সম্প্রতি রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনার সামনে এসেছে। তাতে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুও হয়েছে। তারপরেই বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধে আরও তৎপর হয়েছে রাজ্য সরকার। বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধ করার জন্য বাজি তৈরির ক্লাস্টার গড়ার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিল রাজ্য সরকার। সিদ্ধান্ত হয়েছিল কালীপুজোর আগে রাজ্যে ১৮টি বাজি ক্লাস্টার তৈরি করা হবে। কিন্তু জমিজটের কারণে সেই সমস্ত ক্লাস্টার তৈরির কাজ আপাতত আটকে রয়েছে। তাছাড়া জমির দাম দেওয়া নিয়েও বাজি ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
বাজি ক্লাস্টার তৈরির জন্য ৬ একর বা ১৯২ কাঠা জমির প্রয়োজন। এর জন্য বাজি ব্যবসায়ীদেরকেই জমি খুঁজতে বলেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু, এত জমি কোথায় পাবেন বাজি ব্যবসায়ীরা? তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। তার ওপর ক্লাস্টার তৈরির জন্য জমির দাম কে দেবে, তাও নির্দিষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি বলে অভিযোগ বাজি ব্যবসায়ীদের।
বাজি ব্যবসায়ীদের সংগঠন প্রদেশ আতসবাজি সমিতির সাধারণ সম্পাদক শুকদেব নস্করের দাবি, জমির দাম যদি ৫০ হাজার টাকা করে কাঠা ধরা হয়, তাহলে সেই হিসাবে ছয় একর জমির দাম পড়ছে কোটি টাকার উপরে। তাঁর দাবি, এমনিতেই গত কয়েক বছর ধরে বাজি ব্যবসা ধুঁকছে। দু'বেলা দু'মুঠো খাবার জোগাড় করতে গিয়েই বাজি ব্যবসায়ীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাহলে এত টাকা ব্যবসায়ীরা কোথায় থেকে পাবেন? তা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর অভিযোগ, অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা বাইরে থেকে বাজি এনে বিক্রি করে লাভ করেন। সেক্ষেত্রে রাজ্যে ক্লাস্টার তৈরি হলে তাঁদের ক্ষতি হবে।
এ বিষয়ে আরও একটি বাজি ব্যবসায়ীদের সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ বাজি উন্নয়ন সমিতির সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর মান্না সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন। তবে বজবজ, মহেশতলা এবং বারুইপুরে জমি চিহ্নিত করা হয়েছে বলে তিনি জানান। প্রসঙ্গত, ব্যবসায়ীদেরকেই জমি চিহ্নিত করতে বলেছে সরকার। তাঁর বক্তব্য, সরকারেরই উচিত জমি চিহ্নিত করা। না হলে ক্লাস্টার তৈরির কাজ এগোবে না।
যদিও প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এই জমির পুরো নাম ব্যবসায়ীদের দিতে হবে না। তার মধ্যে এই জমির মূল্যের শুধুমাত্র ১০ শতাংশ বহন করতে হবে বাজি প্রস্তুতকারকদের এবং বাকি খরচ বহন করবে রাজ্য সরকার। এছাড়াও, বাজি প্রস্তুতকারকরা যাতে সহজে লাইসেন্স পান তার জন্য সিঙ্গেল উইন্ডো সিস্টেম করা হবে। এর ফলে পুলিশ এবং দমকলের কাছে লাইসেন্সের জন্য বাজি প্রস্তুতকারকদের ছোটাছুটি করার হয়রানি কমবে।
এর আগে সারা বাংলা আতসবাজি নির্মাতা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বাবলা রায় জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকার চাইলে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে ক্লাস্টার তৈরির কাজ শুরু করে দিতে পারে। এখানে জমি রয়েছে। অন্যান্য জেলাগুলিতেও জমি দেখার কাজ চলছে বলে তিনি জানান। উল্লেখ্য, কলকাতা এবং দার্জিলিং বাদে সব জেলাতেই বাজি ক্লাস্টার তৈরি পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্যের। তবে কলকাতা এবং দার্জিলিঙে বাজি হাব তৈরি করা হবে। ক্লাস্টার তৈরি নিয়ে দ্রুতই নবান্নে ফের বৈঠক হবে বলে জানা গিয়েছে।