আসলে একটি সাধারণ হাসপাতাল। কিন্তু নামের শেষে লেখা রয়েছে ‘রিসার্চ’। অর্থাৎ চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণার সঙ্গে যুক্ত এই হাসপাতাল। এমন ভ্রান্ত ধারণা জনমানসে নাকি তৈরি করছে বহু বেসরকারি হাসপাতাল। তাতে সরকারি অনুদান পাচ্ছে হাসপাতালগুলি এবং তার পাশাপাশি সেই সব হাসপাতালের উপর আস্থা বাড়ছে বহু মানুষের। যদিও ‘রিসার্চ’ বা গবেষণার বিষয়টি নাকি পুরোপুরি ভাঁওতা। এমনই অভিযোগ স্বাস্থ্যভবনের কাছে বহু দিন ধরেই ছিল। এবার সেই সব হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা পরিকল্পনা করেছে স্বাস্থ্যভবন।
হাসপাতালের নামের সঙ্গে ‘রিসার্চ’ শব্দটি থাকলেই তার সপক্ষে দিতে হবে প্রমাণ। না হলেই বিপদে পড়তে পারে ওই বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। তাদের লাইসেন্স রিনিউ আটকে যেতে পারে। রাজ্যে এমন নিয়ম চালু করল স্বাস্থ্যভবন।
পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য দফতর মনে করছে, কলকাতা এবং তার আশপাশের এলাকা মিলিয়ে প্রায় ২০টি বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে, যাদের নামের সঙ্গে ‘রিসার্চ’ শব্দটি জুড়ে রয়েছে। এমনকী জেলাতেও বেশ কিছু চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের নামের মধ্যে রিসার্চ শব্দটি আছে। তাতে আসছে সরকারি অনুদান। অথচ বহু ক্ষেত্রেই সেই টাকা ঠিক মতো ব্যবহার করা হচ্ছে না।
(আরও পড়ুন: পুরুলিয়ায় ৪৫০০ কোটির ইস্পাত কারখানার উদ্বোধনে মমতা, হবে চাকরি, দেবেন আরও উপহার)
এই প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকাকে রাজ্যের কার্যনির্বাহী স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা অনিরুদ্ধ নিয়োগী বলেছেন, ‘বেশির ভাগ হাসপাতাল নামের মধ্যে রিসার্চ শব্দটি ব্যবহার করে সামাজিক প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু নামের সঙ্গে রিসার্চ শব্দটির উল্লেখ থাকলেই ওই প্রতিষ্ঠানকে সমস্ত নিয়ম মেনে চলতে হবে।’ সেই কারণে ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট রুলের ৪ (২সি) ধারা অনুযায়ী, সব বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্দেশিকা জারি করেছে স্বাস্থ্য দফতর বলেও জানা গিয়েছে।
কী রয়েছে ওই ধারায়? ধারায় বলা হয়েছে, লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনও বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের নামে রিসার্চ শব্দটি ব্যবহার করা যাবে না। ব্যবহার করতে হলে গবেষণা সংক্রান্ত নথি জমা দিতে হবে। যে সব বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের নামে রিসার্চ শব্দটি রয়েছে, তাদের প্রায় ১০টি বিষয়ে দরকারি নথি জমা দিতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্তাদের মত, কিছু হাসপাতাল গবেষণার প্রমাণ দিতে পারলেও অনেকেই স্রেফ নিজেদের জাহির করতে নামের মধ্যে রিসার্চ লিখে রেখেছে। এবার সেই সব হাসপাতাল সমস্যায় পড়বে।
(আরও পড়ুন: মদ্যপান করে বিমানে উঠে অভব্য আচরণ, কলকাতা বিমানবন্দরে বিসৃঙ্খলা)
তবে এখানেই শেষ নয়। নামের শেষে ‘রিসার্চ’ রাখতে গেলে এই চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলিকে এর পরেও আরও বহু ধরনের নিয়ম মেনে চলতে হবে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর পরে যেগুলি মেনে চলতে হবে, সেগুলি হল—
- প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব এথিক্স কমিটি থাকতে হবে।
- কতগুলি গবেষণার ছাড়পত্র মিলেছে, দু’বছর অন্তর তা জানাতে হবে রাজ্য ও কেন্দ্রকে।
- সক্রিয় গবেষণার জন্য কর্মী রাখতে হবে।
- প্রতিষ্ঠানে আলাদা গবেষণা বিভাগ থাকতে হবে।
- সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কোন গবেষণা কোন মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে, তার নথি দেখাতে হবে।
- গবেষণার বিষয়বস্তুর উপরে পেটেন্ট পাওয়া গিয়েছে কি না, কিংবা পেটেন্টের জন্য আবেদন করা হয়েছে কি না, সেই নথিও থাকতে হবে।
- ওই প্রতিষ্ঠানে পিএইচডি বা অন্য কোনও কোর্স করানো হয় কি না, যা গবেষণার সঙ্গে যুক্ত, তা স্পষ্ট করতে হবে।
- গবেষণার জন্য আইসিএমআর বা কোনও সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার অনুদান মিলেছে কি না, মিললে গবেষণা শেষের পরে অনুদান পুরোপুরি জানাতে হবে।
আগামী দিনে এই সব নিয়মের ক্ষেত্রেও কোনও খামতি থাকলে সেই হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলেও মত স্বাস্থ্যকর্তাদের। এর ফলে রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে বড় বদল আসতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।