পড়াশোনা হোক বা প্রতিবাদ - বরাবরই শৃঙ্গ জয়ের অদম্য সাহস দেখিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতেও পিছিয়ে ছিলেন না যাদবপুর প্রাক্তনী বা পড়ুয়ারা। এবার মহামারীর থেকে হাত থেকে বিশ্বকে রেহাই দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম কান্ডারী হলেন এক যাদবপুরের প্রাক্তনী স্বপন জানা। যিনি আগাগোড়া কোভিশিল্ড তৈরির প্রক্রিয়ায় সামিল ছিলেন।
১৯৮৫ সালে যাদবপুরের ফুড টেকনোলজি এবং বায়োকেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভরতি হয়েছিলেন স্বপনবাবু। স্নাতক শেষ করে যাদবপুরের বায়োকেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকেই করেছিলেন স্নাতকোত্তর। সবমিলিয়ে ছ'বছর কাটিয়েছিলেন যাদবপুরে। তারপর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে যুক্ত ছিলেন। আপাতত তিনি পুণের সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার (এসআইআই) রিসার্চ-ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের অধিকর্তা হিসেবে কর্মরত। প্রযুক্তি হস্তান্তরের যে সংস্থা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্রিটিশ-সুইডিশ সংস্থা অ্যাস্ট্রোজেনেকার যৌথভাবে তৈরি করোনা টিকার উৎপাদন করেছে। মহামারী শুরুর পর যখন প্রথম অ্যাস্ট্রোজেনেকার সঙ্গে যুক্ত হয় সেরাম, তখন থেকেই টিকা তৈরির প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন স্বপনবাবু।
তাঁর দিনরাতের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে নয়া বছরের শুরুতেই। জরুরি ভিত্তিতে ভারতে কোভিশিল্ড ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে সেরাম। গত মঙ্গলবার থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানোও হয়েছে কোভিশিল্ড। আর ৪৮ ঘণ্টা পরেই সেই টিকা পেতে চলেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের করোনাভাইরাস যোদ্ধারা। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, শত প্রাণের ঝুঁকি সত্ত্বেও যে লড়াইটা এতদিন তাঁরা করে এসেছেন, সেজন্য সেই টিকাকরণ হতে চলেছে ছোট্ট এক ধন্যবাদজ্ঞাপন। পরে শুরু হবে দেশের অন্যান্য মানুষেরও টিকাকরণ। প্রত্যেকের আশা, টিকার হাত ধরেই সমস্ত অন্ধকার কেটে আলো আসবে পৃথিবীতে। আর সে কথা ভেবে নিশ্চয়ই অপর কোনও টিকা তৈরির মধ্যেই কিছুটা স্বস্তি পাবেন স্বপনবাবু। যিনি ইতিমধ্যে সেরামের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ টিকা তৈরির যে দল ছিল, তাতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।
প্রাক্তনীর সাফল্যে উচ্ছ্বসিত যাদবপুরও। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, স্বপনবাবুর জন্য গর্বিত যাদবপুরের সকলে। সঙ্গে আশাপ্রকাশ করা হয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আশা যে বর্তমান প্রজন্ম এরকম অসামান্য রোলমডেলকে আদর্শ হিসেবে দেখবে। যিনি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধে সামনে থেকে আছেন।’