ছবিটা সকাল থেকেই পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তবুও কোথাও যেন উৎকণ্ঠা কাজ করছিল। বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার পর ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের আবেগের বিস্ফোরণ ঘটল। ‘শতবর্ষের আবেগ’, অপরিসীম স্বস্তির সাক্ষী থাকল ফেসবুকের দেওয়াল থেকে শুরু করে টুইটারের টাইমলাইন।
আইএসএলে লাল-হলুদ অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে ইস্টবেঙ্গলের লোগো পোস্ট করে বাইচুং ভুটিয়া ফেসবুকে লেখেন, ‘আমরা আসছি আইএসএল। আমি বিশেষত সমর্থকদের জন্য আনন্দিত যে ইস্টবেঙ্গল বিনিয়োগকারী পেয়ে গিয়েছে এবং ক্লাবকে আমরা এই মরশুমে আইএসএলে দেখতে পাব।’
বাইচুংয়ের মতো দীর্ঘদিন লেসলি ক্লডিয়াস সরণির ক্লাবে না খেললেও লাল-হলুদ সমর্থকদের মনে নিজের জায়গা করে নিয়েছিলেন মহম্মদ আল আমনা। সিরিয়ার মিডফিল্ডারের হৃদয়েও যে ইস্টবেঙ্গল আছে, তা বুধবার আবারও প্রমাণ হল। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর একটি ফেসবুক বার্তায় বললেন, ‘ইস্টবেঙ্গল পরিবারের সবাইকে অভিনন্দন। জয় ইস্টবেঙ্গল।’
প্রাক্তনীদের আবেগের স্রোতের মাঝে লাল-হলুদ সমর্থকরা বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন। যখন থেকে মোহনবাগান ও এটিকে গাঁটছড়া বেঁধেছে, তখন থেকে আইএসএলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন তাঁরা। একটা সময় তো অনেকে আইএসএল খেলার স্বপ্ন ছেড়েও দিয়েছিলেন। সেখান থেকে ‘খোঁচা খাওয়া বাঘের মতো’ দেশের সর্বোচ্চ লিগে ফিরতে পেরে লাল-হলুদ সমর্থকদের স্লোগান ‘রাজার মতো ফিরেছি’।
‘প্রবাসে ইস্টবেঙ্গল’-এর তরফে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়, ‘লড়েছি অনেক যুদ্ধ, মিলিয়ে কাঁধে কাঁধ!! জাকার্তা থেকে জম্মু, করেছি বাজিমাত!! খেলা হবে, খেলা হবে!! আসো খেলবো!! প্রত্যেকটা শহরে এবার খেলা হবে!! এই আমরা কারা?? ইস্টবেঙ্গল!!’
টুইটারে ইস্টবেঙ্গলের পোস্টের নীচে আবার এক নেটিজেন লেখেন, 'আমরাই দামাল ঘোড়া, দু'চোখে বারুদ ভরা, বলে বলে সবাই দেব গোল, গ্যালারির হৃদয়জুড়ে, ভালবাসা দিচ্ছি ছুঁড়ে, বাড়ি ফিরে ইলিশ মাছের ঝোল, জার্সি মানেই আমার মা, আর তো কিছুই জানি না, দর্শকের ঐ গর্জনে মাঠ উথালপাথাল, জার্সি মানেই আমার মা, আর তো কিছুই জানি না।'
নিজের ভালোবাসা-আবেগ উজাড় করে দেওয়ার মধ্যেই আবার মুখ্যমন্ত্রী ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননা অনেকে। তেমনই একজন বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাহায্য ও অবদানের জন্য ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা আপনাকে চিরকাল মনে রাখবেন। আমাদের সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।’
শুধু লাল-হলুদ সমর্থকরা নন, ইস্টবেঙ্গলের শেষমুহূর্তের কামব্যাকে খুশি মোহনবাগান সমর্থকরাও। খানিকক্ষণের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা দূরে ঠেলে রেখে (হয়তো আরও বেশি করে নিজেদের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী পাওয়ার উচ্ছ্বাসে) শুভ মণ্ডল নামে এক বাগান সমর্থক ফেসবুকে লেখেন, ‘অবশেষে ইস্টবেঙ্গল আইএসএলে, অভিনন্দন সবাইকে একজন মোহনবাগান ফ্যানের তরফ থেকে। এতদিন আইএসএলে সেই উন্মাদনা ও আবেগ ছিল না। এইবার আইএসএল দেখবে কলকাতা ফুটবল ফ্যানদের আবেগ ও উন্মাদনা।’
কয়েকজন সবুজ-মেরুন সমর্থকরা আবার খোঁচার আড়ালেও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিতা 'দীর্ঘজীবী হউক' বার্তা দিয়েছেন। সৌম্য বসু নামে তেমনই একজন বলেন, 'ইস্টবেঙ্গল এবার থেকে দুটো নাম নিয়ে খেলবে। জিতলে শ্রী ইস্টবেঙ্গলে, হারলে বিশ্রী ইস্টবেঙ্গল। জোকস আপার্ট, খেলা হবে! চিরন্তন লড়াই জারি থাকল, বকলমেই হোক না।'
যদিও অনেকেই সেই পথে হাঁটেননি। বরং একের পর খোঁচা উড়ে আসতে থাকে। কোনওটাই বলা হতে থাকে, ‘নিজের দম কোথায়? মুখ্যমন্ত্রীর জন্য আইএসএলে সুযোগ পেল ইস্টবেঙ্গল।’ কোনওটাই বলা হতে থাকে, ‘তাহলে আই লিগ না জিতেই আইএসএল খেলতে এল ইস্টবেঙ্গল?’
তাতে অবশ্য পালটা দিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরাও। বাটানগর লাল-হলুদ পরিবারের ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, ‘রাজার মুকুট রাজার সাজ, রক্ত দিয়ে কেনা মাটি, কাগজ দিয়ে নয়, নিজের দমে আইএসএল খেলছি, ক্লাব বিকিয়ে নয়।’
সেখানেই অবশ্য থামেনি। বরং চিরাচরিত ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান দ্বন্দ্বের মতোই সেই ‘লড়াই’ এখনও চলছে। আর সেই ‘লড়াই’ আবেগ আইএসএলেও পৌঁছে যাওয়ায় খুশি এক লাল-হলুদ সমর্থক। টুইটারে তিনি বলেন, ‘জয় শ্রী ইস্টবেঙ্গল - লড়াই করতে জন্ম - কিংবদন্তীর মতো বাঁচব - সর্বকালের সেরা ডার্বি দেখতে চলেছে আইএসএল।'
যদিও আইএসএলে ডার্বি খেলা নিয়েও খোঁচা দিতে ছাড়েননি লাল-হলুদ সমর্থকরা। তেমনই একজন বললেন, ‘আমরা কোথায় মোহনবাগানের সঙ্গে ডার্বি খেলব? আমরা তো এটিকের বিরুদ্ধে ডার্বিতে নামব।’
অর্থাৎ বার্তাটা স্পষ্ট, লড়াই তো সবে শুরু, আগামিদিনে আরও আসছে বন্ধু...
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।