'যা কিছু আমার, যা কিছু আমি… সবটাই বাঙালির দেওয়া। শেষদিন পর্যন্ত যেন এঁদের নমস্কার করে যেতে পারি'- সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
সমাপ্তি… একটা যুগের, একটা অধ্যায়ের। আজ বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি অভিভাবকহীন, মাথার ছাদটা সরে গেল। চল্লিশ দিনের লড়াইয়ে ইতি টেনে চলে গেলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। রুপোলি দুনিয়ায় ছয় দশকের অভিযানে এদিন ইতি টানলেন সৌমিত্রবাবু। আজ, দুপুর ১২.১৫ মিনিটে মিন্টোপার্ক লাগোয়া বেলেভিউ ক্লিনিকে প্রয়াত হন অভিনেতা। এদিন কেওড়াতলা মহাশ্মশানের প্রয়াত অভিনেতার শেষকৃত্য সম্পন্ন হল। গান স্যালুটের মাধ্যমে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদার মাধ্যমে অন্তিম বিদায় জানানো হল এই কিংবদন্তিকে।
আজ বিকাল সাড়ে পাঁচটায় রবীন্দ্র সদন থেকে শুরু হয় সৌমিত্রর অন্তিম যাত্রা। এদিন শেষযাত্রায় হাঁটলেন মুখ্যমন্ত্রী, ছিলেন অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন, রাজ চক্রবর্তী, দেব, রুক্মিনীরা। এদিন সৌমিত্রর মৃত্যু ভুলিয়ে দিল রাজনৈতিক ব্যাবধান। শেষ যাত্রায় পা মেলালেন বিমান বসু, সুজন চক্রবর্তীরাও।
এদিন দুপুর ২টো নাগাদ বেলেভিউ হাসপাতাল থেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পার্থিব শরীর নিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় গলফ গ্রিনের বাড়িতে। সেখানে পরিবার ও প্রতিবেশীরা শেষ শ্রদ্ধা জানান কিংবদন্তীকে। সেখান থেকে দুপুর তিনটে নাগদ টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে নিয়ে যাওয়া হয় শিল্পীর মরদেহ। সৌমিত্রর দীর্ঘদিনের সহকর্মী, অনুজ শিল্পী,টেকনিশিয়ানরা তাঁকে শ্রদ্ধার্ঘ জানাতে ভিড় জমিয়েছিলেন। সকলেই শেষবারের মতো অপুর একটা ঝলক মনের মণিকোঠায়বন্দি করতে চাইলেন। হাজির ছিলেন আর্টিস্ট ফোরামের কার্যকারী সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তী, সহ ফোরমের অনান্য সদস্যরা। দীর্ঘদিন ফোরামের সভাপতির পদে ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
দুপুর ৩.৩০-এর মধ্যে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের দেহ টেকনিশিয়ান স্টুডিও থেকে নিয়ে যাওয়া হয় রবীন্দ্র সদনে। ২ ঘন্টা সেখানে শায়িত ছিল প্রয়াত অভিনেতার দেহ। তাঁকে সম্মান জানাতে পৌঁছেছিলেন অগুনতি অনুরাগী, বন্ধু-প্রিয়জনরা।
৫ অক্টোবর করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর ২ সপ্তাহের মধ্যেই করোনামুক্ত হন সৌমিত্রবাবু। তবে কোডিভ সমস্যা কাটিয়ে উঠলেও তাঁর শরীরে একাধিক জটিলতা দেখা দিয়েছিল। গত ২০ দিন ধরে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে ছিলেন তিনি। গত শুক্রবার বর্ষীয়ান অভিনেতার হৃদযন্ত্র আর কিডনির জটিলতা অনেকটা বেড়ে যায়। অবশেষে মাল্টি অরগ্যান ফেলিউরের কারণে আজ মৃত্যু হল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের।