করোনাভাইরাসের ধাক্কা কাটিয়ে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে দাবি করে আসছে কেন্দ্র। সেই দাবির সারবত্তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ। সরব হয়েছেন বিরোধীরাও। তারইমধ্যে আগামিকাল (সোমবার) সাধারণ বাজেট পেশ করতে চলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
স্বভাবতই সেই বাজেটে কী কী ঘোষণা করা হতে পারে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। এমনিতে সংসদে পেশ হওয়া অর্থনৈতিক সমীক্ষায় ১১ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও চলতি অর্থবর্ষে ৭.৭ শতাংশ হারে অর্থনীতি সংকুচিত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের (আইএমএফ) পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী অর্থবর্ষে ১১.৫ শতাংশে বৃদ্ধির ফলে বিশ্বের প্রধান দেশগুলির ভারতীয় অর্থনীতি সবথেকে দ্রুতহারে উত্থানের সাক্ষী থাকবে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে সেই বৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়াবে ৬.৮ শতাংশ। তা সত্ত্বেও কোভিত-পূর্ববর্তী সময়ের থেকে অবস্থার তেমন উন্নতি হচ্ছে না। সেই সময় এমনিতেও অর্থনীতির গতি শ্লথ ছিল। অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকার অর্থনীতির চাকা অনেকটা গতিশীল হয়েছে বলে দাবি করলেও এখনও পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নয়। তাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণা করা হতে পারে। দিনকয়েক আগেই সেরকম ইঙ্গিত দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি জানিয়েছিলেন, গত কয়েক মাসে কেন্দ্র যে আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণা করেছে, তার রেশ হিসেবেই আগামী অর্থবর্ষের বাজেটকে ধরা হবে।
তারইমধ্যে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের জনস্বাস্থ্যের উপর জোর দেওয়া হতে পারে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, করোনা পরিস্থিতি আপাতত অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় যে প্রচুর ফাঁকফোকর আছে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে মহামারী। অর্থনৈতিক সমীক্ষায় স্বাস্থ্যখাতে খরচের মাত্রা এক শতাংশ থেকে বাড়িয়ে জিডিপির ২.৫-৩ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ‘পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়া’-র প্রতিষ্ঠাতা কে শ্রীনাথ রেড্ডি বলেন, ‘শুধু স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থার মোকাবিলা নয়, সবাইয়ের কাছে দক্ষ এবং ন্যায্যভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য কেন্দ্র এবং রাজ্যস্তরে স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য পরিষেবায় প্রভাবের বিষয়ে আমরা যদি চিন্তিত হই, তাহলে আগামী দু'তিন বছরে স্বাস্থ্যখাতে খরচের পরিমাণ বাড়িয়ে জিডিপির ২.৫ শতাংশ করতে হবে।’
একইসঙ্গে আবাসন শিল্পকে চাঙ্গা করার জন্য নিয়মকানুন ছাড় দিতে পারেন সীতারামন। মহামারীর সময় যে ক্ষেত্র বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেক্ষেত্রে থমকে থাকা কাজকর্ম শেষ করা যাবে। বাড়ি বিক্রি বাড়বে। তাতে চাঙ্গা হবে অর্থনীতি। রাহেজা ডেভেলপারের চেয়ারম্যান নবীন রাহেজা সংবাদসংস্থা এএনআইকে বলেছেন, ‘সাধারণত মানুষ নিজেদের গচ্ছিত অর্থের এক-তৃতীয়াংশ আবাসন ক্ষেত্রে ঢালেন। বাড়তি নিয়মকানুন এবং থমকে যাওয়া প্রকল্পের কারণে মূলত ধুঁকছে আবাসন ক্ষেত্র। তার ফলে প্রকল্প শেষ হতে দেরি হচ্ছে। ঋণের সমস্যা হচ্ছে। যদিও অনলাইনে সরকার কাজকর্ম শুরু করলেও অনুমোদনের জন্য এখনও ৫০ টি দফতরের কাছে ঘুরতে হয়। এই বিষয়টির উপর নজর দেওয়া উচিত। (থমকে থাকা) প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য অতীতের ঋণের কাঠামো করা উচিত।’