আগামীকাল, ২২ ডিসেম্বর মুক্তি পাচ্ছে সুমন ঘোষ পরিচালিত কাবুলিওয়ালা। হ্যাঁ, রবি ঠাকুরের জনপ্রিয় ছোট গল্প অবলম্বনে ফের নতুন ছবি আসছে। আর তার ঠিক আগেই হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা মুখোমুখি হয়েছিল ছোট্ট মিনির। ওরফে অনুমেঘা কাহালির। সে প্রযোজনা সংস্থা এসভিএফের অফিস জুড়ে ছুটে ছুটে খেলে বেড়াচ্ছিল তার মাঝেই খেলার ছলে কিছু কথা জেনে নেওয়া গেল। বাদ গেলেন না তার মা, ঋতুপর্ণা কাহালিও। তিনিও জানালেন মেয়ের এই পথচলার বিষয়ে অজানা কথা।
কালকেই তো মুক্তি পাচ্ছে কাবুলিওয়ালা। তুমি কি এই গল্পটা পড়েছ?
অনুমেঘা: পড়িনি, কিন্তু দেখেছি। তপন সিনহার তৈরি করা ছবিটি দেখেছি, খুব ভালো লাগছে।
সেখান থেকে কি কিছু শিখেছ?
অনুমেঘা: না, একেবারেই না।
তাহলে কে সবটা শিখিয়েছিল, সুমন আঙ্কেল?
অনুমেঘা: হ্যাঁ। সুমন আঙ্কেলই তো অ্যাক্টিং (অভিনয়) শিখিয়েছে। কী কী করতে হবে সবটা বলে দিয়েছে।
মিঠুন আঙ্কেলের সঙ্গে প্রথমবার কাজ করলে, কেমন লাগল? কী কী করতে সেটে?
অনুমেঘা: খুব ভালো লেগেছে। অনেক মজা করে কাজ করেছি আমরা। আমি তো ওঁর (মিঠুন চক্রবর্তী) সঙ্গেই থাকতাম। ওঁর পাগড়ি ধরে গুঁতো মারতাম, পাগড়ির ভাঁজ খুলে দিতাম। নকল দাড়ি লাগাত তো, সেটা ধরে চুলকে দিতাম। তারপর ভুঁড়ি বাজাতাম। খুব মজা করেছি।
আদৃত আঙ্কেলের সঙ্গে তো এর আগে কাজ করেছ। এই ছবির জন্য তিনি কী বললেন?
অনুমেঘা: আদৃত আঙ্কেল আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমায় বেস্ট উইশেস (শুভেচ্ছা) জানিয়েছে।
তারপরই অনুমেঘা খেলায় মন দিলে তাঁর মা ঋতুপর্ণা কাহালির থেকে অন্যান্য বিষয়গুলো জেনে নেওয়া গেল।
আরও পড়ুন: 'সবাই আমায় ছিঁড়ে ফেলত...' কাবুলিওয়ালা করার আগে কেন ভয় পেয়েছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী?
আরও পড়ুন: ‘একেন বাবু’ করার আগে অনির্বাণ জানতেনই না এই চরিত্রর কথা! খোলামেলা আড্ডায় আর কী বললেন?
আচ্ছা, ও যে এত ছোট থেকে অভিনয় করছে পড়াশোনার ক্ষেত্রে কখনও অসুবিধা হয়নি?
ঋতুপর্ণা: না, কখনই অসুবিধা হয়নি। ওর প্রধানত সকালের দিকে শুট থাকত। তাই বিকেলে ফিরে পড়ার সময় পেত। শুটিংয়ের সময় স্কুল যেতে পারত না। তবে সমস্ত নোটস, যাবতীয় স্কুল থেকে পাঠিয়ে দেয়া হতো। ভীষণ সাপোর্ট পেয়েছি প্রযোজনা সংস্থা, স্কুল দুই জায়গা থেকেই।
আপনি কি ওকে বিশেষ কিছু শিখিয়েছিলেন এই ছবির জন্য? কোনও হোমওয়ার্ক?
ঋতুপর্ণা: না, একেবারেই কোনও হোমওয়ার্ক করাইনি। সুমন দা বলে দিয়েছিলেন যে ওকে কোনও চাপ যেন না দেওয়া হয়। এমনকি ডায়লগের জন্যেও। ও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে যতটা করে ততটুকুই চাওয়া হয়েছিল এই ছবির জন্য। একেবারে ফ্রি, নির্ভয়ে রাখা হয়েছিল ওকে। ও যেমন এখন দেখছেন নিজের মতো রয়েছে তখনও তাই ছিল। তবে ওর জন্য একটা স্ক্রিপ্ট দিয়ে দেওয়া হয়েছিল বাংলাটাই ইংরেজি হরফে লেখা ছিল তাতে। ও যখন ফ্রি থাকত সেটা গল্পের মতো করে পড়ত।
এটা কেন?
