এই শহরটা ঠিক আগের মতোই আছে। দুর্গাপুজো ঘিরে একইরকম আলোর রোশনাই, তবে সব্যসাচীর মনের কোণে অন্ধকার জমাট বেঁধেছে। গত বছরেও একসঙ্গে মায়ের দর্শন সেরেছিলেন তাঁরা। কিন্তু হুট করে চিরকালের মতো সব্যসাচীর হাত ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন তাঁর মনের মানুষ। গত বছর ২০শে নভেম্বর সকলকে কাঁদিয়ে চলে গিয়েছেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। কিন্তু কেমন আছেন ঐন্দ্রিলার সব্য?
ঐন্দ্রিলার মৃত্যুর পর সোশ্যাল মিডিয়াকে বিদায় জানিয়েছেন। কাজ করছেন নিজের মতো করে। এই মূহুর্তে স্টার জলসার ‘রামপ্রসাদ’ সিরিয়ালে দর্শক দেখছে তাঁকে। কিন্তু চেনা গণ্ডির বাইরে আজকাল দেখা মেলে না তাঁর। ঐন্দ্রিলার মৃত্যুর পর নিজেকে গুটিয় নিয়েছেন সব্যসাচী। প্রিয়জনকে হারানোর যন্ত্রণা তিনি ভাগ করতেও চান না, সংবাদমাধ্যমের সামনে সচরাচর এই নিয়ে কথা বলেন না। তবে সম্প্রতি আনন্দবাজারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা বলেন, তাঁর বিশ্বাস একটা নির্দিষ্ট ঘটনার পর মানুষ একরকম থাকতে পারে না। বলেন, ‘তোমার একটা অংশও হারিয়ে যায় তার সঙ্গে। বাকি অংশটুকুতে হয়ত প্রলেপ পড়ে ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু যে অংশটা হারিয়ে যায়, সেটা ফিরে পাওয়া খুব কঠিন।’
সব্যসাচীও কি হারিয়েছেন নিজের একটা অংশ? উত্তর দেয় তাঁর নৈঃশব্দ্য। আসলে ঐন্দ্রিলাহীন সব্যসাচীর জীবনের স্ট্রাগলটা একমাত্র জানে তাঁর পরিচিত বৃত্ত। প্রাণোচ্ছ্বল লড়াকু ঐন্দ্রিলা আর তাঁর মনের মানুষ একদম অর্ন্তমুখী। তাঁরা ছিলেন পরস্পরের পরিপূরক। রূপকথার মতো তাঁদের প্রেমের কাহিনি। সিরিয়ালের সেটে আলাপ, সেখান থেকে বন্ধুত্ব, প্রেম আর পাশে থাকা। একটা সম্পর্কের জন্য নিজেকে সর্বতোভাবে উজার করে দেওয়া কী জিনিস তা শিখিয়েছেন সব্যসাচী। তবুও শেষরক্ষা হয়নি!
গত বছর অক্টোবরের শুরুতেই ছিল দুর্গাপুজো। সেইসময় সব্যসাচী, তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু অভিনেতা সৌরভ দাস মিলে একটি ক্যাফে শুরু করেছিলেন। তাঁর উদ্বোধনে, উদযাপনে সর্বক্ষণ সঙ্গী ঐন্দ্রিলা। পুজোর সময়টা সেখানেই কেটেছিল তাঁদের সময়। এরপর কালীপুজোও কাটে নির্বিঘ্নে। ৩১শে অক্টোবর সব্যসাচীর জন্মদিন। নিজের ‘বেঁচে থাকার কারণ’-এর আর্বিভাব দিবসও জমিয়ে সেলিব্রেট করেন ঐন্দ্রিলা, কে জানত ধীরে ধীরে মৃত্য়ু এগিয়ে আসছে! দ্বিতীয়বার ক্য়ানসার-জয়ী ঐন্দ্রিলা যখন নতুন স্বপ্ন সাজাচ্ছেন, ওয়েব সিরিজের শ্যুটিং-এর জন্য গোয়া যেতে প্রস্তুত ঠিক তখনই ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হলেন অভিনেত্রী। তারিখটা ১লা নভেম্বর। প্রায় ২০ দিনের লড়াই শেষে না-ফেরার দেশে চলে গেলেন অভিনেত্রী।
একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রথমবার ক্যানসার আক্রান্ত হয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা। বছর দেড়েকের চিকিৎসার পর সুস্থ হন তিনি। বছর খানেক পরেই অভিনয় জীবন শুরু করেন। তবে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় ফের বিপদ অজান্তেই হানা দেয়। ঐন্দ্রিলার ফুসফুসে টিউমার ধরা পড়ে, পরে জানা যায় সেটি ক্যানসারাস। ফের শুরু দীর্ঘ লড়াই। দ্বিতীয় দফাতেও ক্যানসারকে হারান ঐন্দ্রিলা। ২০২২ সালে খানিক সুস্থ হয়ে একটি ওয়েব সিরিজে কাজও করেন। বড্ড তাড়াতাড়ি চলে গেলেন ঐন্দ্রিলা। ভালোবাসার মানুষকে কীভাবে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আগলে রাখতে হয় তা দেখিয়েছেন সব্যসাচী চৌধুরী। এরপর নেটমাধ্যমে 'আদর্শ প্রেমিক'-এর তকমা পেয়েছেন সব্যসাচী, তিনি যদিও সেই নিয়ে বিন্দুমাত্র বিচলিত নন। নিঃসঙ্গতা আর নিজের অধ্যাবসায় নিয়েই কাটছে সব্যসাচীর দিন।