অন্ধ পিতা-মাতার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন শ্রাবণ কুমার। এক মামলার পর্যবক্ষণে সেই গল্পকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বৃদ্ধ পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব বোধের কথা স্মরণ করাল এলাহাবাদ হাইকোর্ট।
মামলায় বিচারপতি মহেশচন্দ্র ত্রিপাঠী এবং প্রশান্ত কুমার বলেন, বৃদ্ধ বাবা-মা তাঁদের কষ্টর্জিত সম্পত্তি এমন সময় সন্তানদের হাতে তুলে দেন যখন তাঁর উপার্জনের ক্ষমতা থাকে না, তখন সন্তানের নৈতিক ও আইনগত দায়িত্ব বাবা-মার দেখাশুনা করা।
আদালত বলে, 'আমাদের দেশ সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও নৈতিকতার দেশ। এখানে শ্রাবণ কুমার অন্ধ পিতামাতার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ভারতীয় সমাজের ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ প্রবীণদের যত্ন নেওয়ার উপর জোর দেয়। আমাদের সমাজে পিতামাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্বকে ঋণ হিসাবে দেখা হয়।'
আদালতের আরও উল্লেখ করেছে, পিতামাতার যত্ন নেওযা বাধ্যবাধকতা শুধু মাত্র মূল্যবোধে উপর নির্ভর করে না। এই দায়িত্ব পিতামাতা এবং প্রবীণ নাগরিকদের রক্ষণাবেক্ষণ এবং কল্যাণমূলক আইন ২০০৭ দ্বারা রক্ষিতও বটে।
(পড়তে পারেন। দেশের নাম বিতর্কে নয়া মোড়, স্কুলের বই থেকে 'ইন্ডিয়া' মুছে ফেলার সুপারিশ NCERT-র)
এই আইন অনুযায়ী সন্তানরা তাঁদের বৃদ্ধ পিতামাতার দেখাশোনা এবং বৃদ্ধ বয়েসে তাদের প্রাপ্ত সম্মান পেতে বাধ্য করে। আদালত উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, সন্তানরা তাদের সম্পত্তি পেয়ে যাওয়া পর বৃদ্ধ বাবা-মাকে পরিত্যাগ করে।
আদালত বলে, 'বৃদ্ধ বয়েসে শারীরিক দুর্বলতা ছাড়া ও নানা রকম মানসিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। এই দুর্বলতার কারণে, তাঁরা তাঁদের সন্তানদের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায় যে পিতামাতার সম্পত্তি পাওয়ার পর সন্তানরা তাঁদের বৃদ্ধ পিতামাতাকে পরিত্যাগ করে।'
আবেদনকারী ছভিনাথ নামে ৮৫ বছর বয়সি এক ব্যক্তির দায়ের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের এই পর্যবেক্ষণ। তাঁর অভিযোগ, সন্তানরা তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন। তিনি তাঁর ছেলেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
তিনি আদালতে জানান, ইতিমধ্যেই প্রয়াগরাজের সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তাঁর অভিযোগ নিস্পত্তির জন্য একটি আবেদন জমা দিয়েছেন।
আদালত সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটকে এ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এই প্রক্রিয়া ছয় সপ্তাহের মধ্যে শেষ করতে হবে, আদালত জানিয়েছে।