স্কুল মহারাষ্ট্রের সোলাপুরে। সেখানের জ্ঞানপ্রবধিনী স্কুলের শিক্ষক অনন্ত আলিশে বলছেন, ‘আমি যখন পড়ুয়াদের নিয়ে ফিরছিলাম, তখন আমাদের সামনে চুরাচাঁদপুরে একদল জনতা ভিড় করে তেড়ে আসে। আমাদের রাস্তা আটকে নিয়েছিল তারা। জিজ্ঞাসা করেছিল কোথায় যাচ্ছি শিশুদের নিয়ে। শেষমেশ পড়ুয়ারা তাদের স্থানীয় ভাষায় জানিয়েছিল যে , আমি তাঁদের শিক্ষক, আর তাদের নিয়ে ফিরছি মহারাষ্ট্রের স্কুলে।’ অশান্ত মণিপুরের হাড়হিম করা পরিস্থিতির মধ্যে পড়ুয়াদের কোনমতে মণিপুর থেকে নিয়ে মহারাষ্ট্রে আসেন শিক্ষক অনন্ত। হাড়হিম করা সেই কাহিনি জানালেন তিনি।
স্কুলের গরমের ছুটির পর মণিপুরে এপ্রিল মাসে পড়ুয়াদের পৌঁছতে যান শিক্ষক অনন্ত। এদিকে, কয়েকদিন পরই সেখানে ব্যাপক দাঙ্গা বাঁধে। ততদিনে মহারাষ্ট্রে ফিরেও এসেছিলেন অনন্ত। মণিপুরে দাঙ্গার সময়ই তিনি পৌঁছে যান মণিপুরে। সেখান থেকে পড়ুয়াদের ফিরিয়ে আনতে যান অনন্ত। উল্লেখ্য, জ্ঞানপ্রবধিনী স্কুলের মধ্য দিয়ে দেশর প্রত্যন্ত এলাকার পড়ুয়াদের শিক্ষা দেওয়া হয়। সেই উদ্যোগের আওতায় বিশেষ যত্ন নেওয়া হয় সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার পড়ুয়াদের। এই উদ্যোগের আওতায় ২০২২ সালে তিন মাস ধরে মণিপুরের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে পড়ুয়াদের এই স্কুলে ভর্তি করার বিষয়ে এলাকার মানুষের আস্থা অর্জন করেন অনন্ত। তাঁর হাত ধরে এলাকার শিশুরা তাঁর সঙ্গে মহারাষ্ট্রের ওই স্কুলে গিয়ে পড়ে। মণিপুর থেকে অনন্তের কাছে মোচ ১৪ জন পড়ুয়া জ্ঞানপ্রধিনী স্কুলে পড়ে। কারোর সপ্তম শ্রেণি, কারোর পঞ্চম শ্রেণি কেউবা ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া। পঠনপাঠনের সঙ্গে, কম্পিউটার, কম্পিউটার কোডিংয়ে আলাদা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ওই স্কুলে।
অনন্ত বলছেন, ‘দাঙ্গা কবলিত এলাকা চুরাচাঁদপুরে আমাদের স্কুলের চার শিক্ষার্থী আটকা পড়ে। প্রাথমিক আতঙ্কের পর অভিভাবকরা সন্তানদের সেই অবস্থা থেকে বের করে পড়ালেখায় ফেরাতে চেয়েছিলেন। ’ দাঙ্গার সময় পার করে মণিপুরে যখন ইন্টারনেট ফিরেছে, তখন এই পড়ুয়াদের ফেরত নিয়ে যাওয়ার জন্য স্কুলের কাছে আর্জি জানান অভিভাবকরা। তখন ৪ জনকে ফিরিয়ে আনতে মণিপুর যান অনন্ত। তবে ইম্ফল দিয়ে নয়, বরং মিজোরাম দিয়ে তিনি দাঙ্গা বিধ্বস্ত মণিপুরে প্রবেশ করেন তিনি। অনন্ত বলছেন, শেষমেশ তাঁর ১৪ জন পড়ুয়াকে নিয়ে তিনি মহারাষ্ট্রে ৫ জুলাই ফিরেছিলেন। সোলাপুরে গিয়ে পড়ুয়ারা স্বাভাবিক জীবনে রয়েছেন বলে জানান অনন্ত। এদিকে, পড়ুয়াদের অভিভাবকরাও মণিপুরে নিশ্চিন্ত রয়েছেন সন্তানের বিষয়ে।
উল্লেখ্য, সদ্য কওক্তা ও চুরাচাঁদপুরে একাধিক হিংসার ঘটনার জেরে ১০ কম্পানি বাড়তি সেনা বহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইম্ফল পূর্ব ও পশ্চিমে জারি হয়েছে কার্ফু। দশটি কোম্পানির মধ্যে, সিআরপিএফের পাঁচটি, বিএসফের-এর তিনটি, এবং এসএসবি এবং আইটিবিপির একটি করে - শনিবার সন্ধ্যায় মণিপুরে পৌঁছেছে।