Ranna Puja 2023: বিশ্বকর্মা পুজোর দিন পালিত হয় রান্নাপুজো। যদিও এর সঙ্গে মনসার সম্পর্কই বেশি। জেনে নিন সেই কাহিনি।
1/10 ভাদ্র মাসের শেষ দিনে বিশ্বকর্মা পুজো হয়। একই সঙ্গে হয় রান্না পুজো। কিন্তু জানেন কি এই রান্না পুজোর সঙ্গে বিশ্বকর্মার পুজোর কোনও সম্পর্ক নেই। এটি পুরোপুরি মা মনসার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি পুজো। কেন এই দিনে করা হয় রান্না পুজো বা অরন্ধন? জেনে নিন।
2/10 ভাদ্রের শেষে সংক্রান্তিতে হয় মনসা পুজো। গ্রাম বাংলায় এখনও অনেক বাড়িতেই এই অরন্ধন পালন করা হয়। ভাদ্রে রান্না করে আশ্বিনে খাওয়া এই পুজোর অন্যতম রীতি। রান্নাঘর পরিষ্কার করে হেঁশেলের এককোণে শালুক বা ফণিমনসা গাছের ডাল সাজিয়ে পুজো করা হয়। সেই সঙ্গে বসানো হয় মনসার বিশেষ ঘট। কিন্তু মনসার সঙ্গে এই পুজোর সম্পর্ক কী?
3/10 বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আষাঢ়-শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষাকাল। এই সময় বাংলার ঘরে ঘরে রান্না হয় নানা খাবার। মরসুমের সেরা আনাজ ও মাছ থাকে রান্নার তালিকায়। আর থাকে পান্তা ভাত। কচুর শাক, ওলের বড়া, আরও নানা রকম ভাজাভুজি, চচ্চড়ি, ইলিশ মাছ ও অন্যান্য নানা মাছের বিভিন্ন পদ, চালতার চাটনি প্রভৃতি রেঁধে তুলে রাখা হয় পরের দিনের জন্য। পুজোর দিন সকালে রান্নাঘর ধুয়ে মুছে আলপনা দেওয়া হয়। সাজিয়ে দেওয়া হয় রোজকার রান্নার উনুনকেও। ওইদিন বন্ধ থাকে সমস্ত রান্নাবান্না। পুজোর আয়োজন হয় রান্নাঘরেই।
4/10 আগের দিনের রেঁধে রাখা বাসি ভোগ নিবেদন করা হয় দেবীকে। পুজো শেষ হওয়ার পর ভোগ গ্রহণ করেন সকলে। তিথি অনুযায়ী ভাদ্র মাসের রান্না খাওয়া হয় আশ্বিন মাসে। রান্না বন্ধ থাকার কারণে এই অনুষ্ঠানের নাম ‘অরন্ধন’ ও উনুনকে পুজো করার কারণে নাম হয় রান্নাপুজো । এছাড়াও স্থানভেদে ‘ইচ্ছারান্না,‘’ধরাটে রান্না’, ‘আটাশে রান্না’ প্রভৃতি নামে পরিচিত এই পার্বণ।
5/10 শোনা যায় অনেক দিন আগে এক দেশে এক সদাগর ছিল। তার ছিল সাত বউ। ছোট বউ খুব গরিব ঘরের মেয়ে ছিল, তাই বাকিরা কেউ তার সঙ্গে ভালো করে কথা বলত না। এক দিন সন্ধ্যায় সব বউ মিলে বনের পাশে এক পুকুরে স্নান করতে যায়। সেই বনে বাস করত অষ্টনাগ। বনে আগুন লেগে যাওয়ায় তারা মাছ হয়ে সেই পুকুরে লুকিয়ে ছিল। ছোট বউ পুকুরে এক ঝাঁক মাছ দেখে গামছা দিয়ে সেগুলি ধরে। বাড়ি এসে হাঁড়িতে জল দিয়ে মাছগুলিকে জিইয়ে রাখে। পরদিন সকালে মাছগুলিকে কাটতে গিয়ে দেখে হাঁড়ির ভিতর আটটি সাপ।
