গ্রামের পোস্ট অফিস, আর তার ভাঙাচোরা কোয়ার্টার নাকি 'ভুতুড়ে' এমনটাই মনে করেন গ্রামবাসীরা। তাই সকালবেলা পোস্ট অফিসের মধ্যে আওয়াজ শুনে সকলেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। সাহস করে দরজায় ঢিল মারতেই সেখান থেকে বেরিয়ে এলেন নতুন পোস্ট মাস্টার দামোদর দাস। সদ্য মুক্তি পাওয়া 'ডাকঘর'-এর ট্রেলারে পোস্টমাস্টার দামোদর দাসের বেশেই দেখা দিয়েছেন অভিনেতা সুহোত্র মুখোপাধ্যায়। সম্প্রতি ওয়েব সিরিজে নিজের চরিত্র, থেকে তাঁর জীবনে চিঠির গুরুত্ব, সমস্ত কিছু নিয়েই হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে কথা বললেন সুহোত্র।
পোস্টমাস্টার 'দামোদর দাস'-এর চরিত্রটি নিয়ে কী বলবেন?
সুহোত্র : এর আগে আমি সত্যিই 'দামোদর দাস'-এর মতো এমন একটা চরিত্রে আগে অভিনয় করিনি।আগে যে চরিত্রগুলি করেছি, সেগুলি বেশিরভাগই শহুরে চরিত্র, ডার্ক চরিত্র করেছি। সে জায়গা থেকে এই কাজটা আমার কাছে সম্পূর্ণ নতুন।
'ডাকঘর'-এর কাজ তো বহুদিন ধরে চলছিল বলে শুনেছি…
সুহোত্র : 'ডাকঘর' শ্যুট করাটাই আমার কাছে একটা অভিজ্ঞতা। প্রচুর প্রতিকূলতা, বাধা এসেছে, গত দু'বছর ধরে এটার জন্য আমরা কাজ করেছি। যেকারণে মাঝে মনে হচ্ছিল কাজটা শেষ হবে তো? এটা যে শেষ হয়েছে, 'ডাকঘর' যে রিলিজ করছে, সেটাই আমার কাছে আনন্দের।
সুহোত্রর জীবনে চিঠি কতটা গুরুত্ব রাখে?
সুহোত্র : একটা সময় পর্যন্ত চিঠি বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি যখন স্কুলে পড়ি তখনও স্মার্ট ফোন আসেনি। কি-প্যাড ফোন। আমি হাতে ফোন পেয়েছি অনেক পড়ে। টুয়েলভের আগে আমার কাছে কোনও ফোন ছিল না। তার আগে পর্যন্ত দূরের কাউকে কিছু বললেন, বা মনের কথা জানাতে হাতে লেখা চিঠির মাধ্যমেই বলেছি। স্কুলে পড়ার সময় আমি গ্রিটিংস কার্ড বানাতাম, ওটা আমার কাছে একরকম চিঠিই ছিল।
'ডাকঘর' চিঠির সঙ্গে একটা প্রেমের গল্পও বলে, ব্যক্তিগত জীবনে প্রেমপত্র কখনও লিখেছেন?
সুহোত্র : নাহ.. (একটু ভেবে) সেটা কখনও লেখা হয়ে ওঠেনি। কারণ, চিঠিটা তো স্কুলজীবনেই লিখেছি। প্রেম বিষয়টা এসেছে আরেকটু পড়ে কলেজে ওঠার পর, তখন তো ফোন চলে এসেছে। তাই যা হয়েছে সব ফোনে।
এখনও যত্ন করে রেখে দিয়েছে, এমন কোনও চিঠি আছে?
সুহোত্র : কলেজে পড়ার সময় একটা প্রেমপত্র পেয়েছিলাম, অনেকদিন সেটা রেখেও দিয়েছিলাম, এখন অবশ্য জানি না, সেটা কোথায় আছে। (হাসি)
প্রথম প্রেম কবে পড়েছিলেন?
সুহোত্র : ক্লাস নাইনে। বেশিদিন ছিল না, আসলে ওটা ইনফেচুয়েশন ছিল। তবে সিরিয়াস প্রেম কলেজে পড়ার সময়ই হয়েছিল।
দিতিপ্রিয়ার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ঠিক কেমন?
সুহোত্র : ওঁর সঙ্গে প্রথম কাজ, তবে কাজ করতে গিয়ে খুব ভালো একটা বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে। দিতিপ্রিয়া সহ অভিনেত্রী হিসাবে যেমন ভালো, তেমনই ভালো মানুষ। কাজ করতে গিয়ে প্রচুর আড্ডা মেরেছি। সেখান থেকেই বন্ধুত্ব, আমরা এখনও আলাদা করে আড্ডা মারি, বন্ধুত্বটা বজায় আছে।
এখন যদি ব্যক্তিগতস্তরে চিঠি লিখতে হয়, কাকে লিখবেন?
সুহোত্র : (একটু ভেবে) ঠাকুমাকে। আমার ঠাকুমা কয়েকবছর হল মারা গিয়েছেন। তবে ঠাকুমাকে অনেক কথা আমার বলা বাকি আছি। ছোট ছিলাম, অনেক কথা বলতে পারতাম না। এখন মাঝে মাঝে মনে হয়, সেই কথাগুলো বলতে পারলে ভালো হত। তাই সেগুলি চিঠিতে লিখে রাখতে চাই, হয়ত ওঁর কাছে সেটা পৌঁছে দিতে পারব না, তবে কোথাও একটা রেখে দিয়ে মনে মনে বিশ্বাস করতে পারি, সেগুলি ঠাকুমা পরছেন।
‘ডাকঘর’ ট্রেলার দেখে অনেকে ‘পঞ্চায়েত’-এর সঙ্গে তুলনা করছেন, কী বলবেন?
সুহোত্র : মানুষ আসলে কোনও না কোনও কিছুর সঙ্গে তুলনা করতে ভালোবাসেন। গ্রাম, ডাকঘর, এসব দেখে হয়ত মিল খোঁজার চেষ্টা করছেন। তবে ওসব গুরুত্ব দিতে চাই না, কারণ পঞ্চায়েতেরও অনেক আগে শাহরুখ খানের ‘উমিদ’ বলে একটা ধারাবাহিক হত, সেটাও খানিকটা এই ধরনের। সেখানে ব্যাঙ্কের চাকরি নিয়ে একজন গ্রামে আসেন। তাহলে তো ওটার সঙ্গেও তুলনা হতে পারে। ডাকঘর গল্পটা আসলে পঞ্চায়েতেরও অনেক আগে লেখা। তবে বিভিন্ন বাধার কারণে কাজ শুরু হয়নি।