শহরের প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলায় চারদিক দিয়ে বাস–গাড়ি যাতায়াত করে। অর্থাৎ এই পথ যেমন ব্যস্ত থাকে তেমনই পথ দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাও থাকে প্রবল। তাই সিগনাল না মেনে গাড়ি চালানো যেমন অপরাধ, তেমনই কানে মোবাইল ফোন গুঁজে রাস্তা পারাপারও জরিমানা যুক্ত অপরাধ। কিন্তু তাতে পাত্তা দিচ্ছেন না শহরবাসী বলে অভিযোগ। এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার করছেন মানুষজন। পুলিশ সূত্রে খবর, এমন অনেক নারী–পুরুষকে হাতেনাতে ধরে সতর্ক করা হয়েছে। এমনকী ব্যস্ত রাস্তায় কানে মোবাইল ফোন গুঁজে হেঁটে মেট্রো চ্যানেলের দিকে যাওয়া পথচারীদের জরিমানা করা হলেও তা দিয়ে ফের একই কাজ করছেন।
বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে? ধর্মতলায় ট্রাফিক সিগনাল সবুজ থাকাকালীন ফোন কানে দিয়ে দৌড়ে রাস্তা পার হচ্ছেন পুরুষ–মহিলা। তখন বিপরীতে হেড কোয়ার্টার ট্রাফিক গার্ডের এক পুলিশ তাঁদেরকে থামিয়ে বললেন— ‘এভাবে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার করবেন না।’ আর দেখা গেল সে কথায় পাত্তা না দিয়ে এগিয়ে গেলেন তাঁরা। উলটে বলে গেলেন ওই পুলিশ কর্মীকে, ‘ফোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ তখন ওই পুলিশকর্মী জরিমানার খাতা বের করে ১০ টাকা ফাইন করলেন। তারপর তাঁরা টাকা দিয়ে রসিদ নিয়ে সেটি রাস্তাতেই ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে চলে গেলেন। এমন ঘটনা নিত্যদিন ঘটছে বলে পুলিশ জানাচ্ছে।
ঠিক কী তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে? কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, গত একমাসের পরিসংখ্যান দেখলে দেখা যাবে, এই কানে মোবাইল ফোন দিয়ে রাস্তা পারাপার হওয়ার অভিযোগে এখনও পর্যন্ত প্রায় দু’হাজার মানুষকে জরিমানা করা হয়েছে। সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ধর্মতলায় পথচারীদের সুরক্ষায় পুলিশ মোতায়েন থাকে। যাতে কোনও পথ দুর্ঘটনা না ঘটে। আর কেউ নিয়ম ভাঙলেই যাতে জরিমানা করা যায়। সারাদিনে রোজ কমবেশি ১০০ জনকে এই অপরাধে জরিমানা করে চলেছে পুলিশ। কিন্তু জরিমানা দিয়েও কানে হেডফোন বা মোবাইল গুঁজে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে দেদার রাস্তা পারাপার। আসলে তাঁরা বলছেন, ‘এটা তো ম্যাটার অফ টেন রুপিস’। এত কথা শোনা যাবে না।
আরও পড়ুন: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসি ক্যামেরা বসতে চলেছে, চাপের কাছে নতিস্বীকার কর্তৃপক্ষের
আর কী জানা যাচ্ছে? ২০২২ সালে কলকাতায় ১৮৫টি পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তার জেরে প্রাণহানি হয়েছে। এমনকী ৭৪টিতে প্রাণ গিয়েছে পথচারীর। ২০২৩ সালের গোড়ায় পুলিশ কমিশনার বিনীতকুমার গোয়েল কলকাতার ট্রাফিক গার্ডগুলিকে পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন। এভাবে পারাপারকে ট্রাফিকের ভাষায় বলা হয় জে–ওয়াকিং। আর তা নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করে পুলিশ। কিন্তু তারপরও দেখা গিয়েছে, এই বছরের আটমাস কেটে গেলেও মানুষকে সচেতন করা যায়নি। মানুষের কাছ থেকে ১০ টাকা জরিমানা নিয়েও ঝুঁকির পারাপার এড়ানো যায়নি। তাই পুলিশ কর্মী হতাশ হয়ে বলছেন, ‘কাকে বারণ করব? কেউ কথা শোনে না।’