রূপকথার মতো ক্রিকেট কেরিয়ারে ইতি টানলেন স্টুয়ার্ট ব্রড। পঞ্চম টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার শেষ উইকেট নিয়ে অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের হার বাঁচিয়ে চিরতরের মতো ক্রিকেট মাঠ (পেশাদারি কেরিয়ার) ছাড়লেন তারকা পেসার। তবে শুধু ব্রড নয়, মইন আলির টেস্ট কেরিয়ারের শেষটাও রাজকীয় কায়দায় হল। ক্রিক ওকসের সঙ্গে যুগলবন্দিতে ১১ রানের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার চার উইকেট তুলে নিয়ে টেস্টের মোড় ঘুরিয়ে দেন মইন। তাঁরা দু'জনে যদি সেই স্পেলটা করতেন, তাহলে আজ হেরে ওভাল ছাড়তে হত ইংল্যান্ডকে। কিন্তু সেটা হয়নি। বরং পঞ্চম টেস্টে ৪৯ রানে জিতে অ্যাশেজে সমতা ফিরিয়ে আনল ইংল্যান্ড। পাঁচ ম্যাচের অ্যাশেজ সিরিজের ফল দাঁড়াল ২-২। তবে অ্যাশেজে ট্রফিটা হাতে পাচ্ছেন না ব্রড, মইনরা। গতবার অস্ট্রেলিয়া অ্যাশেজ জেতায় নিজেদের সঙ্গে ট্রফি নিয়ে ফিরবেন প্যাট কামিন্সরা।
কীভাবে এগিয়েছে পঞ্চম দিনের খেলা?
ইংল্যান্ডের খাড়া করা ৩৮৪ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে চতুর্থ দিনের শেষে ৩৮ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল বিনা উইকেটে ১৩৬ রান। কিন্তু পঞ্চম দিনের ২০ বলের মাথায় ওয়ার্নারকে (৬০ রান) আউট করেন ওকস। সেটা চতুর্থ দিনের বিতর্কিত বলের (অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তনীদের দাবি, পুরনো বল পালটে কার্যত নয়া বল দেওয়া হয়েছিল ইংল্যান্ডকে) কারণে হয়েছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু ওকসের বলটা যে দুর্ধর্ষ ছিল, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সেই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই ড্রেসিংরুমে ফেরেন উসমান খোয়াজা (৭২ রান)। ১২ বলের মধ্যে দুই উইকেট হারিয়ে প্রবল চাপে পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। বিনা উইকেটে ১৩৫ রান থেকে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর দাঁড়ায় দুই উইকেটে ১৪১ রান। কিছুক্ষণ পর প্যাভিলিয়নে ফেরেন মার্নাস ল্যাবুশানও।
তবে লড়াই ছাড়েননি স্টিভ স্মিথ এবং ট্রেভিস হেড। চতুর্থ উইকেটে একেবারে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে খেলতে থাকেন। দু'জনে মিলে অস্ট্রেলিয়াকে ২৫০ রানের গণ্ডি পার করিয়ে দেন। দেখে মনে হচ্ছিল যে বৃষ্টির জন্য ম্যাঞ্চেস্টারে নিশ্চিত হারের মুখ থেকে বেঁচে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ভাগ্যের জোরে অ্যাশেজ নিয়ে ঘরে ফিরছেন প্যাট কামিন্সরা, সেইসব নিয়ে যে হইচই হচ্ছে, তাতে চিরকালের মধ্যে দাঁড়ি ফেলার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন স্মিথরা।
কিন্তু ৭৩.৩ ওভারে মইন আলির একটা বলই ম্যাচর মোড় ঘুরিয়ে দেয়। একেবারে উপমহাদেশের পিচে পঞ্চম দিনে স্পিনাররা যেভাবে উইকেট পান, সেভাবেই হেডকে (৪৩ রান) আউট করেন মইন। পরের ওভারের শেষ বলে স্মিথকে (৫৪ রান) আউট করেন ওকস। ওই বলটা সম্ভবত ওভালের ড্রেসিংরুমে বাঁধানো থাকবে। পরের ন'টি বলে আরও দুটি উইকট হারায় অস্ট্রেলিয়া। ছয় রান করে আউট হয়ে যান মিচেল মার্শ। তারপর শূন্য রানেই ড্রেসিংরুমে ফেরেন মিচেল স্টার্ক। তার ফলে তিন উইকেটে ২৬৪ রান থেকে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর দাঁড়ায় সাত উইকেটে ২৭৫ রান। মার্শকে আউট করেন মইন। স্টার্কের শিকারী ছিলেন ওকস।
তারপর মরিয়া চেষ্টা করেন অস্ট্রেলিয়ার উইকেটকিপার অ্যালেক ক্যারি। কামিন্সকে নিয়ে দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু আউট হয়ে যান কামিন্স। তারপর টড মার্ফির সঙ্গে জুটি বেঁধে খেলতে থাকেন। মার্ফি বেশ ভালো খেলছিলেন। কিন্তু ১৮ রান করে আউট হয়ে যান। তখন অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল নয় উইকেটে ৩২৯ রান। অর্থাৎ জয়ের জন্য দরকার ছিল ৫৫ রান। আর যা করতে হত, সেটা ক্যারিকেই করতে হত। তবে সেটা সম্ভব হয়নি। ৩৩৪ রানে অল-আউট হয় যায় অস্ট্রেলিয়া। ক্যারিকে আউট করেন ব্রড। যিনি দ্বিতীয় ইনিংসে দুটি উইকেট নিয়েছেন। চারটি উইকেট পেয়েছেন ওকস। তিনটি উইকেট নিয়েছেন মইন। একটি উইকেট গিয়েছে মার্ক উডের ঝুলিতে।
ওভাল টেস্টের সংক্ষিপ্তসার
১) ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস: ২৮৩ রান অল-আউট।
২) অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস: ২৯৫ রান অল-আউট।
৩) ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস: ৩৯৫ রান অল-আউট।
৪) অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংস: ৩৩৪ রান অল-আউট।
আরও পড়ুন: Ashes 2023 moments: স্টোকসের ক্যাচ বৈধ না হলেও আউট দিতে হবে! হইচই ইংরেজদের, দুরন্ত ক্যাচ বেয়ারস্টোর
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।