ফ্রান্স থেকে গতকাল সকালেই মুম্বই এসে পৌঁছান ২৭৬ জন ভারতীয়। বিমানে করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে মধ্য আমেরিকায় যাচ্ছিলেন তাঁরা। সেই সময় ফ্রান্সে বিমানটিকে আটকানো হয়েছিল কয়েকদিন আগে। এই আবহে ভ্রমণের বৈধ নথিপত্র না থাকায় দেশে ফিরতে হয়েছে সেই ২৭৬ ভারতীয়কে। আর দেশে ফিরতেই বিমানবন্দরে সিআইএসএফ-এর জেরার মুখে পড়েন এই যাত্রীরা। পরে একে একে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এদিকে এই উড়ানের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে সাংবাদিকরা কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন যাত্রীদের সঙ্গে। তবে ক্যামেরা ও সাংবাদিকদের বুম দেখেই প্রত্যেকেই মুখ লুকিয়ে ফেলেন। এড়িয়ে যান সংবাদমাধ্যমকে। এরই মাঝে এবার মুখ খুললেন চার্টার্ড বিমান সংস্থার আইনজীবী। তা থেকে এই ডাঙ্কি উড়ানের রহস্যের ওপর থেকে পর্দা অনেকটা উঠেছে। (আরও পড়ুন: এবার ট্রেনে করে মাত্র ১০ ঘণ্টাতেই হাওড়া থেকে যাওয়া যাবে দিল্লিতে!)
আরও পড়ুন: কলকাতা থেকে নয়া রুটে চালু বিমান পরিষেবা, 'স্পন্সর' হল সরকার, ভাড়া মাত্র ১৯৯৯
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই ফ্রান্সের ভাট্রি বিমানবন্দরে আটকানো হয়েছিল একটি বিমান। সন্দেহ করা হচ্ছিল, সেই বিমানে করে মানব পাচার করা হচ্ছে। তাতে ছিলেন ৩০৩ জন ভারতীয়। এই আবহে রবিবার এই মামলায় ফরাসি আদালত নির্দেশ দেয়, বিমানে থাকা ভারতীয়রা ফ্রান্স ছাড়তে পারবেন। এদিকে আটক করা বিমানটিকেও ফ্রান্স ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়। এই আবহে জানা যায়, ফ্রান্সে আটক হওয়া সেই বিমানটি অধিকাংশ ভারতীয়দের নিয়ে সোমবারই মুম্বইয়ের উদ্দেশে রওনা দেবে। এই আবহে ফরাসি সময়ে দুপুর আড়াইটে নাগা ভাট্রি বিমানবন্দর থেকে সেটি উড়ে যায় আকাশে। আর আজ ভোর ৪টে নাগাদ মুম্বই বিমানবন্দরে এসে অবতরণ করে সেটি। এদিকে বিমানটিতে ৩০৩ ভারতীয় ফ্রান্সে আটকে পড়লেও সেখান থেকে দেশে ফিরেছেন মাত্র ২৭৬ জন। বাকিরা ফ্রান্সেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রিপোর্ট অনুযায়ী, যে বিমানে করে এই ভারতীয়দের মধ্য আমেরিকার দেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেটি এ৩৪০। রোমানিয়ার 'লেজেন্ড এয়ারলাইন্স' নামক সংস্থার দ্বারা বিমানটি পরিচালিত হয়। অবশেষে সেই বিমানে করেই ভারতীয়দের ফ্রান্স থেকে মুম্বইতে নিয়ে আসা হয়। রিপোর্ট অনুযায়ী, ফ্রান্সের ভাট্রি বিমানবন্দরে জ্বালানি ভরাতে নেমেছিল রোমানিয়ার বিমানটি। সেই সময় গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বিমানটিকে আটকেছিল ফরাসি পুলিশ। জানা যায়, সেই বিমানে থাকা ৩০৩ জন ভারতীয় সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতেই ছিলেন বিগত কয়েক সপ্তাহ। সেখান থেকেই নিকারাগুয়ার এই বিমানে চাপানো হয়েছিল তাদের। সেখান থেকে আমেরিকা বা কানাডায় এই ভারতীয়রা চোরা পথে যাওয়ার চেষ্টা করতেন বলে অনুমান করা হচ্ছে।
এই আবহে বিমান সংস্থার আইনজীবী লিলিয়ানা বাকায়োকো জানান, নিকারাগুয়ার ঘুরতে যাওয়ার নাম করেই টিকিট কেটেছিলেন এই ভারতীয়রা। এই আবহে মানব পাচারের সঙ্গে যোগ থাকার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভাবে অস্বীকার করে উড়ান সংস্থার আইনজীবী। তিনি দাবি করেন, নিকারাগুয়াতে হোটেল বুকিং ছিল এই যাত্রীদের। তাঁদের রিটার্ন টিকিট কাটা ছিল। আর তাই তাঁদেরকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা ছিল না সেই বিমানের। এদিকে এই বিমানটি ভাড়া করেছিল একটি 'অ-ইউরোপীয়' দেশের সংস্থা। তবে সেই সংস্থা ভারতের কি না, তা নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ উড়ান সংস্থার আইনজীবী। এই বিমানে ওঠা সব যাত্রীই গত দুই মাসে দুবাইতে পৌঁছেছিলেন ওয়ার্ক বা টুরিস্ট ভিসাতে। তবে কেন এই বিমানটি দুবাই বা নিকারাগুয়া না গিয়ে মুম্বইতে এল? আইনজীবী জানান, ফ্রন্সের ঘটনার পর নিকারাগুয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরশাহি হয়ত এই বিনানযাত্রীদের নিজেদের দেশে ঢুকতে দিতে চায়নি। তবে ভারত তাঁদের সাহায্য করতে আগ্রহী ছিল, তাই এখানেই তাঁদের নিয়ে আসা হয়।
এদিকে রিপোর্ট অনুযায়ী বিমানের যাত্রীদের অধিকাংশই গুজরাট এবং পঞ্জাবের। এর মধ্যে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সি যাত্রীর সংখ্যা ছিল ১৫০। আর ৭০ জন যাত্রীর বয়স ছিল ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এই আবহে যাত্রীরা কার মাধ্যমে এই বিমানের টিকিট কাটিয়েছিল। এই ডাঙ্কি উড়ানের নেপথ্যে কে আছে, তা খুঁজে বের করতে গুজরাট পুলিশ ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে।