ভারত থেকে বাংলাদেশে যাবেন? বাংলাদেশ থেকে শ্রীলঙ্কায় যাবেন? ভারত থেকে মায়ানমারে যাবেন? বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিষয়ক জোট বিমস্টেকের সদস্য দেশগুলির (ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, নেপাল এবং ভুটান) মধ্যে যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভিসা বা অন্যান্য নিয়মকানুনের মারপ্যাঁচ কমানোর পক্ষে সওয়াল করলেন শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি রনিল বিক্রমসিংহে। তাঁর মতে, বিমস্টেকের সদস্যভুক্ত দেশগুলিকে একটি পর্যটনক্ষেত্র হিসেবেই বিবেচনা করা উচিত। তাতে পর্যটকদের ঝক্কি কমবে। বিশেষত যাঁরা এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চল বা এশিয়ার বাইরে থেকে আসেন, তাঁরা সহজেই বিমস্টেকের সদস্যভুক্ত সাতটি দেশে ঘুরতে পারবেন। তাতে সাতটি দেশের পর্যটন শিল্পে নয়া জোয়ার আসবে বলে আশাপ্রকাশ করেন শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি।
শুক্রবার কলম্বোয় ভারতের অন্যতম পর্যটন সংক্রান্ত সমিতি 'ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া'-র ৬৭তম বার্ষিক সম্মেলনে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট জানান, আগামী ১০ বছরে মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাবে। তাই মানুষ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাবেন। তিনি বলেন, ‘সেই পরিস্থিতিতে কেন আমাদের পুরো বিমস্টেক অঞ্চলকে সীমান্তহীন পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হবে না। সেটাই তো সকলে চান…(কোনওরকম ঝক্কি ছাড়াই) সীমান্ত পেরিয়ে যেতে চান (সকলে)।’ তিনি আরও জানান, শ্রীলঙ্কার মানুষ ভারতে যাচ্ছেন। ভারতীয়রা যাচ্ছেন বাংলাদেশে। কিন্তু বাইরে থেকে যাঁরা আসছেন, তাঁদের কাছে এটি একটিই পর্যটনের জায়গা।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘আগামী ১০ বছরে আমাদের একটি নয়া শিল্প গড়ে উঠবে। তাই আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করে তুলতে হবে। আমার মতে, বিমস্টেককে একটি বৃহত্তর পর্যটন ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তোলা উচিত। আমরা কেন বিমস্টেককে উন্মুক্ত করে দিচ্ছি না? কেন সকলের জন্য খুলে দিচ্ছি না? কেন ক্রুজের জন্য আমরা বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করছি না?’
তবে সেটা কীভাবে হবে, তা বিস্তারিতভাবে জানাননি শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট যে মডেলের কথা বলতে চেয়েছেন, যে মডেলের মাধ্যমে এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চল বা এশিয়ার বাইরে থেকে যাঁরা আসছেন, তাঁরা একটি ভিসায় ওই সাতটি দেশে ঘুরতে পারবেন। যা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যভুক্ত দেশগুলিতে হয়। ভারত থেকে যদি কোনও ব্যক্তি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত কোনও দেশে যান, তাহলে একটি ভিসায় তিনি ওইসব দেশগুলিতে ঘুরতে পারবেন।
কিন্তু যাঁরা ওই সাতটি দেশে বাস করেন, তাঁরাও একটি সাধারণ ভিসায় বাকি ছ'টি দেশে ঘুরতে পারবেন? সেই বিষয়টিও শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট স্পষ্টভাবে জানাননি। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, সেক্ষেত্রে হয়ত কোনও ভিসা লাগবে না। শুধু পাসপোর্ট থাকলেই হবে। এখন যেমন ভারত থেকে নেপাল বা ভুটান যাওয়ার ক্ষেত্রে ভিসা লাগে না। চেকিংয়ের পর সীমান্ত পার হওয়ার অনুমতি পাওয়া যায়। শ্রীলঙ্কার প্রস্তাবিত মডেল যদি কার্যকর হয়, তাহলে বিমস্টেকের অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও সেই বিষয়টি চালু করা হতে পারে।
তবে কেন সেই মডেল কার্যকর করার উপর জোর দিচ্ছেন শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি তথা অর্থমন্ত্রী রনিল? যে কারণ তিনি নিজেই কিছুটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা পর্যটনকে নয়া রূপ প্রদানের চেষ্টা করছি এবং পর্যটনের ক্ষেত্রে যে সম্ভাবনা আছে, তার সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা করছি। আমরা শ্রীলঙ্কায় ঋণখেলাপির মুখে পড়েছিলাম। সেই পরিস্থিতির মধ্যে থেকে আমরা বেরিয়ে আসছি। ঋণের বিভিন্ন শর্ত লাঘবের প্রক্রিয়া চলছে। তবে এটা মাথায় রাখতে হবে, যেভাবে বাণিজ্য চলছে, সেটা এখনও আমাদের পক্ষে নেই। তাই আগামিদিনে যাতে বাণিজ্যের ইতিবাচক ভারসাম্য (আমদানি এবং রফতানির মধ্যে ভারসাম্য) বজায় রাখা যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে।’