ঋতুপর্ণা: আমরা ব্যাঙ্গালুরুতে থাকতাম। ওর ছোটবেলা ওখানেই কেটেছে। এই বছর মানে ক্লাস টু থেকে বাংলা শিখছে। তাই খুব সড়গড় ছিল না বাংলায়। তবে...
বলুন।
ঋতুপর্ণা: অনুমেঘার স্মৃতিশক্তি প্রখর। এক দু'বার যেটা ওকে বলে দেওয়া হয় ও সেটা মনে রাখে খুব। সুমন দা ধরুন কিছু একটা বলে বলল ‘মনে আছে তো এখানে এটা এটা বলবি’, ও সঙ্গে সঙ্গে বলে শুনিয়ে দিত। তারপরই টেক হয়ে যেত।
ওর শুরুটা কীভাবে হয়?
ঋতুপর্ণা: দাদাগিরি থেকে। আমি ওর ছোটবেলার নানা ভিডিয়ো পোস্ট করতাম ফেসবুকে। সেটা দেখেই ও ডাক পায়। এরপর জি বাংলায় একটা ধারাবাহিক হতো বোধিসত্ত্বের বোধবুদ্ধি সেখানে সিলেক্ট হয়। ও ছোট থেকেই খুব ক্যামেরা ফ্রেন্ডলি। অভিনয় তো বটেই, যে কোনও পারফর্মিং আর্টসের প্রতি ওর দারুণ ঝোঁক আছে বরাবর। গামছা দিয়ে চুল বানাত, নিজেই মিমিক্রি করত বিভিন্ন বিষয়ের। তারপর সেই সিরিয়ালের পর মিঠাই ধারাবাহিকে সুযোগ পায়। সেটা শেষ হতে না হতেই আবার কাবুলিওয়ালা। তবে এখানে পুরো অডিশন দিয়ে, অনেক বাচ্চার মধ্যে মনোনীত হয়েছে।
আগামীতে অনুমেঘাকে কোন প্রজেক্টে দেখা যাবে?
ঋতুপর্ণা: এখনও ফাইনাল হয়নি। কথা চলছে। আসলে যতদিন না কাবুলিওয়ালা মুক্তি পাচ্ছে ততদিন তো অন্য কাজ ও করতে পারত না, তার উপর সামনেই ওর বার্ষিক পরীক্ষা। তাই সবটা ভেবেই দেখে এবার কথা এগোবে।
ছোট থেকেই এত লাইমলাইট, খ্যাতি। কখনও মনে হয়নি এসব ওর উপর প্রভাব ফেলতে পারে?
ঋতুপর্ণা: না, এখনও তো কোনও প্রভাব পড়েনি। আর আগামীতে যাতে না পড়ে সেই দিকে নজর রাখছি আমি আর ওর বাবা। ও এখনও এগুলো বুঝতে শেখেনি বলেই কার বিপরীতে অভিনয় করল সেটা বুঝতে পারল না। আর সেই জন্যই হয়তো এত সাবলীল ভাবে কাজটা করল। ওকে ঠিক ভাবে আগামীতে এগিয়ে নিয়ে চলার দায়িত্ব আমাদের। পড়াশোনা তো সবাই করে, কিন্তু ওকে মানুষের মতো মানুষ করতে চাই, পড়াশোনার মান রেখে যাতে ও আগামীতে চলতে পারে সেটাই আমাদের চেষ্টা। এত ভালো একটা কাজ দিয়ে ওর শুরু যখন সেটার মান তো রাখতেই হবে।
শেষ প্রশ্ন অনুমেঘাকেই, সবাইকে কী বলবে ছবি নিয়ে?
অনুমেঘা: সবাই কাবুলিওয়ালা দেখতে যেও। বাচ্চাদের নিয়ে যেও। ছোট বাচ্চা, বড় বাচ্চা, মেজ বাচ্চা সবাইকে নিয়ে।
ইতিমধ্যেই এই ছবির অ্যাডভান্স বুকিং শুরু হয়ে গিয়েছে। শীতের শহরে আগামীকাল থেকে ফের দাপিয়ে বেড়াবে কাবুলিওয়ালা। সঙ্গে ফিরবে নস্টালজিয়াও।