একটি তুলতুলে শিশুকে নিয়ে সুন্দর পরিবার গড়ার স্বপ্ন প্রায় সব দম্পতিই দেখে থাকেন। তবে এর মধ্যে কখনও কখনও বাধ সাধতে পারে সঙ্গীর যৌন সমস্যা। আধুনিক জীবনযাত্রার কারণে নারী ও পুরুষ উভয়েরই নানা যৌন সমস্যা তৈরি হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সারা পৃথিবীতে ৬০ থেকে ৮০ মিলিয়ন মানুষ বন্ধ্যাত্বের সমস্যায় ভুক্তভোগী। এই বিশাল পরিসংখ্যানের অর্ধেক হল পুরুষ। পুরুষদের মধ্যে বন্ধ্যাত্ব নানা কারণে দেখা যেতে পারে। মূলত শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যাওয়া ও যৌনাঙ্গের নানা সমস্যার কারণে বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়।
অ্যাপোলো ফার্টিলিটির সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও আইভিএফ বিশেষজ্ঞ ডাঃ মালতি মধু এইচটি লাইফস্টাইলকে এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানালেন। তাঁর কথায়, অধিকাংশে ক্ষেত্রেই, বীর্যের মধ্যে শুক্রাণু অনুপস্থিত থাকে। একে বিজ্ঞানের পরিভাষায় অ্যাজুস্পার্মিয়া বলে। বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কম থাকা বা না-থাকার পিছনে নানা কারণ থাকতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কারণ হিসেবে দেখা গিয়েছে, দীর্ঘকালীন কোনও সমস্যা যেমন যক্কৃৎ ও বৃক্কের সমস্যা, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবিটিস হরমোনের সমস্যা, ক্রোমোজোমের সমস্যা, শুক্রাশয়ের অস্বাভাবিক অবস্থান ইত্যাদি।
তাঁর মতে, টেস্টোস্টেরন প্রতিস্থাপন থেরাপি, ক্যানসারের চিকিৎসা, দীর্ঘসময় ধরে স্টেরয়েডের ব্যবহারও এর কারণ হতে পারে। এছাড়া, ভারী ধাতুজনিত দূষণ, তামাকজাত দ্রব্য সেবন, শুক্রাশয়ের তাপমাত্রা অত্যাধিক বেড়ে যাওয়ার কারণেও এমন সমস্যা হতে পারে।
মিলানে রিপ্রোডাক্টিভ মেডিসিনের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ আর সুচিন্দ্র জানাচ্ছেন, এই সমস্যার পিছনে সাধারণত কোনও নির্দিষ্ট একটি কারণ থাকে না। সমস্যা দেখা দিলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সমস্যার কারণ বুঝতে নানারকম পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয়। প্রথমে আগে থেকে কোনও স্বাস্থ্যের সমস্যা আছে তা জানার চেষ্টা করেন চিকিৎসক। সমস্যাটি বংশগত কিনা তাও বোঝার চেষ্টা করা হয়। এছাড়া যৌনমিলনের সময় কোনও সমস্যা হয় কিনা তা জানা হয়। এরপর যৌনপরীক্ষা করতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা বেশ কয়েকটি উপায়ে করা যেতে পারে।
১. সার্জারি: বন্ধ হয়ে যাওয়া ভাস ডিফারেন্স চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক করা যায়। এছাড়া স্পার্ম রিট্রিভাল পদ্ধতির সাহায্যে শুক্রাণু বের করা সম্ভব।
২. সংক্রমণের চিকিৎসা: যৌননালির ভিতরে কোনও সংক্রমণ থাকলে অ্যান্টিবায়োটিকের সাহায্যে তার চিকিৎসা সম্ভব।
৩. হরমোন থেরাপি: হরমোনের মাত্রা কম থাকলেও বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে। ওষুধের মাধ্যমে হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক করা যায়।
৪. সহায়কমূলক পদ্ধতি: রোগী চাইলে বিকল্প উপায় হিসেবে এই পদ্ধতিগুলোর সাহায্য নিতে পারেন। চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়মিত শুক্র নিঃসরণ বা ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন এই পদ্ধতিগুলির মধ্যে অন্যতম।