কয়েকদিন আগেই সংসদে জানানো হয়েছিল, চিনা মোবাইল প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি ভারতে প্রায় ৯ হজার কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে। এই আবহে কি ভারতে চিনা সংস্থার বিনিয়োগে আপত্তি আছে কেন্দ্রীয় সরকারের? ফিনান্সিয়াল টাইমসকে এই প্রশ্নেরই জবাব দিলেন কেন্দ্রীয় আইটি মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর।
1/7 এক সাক্ষাৎকারে ফিনান্সিয়াল টাইমসকে রাজীব চন্দ্রশেখর বলেন, 'আমরা যে কোনও কোম্পানির সাথেই ব্যবসা করার জন্য মুখিয়ে রয়েছি। তা সে চিনা সংস্থাও হতে পারে। তবে তারা দেশের আইন মেনে বিনিয়োগ করলে তবেই আমরা তাতে সম্মত হব। এবং তাদের ভারতের আইন মেনেই ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে এবং যাবতীয় কাজকর্ম করতে হবে।'
2/7 উল্লেখ্য, এর আগে গত সপ্তাহেই চিনা গাড়ি প্রস্তুকারী সংস্থা বিওয়াইডি-র ১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রত্যাখ্যান করেছিল ভারত। নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। এদিকে অ্যাপল-এর সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক চিনা সংস্থা লাক্সশেয়ার প্রিসিশন ইন্ডাস্ট্রি ভারতে তাদের তৃতীয় কারখানা খোলার অনুমতি চেয়েছিল। সেই বিষয়ে এখনও সবুজ সংকেত দেয়নি সরকার।
3/7 প্রসঙ্গত, ওপ্পো, ভিভো, শাওমির মতো চিনা মোবাইল প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার করা ফাঁকি দিয়েছে বলে সংসদে জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিক্স এবং আইটি মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর। এর মধ্যে থেকে ১,৬২৯.৮৭ কোটি টাকা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
4/7 চিনা সংস্থাগুলির কর ফাঁকি ইস্যুতে রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষ পর্যন্ত রফতানি শুল্ক এবং জিএসটি বাবদ ৯ হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে চিনা সংস্থাগুলি। এর মধ্যে থেকে ১,৬২৯.৮৭ কোটি টাকা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। উল্লেখ্য, বিগত দিনে শাওমি সহ চিনা সংস্থাগুলির অফিসে আয়কর এবং ইডি হানা দিয়েছে। এই নিয়ে চিনের তরফে বারংবার উষ্মা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে ভারত সরকার প্রথম থেকেই বলে এসেছে, আইন আইনের পথে চলবে।
5/7 সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ওপ্পো ৫০৮৬ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে। এর মধ্যে রফতানি শুল্ক বাবদ ৪,৪০৩ কোটি টাকা এবং জিএসটি বাবদ ৬৮৩ কোটি টাকা সরকারকে দেয়নি ওপ্পো। এদিকে ভিভো ২৯২৩.২৫ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে। এর মধ্যে রফতানি শুল্ক বাবদ ২,৮৭৫ কোটি টাকা এবং জিএসটি বাবদ ৪৮.২৫ কোটি টাকা সরকারকে দেয়নি ভিভো। এদিকে শাওমি ৮৫১.১৪ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে। এর মধ্যে রফতানি শুল্ক বাবদ ৬৮২.৫১ কোটি টাকা এবং জিএসটি বাবদ ১৬৮.৮৩ কোটি টাকা সরকারকে দেয়নি শাওমি।
6/7 এদিকে শুধুমাত্র ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ওপ্পো রফতানি শুল্ক বাবদ ৪৩৮৯ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে। এর মধ্যে থেকে ৪৫০ কোটি টাকা পুনরুদ্ধার করেছে সরকার। এদিকে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে রফতানি শুল্ক বাবদ ২২১৭ কোটি টাকার কর ফাঁকি দেয় ভিভো। এর মধ্যে থেকে ৭২ কোটি টাকা পুনরুদ্ধার করেছে সরকার। এদিকে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে শাওমি ৬৫৩.০২ কোটির রফতানি শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে। এর মধ্যে থেকে মাত্র ৪৬ লাখ টাকা ফেরত এসেছে সরকারের ঘরে। এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ভিভো আরও ৬৫৮ কোটির রফতানি শুল্ক জমা করেনি সরকারের খাতায়। এছাড়াও লেনোভো জিএসটি বাবদ ৪২.৩৬ কোটি টাকা ফাঁকি দিয়েছে সরকারকে।
7/7 সব মিলিয়ে গত বছরের কর ফাঁকির ১২১৪.৮৩ কোটি টাকা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে ওপ্পোর থেকে। এছাড়া ভিভোর থেকে ১৬৮.২৫ কোটি এবং শাওমির থেকে ৯২.৮ কোটি টাকার কর পুনরুদ্ধার রেথে কেন্দ্রীয় সরকার। এদিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানান, ২০২০-২১ অর্থববর্ষে চিনা সংস্থাগুলির ১.৫ লাখ কোটি টাকার মোবাইল বিক্রি হয়েছে ভারতে। এদিকে সব মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার জন ভারতীয়কে চাকরি দেয় এই সংস্থাগুলি।