ভাষা হচ্ছে মানুষের আত্মপরিচয়ের একটা প্যারামিটার। মানুষের অনেক আত্মপরিচয় আছে। তার মধ্যে একটা ধর্ম। একটা হচ্ছে জন্মস্থান বা দেশ এবং ভাষা। এই ব্যাপারটা মানুষ খুব পছন্দ করে কারণ, ভাষা হল তাঁর আইডিনটিটি। তাঁর আত্মপরিচয় এইসব প্যারামিটারের মধ্যেই থাকে। ভাষা নিয়ে মানুষের প্রচুর আবেগ রয়েছে। বাংলা ভাষা পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ এবং সাংখ্যা গরিষ্ঠের ভাষা। ভারতে সংখ্যা গরিষ্ঠতার দিক থেকে বাংলা দ্বিতীয়। আর পৃথিবীতে পঞ্চম অথবা ষষ্ঠ। তার মানে প্রচুর মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। সেই তুলনায় বাংলা ভাষা সেরকম মর্যাদা এতকাল পায়নি।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো। এটা বাংলাদেশের পক্ষে যেমন গৌরবের তেমনই বাঙালির পক্ষেও গৌরবের। বাংলা ভাষা সারা পৃথিবীতে একটা স্বীকৃত ভাষা হিসেবে সম্মান পাচ্ছে।
একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে খুব ঘটা করে পালিত হয়, তবে আমরাও এবং অন্যান্য দেশের বাঙালিরা নিজেদের দেশে এই দিনটি পালন করে। বাংলা নিয়ে আমাদের অনেক গর্বের মধ্যেও প্রশ্ন ওঠে ভাষার ভবিষ্যৎ কী? অন্ধকার কিনা! বাঙালিদের মধ্যে যাঁরা ভালো হিন্দি-ইংরেজি জানে তাঁরা মাঝেমধ্যে এসব ভাষায় কথা বলে। তাই কখনও মনে হয় বাংলার জন্য সম্মান বা অস্মিতা বাঙালির মধ্যে সেরকম নেই। অধিকাংশ বাঙালির মধ্যে নেই, তবে অনেকের মধ্যে আবার আছেও। কিন্তু এখন আমরা শুনতে পাই ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া ছেলেমেয়েরা বাংলা বলতে চাইছে না, বাংলা শিখতে চাইছে না। এটা খুব দুর্লক্ষণ।
বাঙালি বারাবরই দ্বিভাষিক ছিল। ইংরেজ আমলে বাংলা ভাষাটা যেমন জানত তেমনই ইংরেজি শিখতে হত চাকরি বাকরি করার জন্য। একটু আধটু হিন্দিও তাঁরা বলতে পারত কেননা পশ্চিমে বেড়াতে গেলে হিন্দি কিছুটা শিখতে হত। সুতরাং ভাষা যত শেখা যায় ততই ভালো। এখনকার ছেলেমেরা ইংরেজি শিখছে বলে বাংলা ভুলে যাবে এমনটা আমি বিশ্বাস করি না। যতদিন মনুষ্য সভ্যতা আছে ততদিন বাংলা ভাষা থাকবে বলেই আমার বিশ্বাস। বাংলা ভাষার অভিষ্যৎ অন্ধকার বলে আমি মনে করি না। বিশেষ করে বাংলা ভাষায় যে সাহিত্য আছে তার কোনও তুলনা নেই।