ত কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে কি না। তবে তাঁর কথায়, বাকস্বাধীনতা কোনও ভাবেই ঘৃণা ছড়ানো বক্তৃতায় পরিণত হতে পারে না। এই আবহে বেঞ্চের বাকি সদস্যদের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে তিনি বলেন, 'কোনও আইনপ্রণেতা তাঁর পদাধিকার বলে কিছু বলে থাকলে, তার জন্য সরকারকে দায়ী করা যায়। তবে যদি সেই মন্তব্য সরকারের অবস্থানের বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে সরকার তার জন্য দায়ী হবে না।'
বিচারপতি নাগারত্না বলেন, 'ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য সমাজকে অসম করে তোলে। এটি জনসাধারণের মৌলিক মূল্যবোধে আঘাত করে এবং বিভিন্ন পটভূমির নাগরিকদেরও আক্রমণ করে। বিশেষ করে আমাদের মতো দেশে এই ঘটনা ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। ধর্ম, বর্ণ ইত্যাদি নির্বিশেষে প্রত্যেক ব্যক্তির মর্যাদা বজায় রাখা এবং মহিলাদের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখা প্রত্যেক ভারতীয়ের কর্তব্য হওয়া উচিত।' তিনি বলেন যে সরকারি কর্মকর্তা এবং সেলিব্রিটিরা তাঁদের বক্তব্যের মাধ্যমে জনসাধারণের ওপর প্রভাব ফেলতে পারেন। তাই তাঁদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে এবং বক্তৃতায় আরও সংযম ব্যবহার করতে হবে।