বাংলার রাজনীতির অভিধানে যে শব্দগুলি বহুল প্রচলিত তার মধ্যে একটি অবশ্যই সিঙ্গুর। আর সেই সিঙ্গুর প্রসঙ্গ উঠলেই উঠে আসে রতন টাটার কথা, তাঁর স্বপ্নের প্রকল্পের কথা, উঠে আসে ন্যানো গাড়ির কথা, উঠে আসে জমি আন্দোলনের কথা, আর উঠে আসে সিঙ্গুর সরণী বেয়ে বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষমতা দখলের কথা। ১৩ই মে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা বিজয়ের একাদশ বর্ষপূর্তি হয়েছে। আর তার ঠিক আগের দিন কার্যত কাকতালীয়ভাবে ইনস্টাগ্রামে ন্যানো নিয়ে একটি পোস্ট করেছেন রতন টাটা। বাংলা থেকে ফিরে যাওয়া শিল্পপতি তথা টাটা গোষ্ঠীর এমিরেটাস, রতন টাটা।
ইনস্টাগ্রামের লিখেছেন ন্যানো গাড়ি তৈরির ইতিহাসের কথা। যে কথা কার্যত বিশ্বের গাড়ির ইতিহাসে মিথ হয়ে গিয়েছে। তিনি লিখেছেন, ভারতীয় পরিবারদের ক্রমাগত স্কুটারে চড়তে দেখে, বাবা- মায়ের মধ্যে বাচ্চাকে স্যান্ডউইচ হতে যেতে দেখে, পিচ্ছিল রাস্তায় তাদের এভাবে যেতে দেখে তাঁর গাড়ি তৈরির ভাবনা মাথায় আসে। স্থাপত্যবিদ্যার ছাত্র হিসাবে অবসর সময়ে তিনি গাড়ির নকশা তৈরির কথা ভাবতেন। প্রথম দিকে ভাবতেন কীভাবে দুচাকাকে আরও নিরাপদ করা যায়। যাতে ঢাকার ব্যবস্থা থাকলেও কোনও জানালা, দরজা থাকবে না। তিনি লিখেছেন, But I finally decided it should be a car. The Nano, was always meant for all our people. লিখেছেন একেবারে শেষ পর্যায়ে।
তবে তিনি কোথাও সিঙ্গুরের নাম উল্লেখ করেননি। লিখেছেন চারচাকা তৈরির সিদ্ধান্তের কথা। কিন্তু অনেকের মতে, রতন টাটা সিদ্ধান্ত নিলেও বাস্তবে সিঙ্গুরে টাটার কারখানা হল না। যেটা হল সেটা ক্ষমতার পালাবদল। বাংলা থেকে স্বপ্ন ভঙ্গের যন্ত্রণা নিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন রতন টাটা। 'ব্যাড এম' আর ‘গুড এমের’ মধ্যে তিনি গুড এমকেই বেছে নিয়েছিলেন। তৎকালীন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁকে ন্যানোর জন্য জমি দিয়েছিলেন। আর বাংলার সিঙ্গুরে এখন ভেরি তৈরি করে মাছচাষের উদ্যোগ! এদিকে হরিয়ানায় গাড়ি কারখানায় বিপুল বিনিয়োগ করছে মারুতি। এখানেই প্রশ্ন, প্রকল্প গুটিয়ে যাওয়ার কাহিনী নয়, বাংলার সঙ্গে কবে যুক্ত হবে প্রকল্প চালুর উজ্জ্বলময় অধ্যায়?