তালিবান গোষ্ঠীদের প্রতি পাকিস্তানের প্রচ্ছন্ন সমর্থনকে সন্দেহের চোখে দেখছে আফগান সংবাদমাধ্যম৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে কোথায় দাঁড়িয়ে এই সমীকরণ?
আফগানিস্তানের বর্তমান অস্থিরতার জন্য আফগান সংবাদমাধ্যম ও রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের একাংশ দায়ী করছে পাকিস্তানকে৷ তাদের মত, পাকিস্তানের প্রচ্ছন্ন তালিবান সমর্থন মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের আবহে অস্থিরতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে৷
অবশ্য এই অভিযোগ নতুন নয়৷ আফগান সরকারের পক্ষেও শোনা গিয়েছে এই অভিযোগ যে পাকিস্তান তালিবান গোষ্ঠীদের আশ্রয় ও সামরিক সমর্থন দিয়ে এসেছে৷ দুই দশক দীর্ঘ মার্কিন সেনা অবস্থানের শেষে নতুন করে আলোচনায় এই বিষয়টি৷
এক আফগান রাজনীতিক আবদুল সাত্তার হুসেইনি সম্প্রতি একটি টিভি শোতে বলেন, ‘আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে আমরা পাকিস্তানের হাতে আক্রান্ত৷ আমরা শুধু তালিবানের বিরুদ্ধে লড়ছি না, আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে এই মেকি যুদ্ধেও জড়িত৷ তালিবানদের আফগানিস্তানের জন্য কোনও পরিকল্পনা নেই, আর আমরাও পাকিস্তানের উদ্দেশ্য মেনে নিতে নারাজ৷’
অস্বস্তির সম্পর্ক
পাকিস্তান এই সব অভিযোগকে সাধারণত উড়িয়ে দিয়ে থাকে, যদিও তা আফগানরা সহজভাবে নেন না৷ গত মাসে পাক বিদেশমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি একটি আফগান টিভি শোতে উপস্থিত হন এই অস্বস্তির সম্পর্কে কিছুটা স্বস্তি আনতে৷ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক সেখানে প্রশ্ন করেন পাকিস্তানে কিছু তালিবান নেতাদের অবস্থান করা প্রসঙ্গে৷ বিদেশমন্ত্রী জানান যে তিনি এ বিষয়ে অবগত নন৷ মন্ত্রী বারবার উপস্থাপককে বোঝাতে চেষ্টা করেন যে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন, কিন্তু উপস্থাপকের সব প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি তিনি৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের অনুষ্ঠানে প্রায়ই পাকিস্তানের একটি নেতিবাচক রূপ তুলে ধরা হয়৷
কাবুলের সাংবাদিক শারিফ হাসানিয়ার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আফগান-পাক সম্পর্ক চার দশকেরও বেশি সময় ধরে এমন থেকেছে৷ বেশিরভাগ আফগানরাই পাকিস্তানকে নেতিবাচকভাবে দেখে কারণ নব্বইয়ের দশকে ইসলামাবাদ তালিবান ও মুজাহিদিনকে সমর্থন করেছিল৷’
কিন্তু প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র নাজিবুল্লাহ আজাদ মনে করেন যে আফগান ধারণা সত্যের ওপর ভিত্তি করেই গড়া৷ তিনি বলেন, ‘পাক কর্তৃপক্ষ আফগান বিশেষজ্ঞদের কিছু অভিযোগ স্বীকার করেছে৷ প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে তারা তালিবানকে সমর্থন করে৷ ২০১৫ সালে ইমরান খান বলেন যে তার হাসপাতালে এক আহত তালিবান যোদ্ধার চিকিৎসা হয়েছিল৷ সম্প্রতি পাক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রাশিদ বলেন যে তালিবান সদস্যদের পরিবার পাকিস্তানে রয়েছে৷’
উন্নত সম্পর্কের সম্ভাবনা
যেহেতু এই দুই দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যার প্রভাব দুই দেশের মধ্যে বড় ভূমিকা রাখে, সেক্ষেত্রে মার্কিন সামরিক বাহিনী প্রত্যাহারের ফলাফলও এখানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে৷ হাসানিয়ার এ বিষয়ে বলেন, ‘সুশীল সমাজের সদস্যরা ও সাংবাদিকরা যতই চেষ্টা করুন না কেন দুই দেশের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে, এই কাজ আসলে সরকারের৷ গত কয়েক মাসে উচ্চপদস্থ আফগান কর্তারা পাকিস্তানে গিয়েছেন, কিন্তু পর্যায়ে পরিস্থিতি কিছুই বদলায়নি৷ যদি এই অবস্থা বদলাতে হয় তাহলে পাকিস্তানকে সশস্ত্র গোষ্ঠীদের মদত দেওয়া বন্ধ করতে হবে৷’ এদিকে পাক কর্মকর্তাদের মত, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নতি করতে হলে কাবুলকে এই ধরনের অভিযোগ আনা বন্ধ করতে হবে৷