গৃহিনীরা কোনও কাজ করেন না বা বাড়ির অর্থনৈতিক দিকে তাঁদের কোনও অবদান নেই - এমন ধারণা ‘সমস্যার’। তা অতিক্রম করতে হবে। একটি গাড়ি দুর্ঘটনার মামলায় এমনই পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের।
বিচারপতি এনভি রামান্নার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চের মতে, যাঁরা সংসার সামলান, তাঁদের কঠোর পরিশ্রমকে আর্থিক মাপকাঠিতে নির্ধারণ করার বিষয়টি অবশ্যই জটিল। কিন্তু তা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ২০১১ সালের আদমশুমারি উল্লেখ করে বিচারপতি রামান্না জানান, ভারতে সংসার সামলানোর কাজে যুক্ত আছেন প্রায় ১৫৯.৮৫ মিলিয়ন মহিলা। সেখানে পুরুষের সংখ্যা মাত্র ৫.৭৯ মিলিয়ন।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, বাড়ির লোকেদের জন্য বিনা পয়সায় গড়ে দিনে ২৯৯ মিনিট সংসারের কাজ করেন মহিলারা। তিনি খাবার তৈরি করেন, মুদিখানার জিনিসপত্র দেখভাল করেন, ঘর পরিষ্কার করেন, বাড়ির বাহ্যিক সজ্জার উপর নজর রাখেন, বাড়ির শিশু ও বয়স্ক মানুষদের দেখভাল করার মতো বিভিন্ন কাজ করেন। আর সেই কাজগুলিতে পুরুষদের দৈনিক গড় সময় মাত্র ৯৭ মিনিটেই থমকে আছে। বিচারপতি রামান্না বলেন, ‘উপরোক্ত সব বিষয়গুলি সত্ত্বেও বহু বছর ধরে ধারণা চলে আসছে যে যাঁরা সংসার চালান, তাঁরা কোনও কাজ করেন না বা অর্থনৈতিক দিক থেকে তাঁদের কোনও যোগদান নেই। এটা সমস্যামূলক চিন্তাভাবনা এবং তা অবশ্যই অতিক্রম করতে হবে।’
একটি গাড়ি দুর্ঘটনার মামলায় সেই মত দিয়েছে শীর্ষ আদালত। ২০১৪ সালের এপ্রিলে যে গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল পুনম (তিনি গৃহিনী ছিলেন) এবং তাঁর স্বামী বিনোদের। ‘মোটর অ্যাক্সিডেন্ট ক্লেম ট্রাইবুনাল’-এর তরফে দম্পতির দুই মেয়েকে ৪০.৭ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিমা সংস্থার আর্জিতে সেই অঙ্কটা কমিয়ে ২২ লাখ টাকা করেছিল দিল্লি হাইকোর্ট।
তবে সর্বসম্মতভাবে আর্থিক অনুদানের অঙ্ক বাড়িয়ে ৩৩.২ লাখ টাকা করার নির্দেশ দিয়েছে তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, সংসার সামলানোর কাছে কত মহিলা যুক্ত আছেন, সেই বিষয়টি মাথায় রেখে তাঁদের আয়ের হিসাব করতে হবে। একইসঙ্গে তাঁদের শ্রম, পরিষেবার বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। যাঁরা সংসার সামলান, তাঁরা যে কাজ করেন, তা বাড়ির অর্থনৈতিক অবস্থা এবং দেশের অর্থনীতির উপর প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব ফেলে। ব্যক্তিগত সামাজিক সাম্য এবং মর্যাদার ক্ষেত্রে সাংবিধানিক লক্ষ্যপূরণ এবং সমাজের পরিবর্তিত মনোভাবে সেই বিষয়টি ফুটিয়ে তুলতে হবে।