বাঙালির ম্যাটিনি আইডল ছিলেন উত্তম কুমার। তখনকার দিনে সোশ্যাল মিডিয়ার এত বাড়বাড়ন্ত না থাকার কারণেই হয়তো পর্দায় দেখতে হলে উপচে পড়ত ভিড়। তাঁর প্রেম ভরা চাহুনি, হেয়ার স্টাইল নিমেষে ঝড় তুলত নারী হৃদয়ে। আর পুরুষরা মনপ্রাণ ঢেলে ফলো করতেন উত্তম-স্টাইল। সেই মহানায়কের মৃত্যুর পর দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে ৪৩টা বছর। তবে আজও, উত্তমের সিনেমা মানে যেন আলাদা আকর্ষণ। উত্তম যুগ হয়তো এভাবেই থেকে যাবে সারা জীবন।
২৪ জুলাই উত্তম কুমারের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বিশেষ উৎসেবর আয়োজন করা হয়েছিল নবনির্মিত ধনধান্য স্টেডিয়ামে। আর সেই মঞ্চ থেকেই পূর্বের বাম সরকারকে আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, আগের বাম সরকার মারা যাওয়ার পর যোগ্য সম্মান দেয়নি মানুষের প্রিয় মহানায়ককে।
মমতা বলেন, ‘মৃত্যুর পর উত্তমকুমারের দেহকে রবীন্দ্রসদনে রাখার প্রয়োজন পর্যন্ত মনে করেনি বাম সরকার। মহানায়কের মৃত্যুর পর তাই আমরা তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগই পাইনি। আমাদের সরকার সব শিল্পীর মরদেহ নিয়ে এসে রাখে রবীন্দ্রসদনে, যাতে জনগণ তাঁদের প্রিয় শিল্পীকে এসে শ্রদ্ধা জানিয়ে যেতে পারে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘যবে থেকে আমার দল ক্ষমতায় এসেছে, তবে থেকে আমরা উত্তম কুমারের পরিবারের সকলকে ডেকে আমরা এই দিনটায় তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই। একইসঙ্গে যে চলচ্চিত্র জগতের মানুষ তিনি, সেখানের অভিনেতা-অভিনেত্রীদেরও এই অনুষ্ঠানে সামিল করে নেই। জানানো হয় মহানায়ক সম্মানও।’
চলতি বছরে মোট পাঁচডনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে মহানায়ক সম্মান। সেই তালিকায় আছেন ইন্ডাস্ট্রির চার নায়িকা ও এক নায়ক। মহানায়ক পুরস্কার পেলেন চলতি বছরে অঙ্কুশ হাজরা, কোয়েল মল্লিক, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, শ্রবান্তী চট্টোপাধ্যায় ও সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।
যদিও এদিন মঞ্চ থেকে মমতা মেনে নিলেন ‘মহানায়ক’ উপাধি মানুষই দিয়েছিল উত্তম কুমারকে। দিদির কথায়, ‘আজ নচি (নচিকেতা)-র সঙ্গে মহানায়ককে নিয়ে আলোচনা করছিলাম। ও বলছিল, দেখো দিদি উত্তমকুমারকে তো কেউ মহানায়ক করেনি। উনি নিজে তৈরি হয়েছেন। মানুষই ওঁকে মহানায়ক করেছে। ‘মহানায়ক’ নামটাও মানুষেরই দেওয়া। আমার ভাবনা ও ওর ভাবনায় এত মিল দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম।’
একই দাবি জনগণেরও। প্রথম থেকেই ‘মহানায়ক’ সম্মান নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছেন সাধারণ মানুষ। তা সে দেব হোক বা অঙ্কুশ বা সায়ন্তিকা-শ্রাবন্তী। সাধারণ মানুষও বারবার প্রশ্ন তুলেছেন, এভাবে কারও হাতে ‘মহানায়ক’ সম্মান তুলে দিয়ে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করা যায় কি? নাকি এসবই রাজনীতির একটা অংশ!