দলে এত চোট-আঘাত সমস্যা থাকা সত্ত্বেও, এফসি গোয়ার মতো দলের বিরুদ্ধে জেতায় স্বাভাবিক ভাবেই উচ্ছ্বসিত এটিকে মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ জুয়ান ফেরান্দো। তাঁর মতে, ফুটবলারদের পারফরম্যান্সের চেয়েও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা এবং মানসিকতাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং তাঁর দলের ছেলেদের মধ্যে সেটা থাকায় তিনি সন্তুষ্ট।
জানুয়ারির দলবদলেদুর্দান্ত কোনও স্ট্রাইকারকে আনা যাবে না, সেই ইঙ্গিতও বুধবার ম্যাচের পরে সাংবাদিক বৈঠকে দিয়ে রাখলেন ফেরান্দো। তবে তাতেও তিনি উদ্বিগ্ন হবেন না বলে জানিয়েছেন। ম্যাচের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে ফেরান্দো আর কী বললেন, জেনে নিন বিস্তারিত:
প্রশ্ন: দেখা যাচ্ছে সমস্যায় পড়লেই আপনার দল ভালো খেলে। এই ব্যাপারে একমত আপনি?
ফেরান্দো: এই দুঃসময়ে ঠিক মতো প্রস্তুতি নেওয়াই কঠিন। অনেক চোট-আঘাত রয়েছে আমাদের। এই মাসের ২৬টা দিন খুব কঠিন কেটেছে আমাদের। এই কয়েক দিনে একাধিক গুরুতর চোট লেগেছে আমাদের খেলোয়াড়দের। দিমিত্রি পেত্রাতোসের কথাই ধরুন। গত দু’সপ্তাহ ধরে ওর চোট রয়েছে। তবুও খেলে যাচ্ছে, অনুশীলন করে যাচ্ছে। সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। খেলোয়াড়দের এই চেষ্টাটা তাদের পারফরম্যান্সের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। কঠিন সময়ে হারের পরেও জয়ে ফিরে আসার মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামতে পারার যে ক্ষমতা, তা এক কথায় অসাধারণ। পারফরম্যান্সে ভুলভ্রান্তি নিয়ে এখন না ভেবে ইতিবাচক ভাবনা ভাবাই এখন ভালো।
আরও পড়ুন: মধুর বদলা, ঘরের মাঠে গোয়াকে হারিয়ে অক্সিজেন পেল বাগান, উঠে এল তিনে
প্রশ্ন: আগামী দু’সপ্তাহ বিশ্রাম পাবেন আপনারা। এই ছুটিকে কী ভাবে কাজে লাগানোর কথা ভাবছেন?
ফেরান্দো: প্রথমত, এখন আমাদের শারীরিক ভাবে চাঙ্গা হয়ে ওঠার সময়। তার পরে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে পরবর্তী ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। ওই ম্যাচের জন্য সঠিক মানসিকতা তৈরির প্রস্তুতি দরকার। এ ছাড়াও চোট-আঘাত সমস্যা মেটাতে হবে, যার জন্য দলের ডাক্তার, ফিজিওরা দিন-রাত পরিশ্রম করছেন। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন পজিশনে আমাদের ভালো খেলোয়াড় রয়েছে। যেখানে যেখানে বাকি প্লেয়ার দরকার, সেই নিয়ে ক্লাব ম্যানেজমেন্ট কাজ করছে। এখন যা অবস্থা, এই মরশুমের মাঝখানে একজন যথার্থ নাম্বার নাইন খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। কারণ, সেরা খেলোয়াড়রা বিভিন্ন দলে চুক্তিবদ্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই দলে এমন একজনকে দরকার, যে জায়গা তৈরি করতে পারে এবং সেই জায়গা দিয়ে আক্রমণে উঠতে পারে। যেমন দিমিত্রি। পাঁচটা গোল করেছে, অনেকগুলো (ছ’টি) অ্যাসিস্ট করেছে। লিস্টন, মনবীর, আশিকরা সুযোগ হাতছাড়া করে ঠিকই। কিন্তু আমাদের খুশি হওয়া উচিত যে, আমাদের দলে এমন খেলোয়াড় রয়েছে, যারা পজিশনাল অ্যাটাকে গিয়ে সফল হয় এবং আমাদের কোনও নাম্বার নাইনের ওপর নির্ভর করে থাকতে হয় না। কিন্তু এখানে জানি না কেন, একজন নাম্বার নাইন পাওয়ার জন্য সবাই পাগল হয়ে যাচ্ছে। আমাদের ভালো ফুটবলার দরকার, যারা সুযোগ তৈরি করতে পারে। যার প্রতিভা আছে। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আজ আমরা প্রায় দু’মাস পরে চার বিদেশি নিয়ে মাঠে নামতে পারলাম এবং যথেষ্ট ভালো খেলেছি। এই সাফল্যগুলোই উপভোগ করুন। অযথা নম্বার নাইন নিয়ে উদগ্রীব হওয়ার প্রয়োজন নেই।
আরও পড়ুন: পোগবার পরিবর্ত খুঁজে নিল ATK Mohun Bagan, নতুন বছরে যোগ দিচ্ছেন সার্বিয়ান তারকা
প্রশ্ন: আজকের ম্যাচে একাধিক সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে এই সমস্যার সমাধান করবেন কী ভাবে?
ফেরান্দো: এটা ঠিকই যে, মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে লড়াইটা অন্য রকমের হবে। সেই জন্য আমাদের অন্য রকমের পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। তবে সবার আগে আমাদের চোট-আঘাত সমস্যা মেটাতে হবে। গত তিন সপ্তাহে আমরা অনুশীলনে মেডিক্যাল স্টাফদেরও নামাতে বাধ্য হয়েছি। খেলোয়াড়দের এখন ভালো মতো বিশ্রাম দরকার। তাদের চিকিৎসা দরকার। যাতে মাঠে ফিরে তারা ভাল পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারে।
প্রশ্ন: আপনার দলের ভারতীয় অ্যাটাকাররা প্রচুর সুযোগ নষ্ট করছেন। এই নিয়ে কি আপনি চিন্তিত নন?
ফেরান্দো: আশিকের বয়স ২৫, লিস্টন ২৩ আর মনবীর ২৬। বছর খানেকের মধ্যে ওরা নিজের ক্যারিয়ারের সেরা জায়গায় পৌঁছবে। দলকে জেতানো ছাড়াও এদেরকে সাহায্য করা, স্থানীয় ফুটবলারদের উন্নত করে তোলাটাও তো আমার কাজের মধ্যে পড়ে। হতে পারে ওরা অনেক সুযোগ নষ্ট করছে। কিন্তু ওদের পাশে থাকা আমাদের কর্তব্য। এই মরশুমে লিস্টন যদি কুড়িটা সুযোগ নষ্ট করে, আমাকে চেষ্টা করতে হবে আগামী মরসুমে সংখ্যাটা যেন দশে নেমে আসে। যখন ওর ২৭ বছর বয়স হবে, তখন যেন একবারের বেশি সুযোগ নষ্ট না করে। এটাই ফুটবলের প্রক্রিয়া। পরিশ্রম করে যাও। আমি ছ’গোলে ম্যাচ জিততে চাই। কিন্তু আমাকে তো আমার কাজ করে যেতেই হবে। দেশীয় খেলোয়াড়দের উপর আস্থা রাখতেই হবে।