একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ঘাসফুল ঝড়েও ভাঙড় পেয়েছিল আইএসএফ। তখন বাম–কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হয় আইএসএফের। কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জোট হয়নি। সুতরাং যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে সিপিএম এবং আইএসএফ পৃথকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এবার নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়ে ভাঙড়ে আইএসএফের ঘাঁটি বলে পরিচিত শানপুকুর অঞ্চলে যান বামপ্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য। আর সেখানে তাঁকে গ্রামবাসীরা ছেঁকে ধরেন। নানা বাক্যবাণ ধেয়ে আসে তাঁর দিকে। তবে মেজাজ হারাননি বুদ্ধিমান সৃজন। বরং হাসিমুখে সমস্ত প্রশ্নের জবাব দিয়ে মন জয় করে নিলেন সিপিএমের তরুণ প্রার্থী।
এখন আর অতটা গরম নেই। বরং মনোরম বাতাস বইছে চারদিকে। তাই লোকসভা নির্বাচনের প্রচার করতে অসুবিধা হচ্ছে না প্রার্থীদের। তাই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে ঘোরেন সৃজন ভট্টাচার্য। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ভাঙড়ের পরিচিত বামনেতা তুষার ঘোষ, রশিদ গাজি, পলাশ গঙ্গোপাধ্যায় এবং অন্যান্যরা। প্রচার শুরু হয় শানপুকুর অঞ্চলের ছেলেগোয়ালিয়া গ্রাম থেকে। এই গ্রামের সব আসনে আইএসএফের দখলে। এখানে বিধায়ক কার্যালয় করেছেন নওশাদ সিদ্দিকী। সেই গ্রামে সৃজন টোটো নিয়ে পৌঁছয়, তখন রাস্তার দু’ধারে অসংখ্য মানুষ ছিলেন। কিন্তু এখানে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী করেছে সায়নী ঘোষকে। সুতরাং লড়াই এখানে হবে জোরদার। কারণ এই আসন তৃণমূল কংগ্রেসের দখলেই ছিল। কিন্তু ভোটব্যাঙ্ক ফেরানোই লক্ষ্য সৃজনের। সেক্ষেত্রে বিজেপির পরিস্থিতি খুব খারাপ হতে পারে।
আরও পড়ুন: ‘আমি নৃত্য শিল্পী হতে চাই’, চেনা ছকের বাইরে গিয়ে জানালেন পঞ্চম স্থানের সুস্বাতী
সৃজন এবং মানুষের ভিড় যখন সেখানে প্রবেশ করেছে তখন কিছু গ্রামবাসী টোটোর সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। আর ভিড় ঠেলে বেরিয়ে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘আমরা ভাইজানকে ভোট দেব।’ সৃজন প্রতিবাদ বা মেজাজ না হারিয়ে হাসি মুখে তাঁকে বলেন, ‘আপনি কাকে ভোট দেবেন সেটা আপনার ব্যাপার। কিন্তু ভোট দেওয়ার আগে ঠান্ডা মাথায় দু’বার ভাববেন কাকে ভোট দেওয়া উচিত। কে লড়াই করতে পারবে তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে।’ এরপরই এক প্রবীণ বাসিন্দা প্রশ্ন করেন, ‘জোটটা করা গেল না? বিমানবাবু কি পয়সা খেয়ে বসে আছে?’ অবার সৃজন হাতে তুলে নিলেন মাইক্রোফোন। আর মুচকি হেসে বললেন, ‘জোট হলে ভালই হতো। একা বিমানবাবুর উপর সব নির্ভর করেনি।’ আর এক আইএসএফ সমর্থকের প্রশ্ন, ‘ভোটে মার খেলে আমাদের বাঁচাবে কে?’ সৃজনের জবাব, ‘চিন্তা করবেন না। আমি আছি।’
এসব নানা প্রশ্নের জবাব দেওয়ার পর সাতভাইয়া, নাংলা, পালপুর, জামিরগাছি গ্রাম ঘুরে বেড়ান সৃজন। সব গ্রামেই আইএসএফ কর্মীদের কাছে কথা শুনতে হয় তাঁকে। তবে মুখের হাসি কখনও ম্লান হয়নি সৃজনের। গ্রামবাসীদের উদ্দেশে সৃজন বললেন, ‘ভোট বলে নয়, সারাবছর রোদে–জলে–ঘামে পুড়ে মাঠে ময়দান থাকা খেলোয়াড় আমরা। একবার খেলার সুযোগ করে দিন। সংসদে আপনাদের অধিকারের কথাই তুলে ধরব।’ সবাই এসে হাত মেলালেন সৃজনের সঙ্গে। প্রচার থেকে প্রাপ্তি ঘটল।