অন্যান্য বিষয়ের মতো কলকাতার নস্টালজিয়া ট্রাম। অথচ মহানগরী আজ হারাল সেই নস্টালজিয়াকে। কারণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে ধর্মতলা থেকে খিদিরপুরের ট্রাম রুট। এই রুটের তামার তার চুরি হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। যা তিন বছর পেরিয়ে গেলেও উদ্ধার করতে পারেনি লালবাজার। এটা অবশ্য পিওর তামার তার। যার স্পর্শেই ছুটে চলে কলকাতার নস্টালজিক ট্রাম। আর চুরি যাওয়া এই তামার তারের বাজারদর প্রায় দু’কোটি টাকা। কলকাতা ময়দানের উপর দিয়ে ধর্মতলা থেকে খিদিরপুরের দিকে গিয়েছে। আর সেখানেই তার না থাকায় রুট বন্ধ হয়ে গিয়েছে ট্রামের। এখান থেকেও আয় ছিল ট্রাম কোম্পানির। তারপরও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
এদিকে এই ট্রাম রুট বেশ জনপ্রিয় ছিল। আবার কবে তা চালু হবে? বোঝা যাচ্ছে না। ২০২০ সালে আমফান ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল কলকাতা। আর সেটার জেরেই ময়দান চত্বরে ওই রুটে ট্রামের তামার তার ছিঁড়ে যায় বলে খবর। এক কিমিরও বেশি দৈর্ঘ্যের সেই পিওর তামার তার চুরি যায় বলে বুঝতে পারে ট্রাম কোম্পানি। ঝড় থামার পর পরিবহণ দফতরের কর্তারা রুট পরিদর্শন করতে গিয়েই বিষয়টি দেখতে পান। ময়দান এলাকায় ট্রামের বিদ্যুতের তার সম্পূর্ণ নেই। যা কল্পনাও করতে পারেননি তাঁরা। হিসাব কষে দেখা যায় ওই তামার তারের মূল্য আনুমানিক দু’কোটি টাকা। তারপরই ময়দান থানায় অভিযোগ দায়ের করে পরিবহণ দফতর।
তারপর ঠিক কী ঘটল? এই অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে কলকাতা পুলিশ। কিন্তু প্রায় সাড়ে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও কলকাতা পুলিশ এখনও সেই চুরির কিনারা করতে পারেনি। তাই বন্ধ থাকা ট্রাম রুট নিয়ে বৈঠকে বসেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। সেখানেই ওঠে খিদিরপুর–ধর্মতলা ট্রাম রুট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিকল্প হিসাবে ময়দান এলাকায় বিশেষ লুপ লাইন তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে সেটা করাও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট জায়গায় তার লাগাতে অর্থদফতরের কাছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। সেটা কবে মিলবে? জানা নেই।
আরও পড়ুন: ট্রাফিক জরিমানার টাকা তছরুপের অভিযোগ, চাকরি গেল কলকাতা পুলিশের দুই কনস্টেবলের
আর কী জানা যাচ্ছে? লালবাজারের ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে দু’কোটি টাকার তামার তার চুরি যাওয়া এবং সেটার কিনারা করতে না পারায় বন্ধ হয়ে রয়েছে নস্টালজিক ট্রাম রুট। পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, পুলিশ যদি এই বহুমূল্য তামার তার চুরির কিনারা করতে না পারে তাহলে ওই রুটে আর ট্রাম চলবে না। এমন ঘটনা ঘটতে পারে তা কল্পনাও করা যাচ্ছে না। এখানে শ্যুটিং করত নানা সংস্থা। তার জন্য আমাদের থেকে ট্রাম ভাড়া নিত। ঘণ্টায় দু’ হাজার টাকা ভাড়া পেত ট্রাম কোম্পানি। যা মাসে কয়েক লক্ষ টাকা আয় হতো। ট্রাম না চললে ওই টাকা আসার পথও বন্ধ হয়ে গেল।