6/10 ছোট বউ কাউকে কিছু বলে না। সাপগুলিকে পুষতে থাকে। আস্তে আস্তে সাপগুলি বড় হয়ে ওঠে। সাপগুলি ভাবে ছোট বউয়ের উপকার করতে হবে। এই ভেবে তারা স্বর্গে গিয়ে মা মনসাকে সব কথা জানায়। মা মনসা ছোট বউয়ের মাসির রূপ ধরে তাকে স্বর্গে নিয়ে যান। বলেন রোজ মনসা পুজোর আয়োজন করে রাখতে আর অষ্টনাগের জন্য দুধ গরম করে রাখতে। আর তাকে দক্ষিণ দিকে তাকাতে বারণ করেন।
7/10 পরম সুখে ছোট বউয়ের দিন কাটতে লাগে। হঠাৎ একদিন তার মনে প্রশ্ন জাগে দক্ষিণ দিকে কী আছে। নিষেধের কথা ভুলে গিয়ে দক্ষিণ দিকে তাকাতেই দেখে মা মনসা নাচছেন। সে অবাক হয়ে সেই অপূর্ব দৃশ্য দেখতে থাকে। ভুলে যায় দুধ গরম করে রাখার কথা। নাচ শেষ হয়ে যাওয়ার পর সে কথা মনে পড়ায় তাড়াতাড়ি গিয়ে দুধ গরম করে আনে। কিন্তু ফুটন্ত দুধ খেয়ে সাপেদের মুখ পুড়ে যায়। রাগে অস্থির হয়ে তারা ছোট বউকে কামড়াতে যায়। সেই কথা জানতে পেরে মা মনসা বউকে অর্ধেক শরীরে গয়না পরিয়ে পৃথিবীতে ফিরিয়ে দিয়ে যান। আর বলে যান অষ্টনাগের সুখ্যাতি করতে।
8/10 শ্বশুরবাড়ির লোকেরা বৌয়ের অদ্ভুত সাজের কথা জিজ্ঞাসা করে। ছোট বউ অষ্টনাগের প্রশংসা করে বলে আট ভাই থাকতে তার আবার গয়নার অভাব! বাড়ির বাইরে থাকা অষ্টনাগ সেই কথা শুনতে পায়। সব রাগ ভুলে যায়। তারা আবার স্বর্গে গিয়ে মনসাকে অনুরোধ জানায় বউয়ের সারা দেহে গয়না পরিয়ে দেওয়ার জন্য। তাদের অনুরোধে মা মনসা আবার পৃথিবীতে এসে ছোট বউকে অনেক গয়না দেন। আর নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন ভাদ্র মাসের সংক্রান্তির দিন পুজো করে পান্তা ভাত ও মাছের নানা পদ ভোগ দিতে।
9/10 ছোট বউ সবাইকে সমস্ত কথা বলে। সবাই খুব আশ্চর্য হয় আর ছোট বউয়ের প্রশংসা করতে লাগে। সেও মনসা দেবীর কথামতো সমস্ত আয়োজন করে মনসা পুজো করতে লাগে। এইভাবেই ধীরে ধীরে পৃথিবীতে মনসা পুজো তথা রান্নাপুজোর কথা প্রচার হয়।
10/10 সমাজতাত্ত্বিকরা বলেন, শ্রাবণ মাস একই সঙ্গে শিব এবং তাঁর কন্যা মনসার পুজো হয়। পুরো শ্রাবণ মাস জুড়ে বর্ষা-প্লাবিত বাংলায় সাপের প্রকোপ দেখা দেয় আর সেই সাপের দংশন থেকে রক্ষা পেতে স্মরণ করা হত দেবী মনসার। তাই বর্ষার শেষে ভাদ্র সংক্রান্তিতে তাঁরই উদ্দেশে করা হয় মনসা পূজা। সেখান থেকেই এসেছে রান্নাপুজোর চল।