নভেম্বরের শুরুতেও এই বছর যেন তেমনভাবে শীতের দেখা নেই। কোনওদিন একটু উত্তুরে হাওয়ায় গা শিরশির করলেও পরের দিন আবার সেই গরম। বিশেষজ্ঞদের মতে, এইরকম আবহাওয়ায় সর্দি, জ্বর-সহ বিভিন্ন অ্যালার্জি সংক্রান্ত সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই সুস্থ থাকতে গেলে মেনে চলতেই হবে কয়েকটা বিষয়। সেই বিষয়গুলিই জানালেন বিশিষ্ট ক্নিনিকাল ডায়েটিশিয়ান, ডায়াবেটিস এডুকেটর এবং হাওড়ার নারায়ণা হাসপাতালের সিনিয়র ডায়েটিশিয়ান রাখী চট্টোপাধ্যায়।
১. প্রতিদিন সকালে উঠে নিয়ম মাফিক হোক শরীরচর্চা। সেটা মর্নিং ওয়াক হতে পারে বা বাড়ির কোনও খোলা জায়গায় যোগাভ্যাস। তবে দুটোর ক্ষেত্রেই মনে রাখতে হবে ভোরবেলা কিন্তু আবহাওয়া কিছুটা হলেও ঠান্ডা থাকে, তাই মোটা জামা, টুপি ইত্যাদি যেন বাদ না যায়।
২. শরীরচর্চার সঙ্গে সঙ্গেই দিনের শুরু থেকেই হোক সুষম খাদ্যাভ্যাস। সকালটা শুরু হোক তুলসিপাতা, অঙ্কুরিত ছোলা বা মুগের সঙ্গে দুই থেকে চারটি আমন্ড বাদাম দিয়ে। এর সঙ্গে অবশ্যই রাখুন কাঁচা হলুদ ও এক চামচ ত্রিফলার (আমলা, হরিতকি ও বিভিতকি) রস, এই দুটিই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে (antioxidant) ঠাসা। কাঁচা হলুদে আছে কারকিউমিন। আবার ত্রিফলার আমলকি থেকে পাই সর্বোচ্চ ভিটামিন সি, বিভিতকির রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটোরি ক্ষমতা। কিছু ক্ষেত্রে এটি সুগার ও ইউরিক এসিড নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। হরিতকিতে রয়েছে ফাইটকেমিকাল তারপিন,পলিফেনল, অন্থসায়ানইন, ফ্ল্যাভনয়েড। যার প্রত্যেকটি আমাদের শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী।কনস্টিপেশন, হার্টের সমস্যা, হজমের গোলমাল প্রতিরোধ ইত্যাদি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। তবে এই কয়েকটা জিনিস শুধু শীতকাল নয়, সারা বছর আপনাকে সুস্থ রাখবে।
৩. শরীরচর্চার আধ ঘণ্টা থেকে ৪০মিনিটের মধ্যে করে নিন ব্রেকফাস্ট। সকালে দুধ চা এড়িয়েই চলুন। হোল গ্রেন সিরিয়ালসের (রুটি, ওটস, ডালিয়া) সঙ্গে থাকুক যে কোনও প্রোটিন উপাদান - দুধ, ডিম বা ছানা এবং সাথে অবশ্যই সবজি বা স্যালাড।
৪. প্রতিদিন ডায়েটে একটি করে মরশুমি ফল থাকুক। মনে রাখবেন দূর থেকে দামী ফল আনানোর কোনও দরকার নেই, আপনার বাড়ির কাছে যে ফল টাটকা অবস্থায় পাওয়া যায় তার পুষ্টিগুণ সর্বাধিক।
৫. একটি করে আমলকি যদি রোজ ডায়েটে রাখা যায়, তাহলে ধারেকাছে আসবে না রোগব্যাধি। তাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। যা ইমিউনিটি ভালো রেখে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৬.শীতকাল মানেই সবজির সমারোহ, তাই প্রচুর পরিমাণে সবজি ও স্যালাড দিয়ে প্লেটকে করে তুলুন রঙিন। তবে অবশ্যই বাজার থেকে এনে ভালো করে ধুয়ে নেবেন।বাড়িতেই করতে পারেন কিচেন গার্ডেন, যা থেকে পাবেন টাটকা শাক-সবজি। এতে মনও ভালো থাকবে
৭. শীতকালে ভাত খাওয়ার পর হালকা ঘুমের অভ্যেস অনেকেরই আছে। এটা কিন্তু নৈব নৈব চ। কারণ ভাতঘুম শুধুই আলস্য আনে দৈনিন্দিন রুটিনে।
৮.শীতকাল মানেই নলেন গুড়ের মিষ্টি। সারা বাংলায় একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, শীতকালে ডায়াবেটিক রোগীদের সুগার অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এর প্রধান কারণ প্রিয় নলেন গুড়ের মিষ্টি। তাই তাঁদের জন্য বলি নিয়ম ভেঙে ইচ্ছেমতো মিষ্টি খাবেন না, বাড়িতে ছানার সঙ্গে অল্প গুড় দিয়ে মিষ্টি করে নিতে পারেন। তবে তা অবশ্যই সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকলে।
৯.যত্ন নিন ত্বক ও চুলের। এই সময় শুষ্কতা সারাক্ষণের সঙ্গী। তাই ব্যবহার করুন উপযুক্ত ময়েশ্চারাইজার।
১০. প্রচুর জল পান করুন সারাদিনে। প্রায় তিন থেকে চার লিটার জল খেতে পারেন। যা আপনার শরীরকে আর্দ্রতা প্রদান করবে।
এই কয়েকটা জিনিস মাথায় রাখলেই শীত কোনওভাবেই আপনাকে কাবু করতে পারবে না।