আর্থিক বৃদ্ধির হার যে মুখ থুবড়ে পড়বে, তা প্রত্যাশিতই ছিল। শুধু প্রশ্নটা ছিল, জিডিপি সংকোচনের মাত্রা কতটা হবে। সোমবার বিকেলে সেই প্রত্যাশার মাত্রাও ছাড়িয়ে গেল। কেন্দ্রের পরিসংখ্যান মন্ত্রকের তথ্যে স্পষ্ট হল, চলতি আর্থিক বছরের প্রথম তিন মাসে আর্থিক বৃদ্ধির হার পড়েছে ২৩.৯ শতাংশ। অর্থাৎ ১৯৯৬ সাল থেকে ত্রৈমাসিক পরিসংখ্যান প্রকাশের ধারা শুরুর পর থেকে এবারই জিডিপি সর্বাধিক সংঙ্কুচিত হল।
ভারতে সেভাবে করোনাভাইরাস প্রকোপ শুরুর আগেই জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ৩.১ শতাংশ। যা কমপক্ষে আট বছরে সর্বনিম্ন ছিল। গত অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসের পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট ছিল, মানুষের ব্যয়ের মাত্রা শ্লথ হচ্ছে। বেসরকারি বিনিয়োগ এবং রফতানিও কমছে। সেই অর্থবর্ষে প্রকৃত আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ৪.২ শতাংশ। যা ২০১২-১৩ সাল থেকে শুরু হওয়া সিরিজের দুর্বলতম জায়গা ছিল। আর পরের তিন মাসে সেই ছবিটা আরও শোচনীয় হয়েছে। যে তিন মাসের বেশিরভাগ সময়ে করোনাভাইরাসের প্রকোপের জেরে দেশজুড়ে লকডাউন চলছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার সংক্রমণ রুখতে গত ২৫ মার্চ থেকে দেশব্যাপী ৬৮ দিনের লকডাউনের জেরে অর্থনীতি সংকুচিত হওয়া নিশ্চিত ছিল। একই কথা বলেছেন মুখ্য অর্থনৈতিক উপজেষ্টা কে ভি সুব্রমনিয়াম। সংবাদসংস্থা পিটিআইকে তিনি জানিয়েছেন, প্রথম ত্রৈমাসিকে অর্থনীতির পারফরম্যান্স 'প্রাথমিকভাবে একটি বহিরাগত ধাক্কা দ্বারা চালিত হয়েছে। যা সারাবিশ্বে অনুভূত হয়েছে।' কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন অবশ্য আগেভাগেই সতর্ক করেছেন, ‘দৈবপাকে’ (অ্যাক্ট অফ গড) চলতি অর্থবর্ষে অর্থনীতি সংকুচিত হতে পারে।
তবে শুধু ভারত নয়, করোনার প্রকোপে ধসে পড়েছে মার্কিন অর্থনীতিও। এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে বার্ষিক ৩২.৯ শতাংশ কমেছে আর্থিক বৃদ্ধির হার। যা সর্বাধিক পতনের রেকর্ড গড়েছে। একইভাবে জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে (তখন চিনের করোনার দাপট সবথেকে বেশি ছিল) চিনের অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছিল। অন্যদিকে, এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে প্রত্যাশার তুলনায় কম তথা ৮.৫ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে রাশিয়ার অর্থনীতি।
তবে অর্থনীতির সেই বেহাল দশার মধ্যে কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছে একমাত্র কৃষি। যা চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে ৩.৪ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া উৎপাদন শিল্প ৩৯.৩ শতাংশ, নির্মাণ ক্ষেত্র ৫০.৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে।
এই পরিস্থিতি থেকে এখনই মুক্তি মিলবে না বলে মত সংশ্লিষ্ট মহলের। অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য, ভারতের ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তাও খুব একটা সহজ নয় বলেই মনে হচ্ছে। আগামী বছরের আগে আর্থিক বৃদ্ধির হার ঘুরে দাঁড়ানোর তেমন সম্ভাবনাও নেই। মূলত লকডাউনের বিধিনিষেধ শিখিলের জন্য ঘরোয়া চাহিদা বৃদ্ধি এবং উৎপাদন ও পরিষেবা ক্ষেত্রে গ্রাফ উর্ধ্বমুখী হওয়ার উপর ভিত্তি করেই তখন কিছুটা ছন্দে ফিরবে অর্থনীতি।