প্রয়াত অভিনেতা সুশান্ত সিংয়ের রহস্য মৃত্যু নিয়ে বাড়তে থাকা জল্পনার মধ্যেই সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে মুম্বই পুলিশকে দেওয়া একের পর এক বয়ান। সুশান্তের পরিবারের পর এবার ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে সামনে এল সুশান্ত ও রিয়ার সাইকোথেরাপিস্ট সুজান ওয়াকারের মুম্বই পুলিশকে দেওয়া বয়ান । এই বয়ান সুজন ওয়াকার দাবি করেছেন সুশান্ত বাইপোলার জনিত সমস্যা এবং মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন । তিনি আরও জানান রিয়া চক্রবর্তীই তাঁকে সুশান্তের আত্মহত্যার প্রবণতার কথা প্রথম জানিয়েছিলেন ।
নিজের বয়ানে সাইকোথেরাপিস্ট সুজান জানান ,'গত বছর অক্টবর মাসে প্রয়াত অভিনেতার তৎকালীন ম্যানেজার শ্রুতি মোদী তাঁকে ফোন করে অভিনেতার মাত্রাতিরিক্ত উদ্বেগ জনিত মানসিক সমস্যার কথা জানান এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অ্যাপয়েন্টমেন্ট চান । কিন্তু সেই মতো ৪ঠা নভেম্বর অ্যাপয়েনমেন্ট দেওয়া হলেও পরে তা বাতিল করে দিয়েছিলেন সুশান্তের ম্যানেজার । শ্রুতি চিকিৎসককে জানিয়েছিলেন 'পরিস্থিতি হাতের বাইরে তখনই চলে গিয়েছিল যখন সুশান্ত জানতে পারেন তিনি আর কোনওভাবেই সুস্থ হতে পারবেন না ' ।
এরপর ৭ই নভেন্বর রিয়া এই সাইকোথেরাপিস্টকে ফোন করে সুশান্তের আত্মহত্যার প্রবণতার কথা জানিয়ে নতুন অ্যাপয়েনমেন্ট চান । বয়ানে পুলিশকে সুজান ওয়াকার জানিয়েছেন , ' ওই দিন বিকেল ৪টে ৪৫ মিনিটে রিয়া চক্রবর্তী সুশান্তকে নিয়ে তাঁর কাছে প্রথমবার আসেন । রিয়াকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলে সুশান্তের সাথে একা কথা বলে চিকিৎসক জানতে পারেন সে প্রবল মানসিক উদ্বেগ জনিত অবসাদে আক্রান্ত । প্রথম দিকে সুশান্তের কথাবার্তা অত্যন্ত দ্রুত এবং সম্পূর্ণ অসংলগ্ন ছিল বলেই দাবি করেন তিনি । ডক্টর ওয়াকার জানান , ' সুশান্ত মানসিক উদ্বেগ জনিত সমস্যার মাপ কাঠিতে ১০ এর মধ্যে ৯ স্তরেই অবস্থান করছিল সেইসময় । এমনকি তিনি জানিয়েছিলেন তাঁর এই সমস্যা ছোটবেলা থেকেই চলে আসছে । ২০১৩-১৪ সালেও একবার তাঁর পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়েছিল '। এরপরেই নাকি সুজান ওয়াকার নিশ্চিত হন সুশান্তের বাইপোলার ডিজওর্ডার রয়েছে।
যদিও রিয়ার সাথে কথা বলে মনোবিদ বুঝতে পারেন অভিনেতার বান্ধবী যথেষ্ট চেষ্টা করছেন সুশান্তকে সুস্থ করে তুলতে । এমনকি চলতি বছরের জুন মাসেও রিয়া তাঁর কাছে গিয়েছিলেন কারণ সুশান্ত আবার ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন । এর দিন কয়েকের মধ্যেই ১৪ জুন নিজের বান্দ্রার ফ্ল্যাটে অভিনেতার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয় ।
ওয়াকারের মতে সুশান্ত নিজের মানসিক রোগ সম্পর্কে অনেক বেশি ওয়াকিবহাল ছিলেন । কিন্তু কোনও কারণে তাঁর ধারণা হয়েছিল তাঁর এই রোগ সারবার নয় । তাঁকে নিয়ে যাতে ভবিষ্যতে তাঁর পরিবারকে কোনো সমস্যায় পড়তে না হয় , তাই জন্যই শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নেন অভিনেতা ।
এই মামলায় সুজান ওয়াকারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিআরডিও গেস্ট হাউজে বৃহস্পতিবার ডেকে পাঠিয়েছিল সিবিআই। এদিন দুপুর ১টার কিছু সময় পর সিবিআইয়ের বিশেষ তদন্তকারী দলের মুম্বই খাঁটিতে হাজির হন এই সাইকো থেরাপিস্ট।
যদিও এই দাবি মানতে রাজি নন অভিনেতার পরিবার । প্রথম থেকেই তাঁদের অভিযোগ রিয়াই সুশান্তের আর্থিক সম্পত্তি নয় ছয় করে তাঁকে পরিকল্পিত ভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছেন। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কেসের তদন্ত করছে সিবিআই । আর্থিক তছরুপের তদন্তে নেমে ইডি আধিকারিকেরা ইতিমধ্যেই রিয়া ও তাঁর ভাই শৌভিকের সঙ্গে মাদক চক্রের যোগসাজশ খুঁজে পেয়েছে। যার জেরে এইম মামলায় তদন্তে নেমেছে আরেক কেন্দ্রীয় সংস্থা নারকোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরো।