কয়েকদিন আগেই বেঙ্গালুরুর এক জনপ্রিয় ক্যাফে কেঁপে উঠেছিল ভয়াবহ বিস্ফোরণে। সেই বিস্ফোরণ নিয়ে গতকাল বেফাঁস মন্তব্য করে বসেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তিনি বলেন, 'তামিলনাড়ু থেকে কেউ এসে এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে'। পরে এই নিয়ে ডিএমকে সহ তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক দলগুলি এবং বিরোধীরা সুর চড়ায়। চাপের মুখে গতরাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষমা চেয়ে নিজের মন্তব্য 'ফিরিয়ে নেন' মন্ত্রী। উল্লেখ্য, গতকাল বেঙ্গালুরু বিস্ফোরণ নিয়ে সংবাদসংস্থা এএনআই-কে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা শোভা করন্দলাজে বলেন, 'পুলিশ বলেছিল যে আমরা নমাজ শেষ হলে তবেই যেতে পারব... আমি সিদ্দারামাইয়াকে জিজ্ঞেস করতে চাই এখানে কার সরকার চলছে। হিন্দুরা কি আপনাকে ভোট দেয়নি?... এখানে প্রতিনিয়ত হিন্দুদের অপমান চলছে। এক ব্যক্তি তামিলনাড়ু থেকে এসে একটি ক্যাফেতে বোমা পুঁতেছে। আরেক ব্যক্তি দিল্লি থেকে এসে বিধান সৌধে পাক-পন্থী স্লোগান দিচ্ছেন। অন্য একজন কেরল থেকে এসে কলেজ ছাত্রদের ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ করছে। দোকানে হনুমান চালিসা শুনছিল বলে মারধর করা হচ্ছে। আমি এইমাত্র একটি ভিডিও দেখলাম যেখানে তারা আরটি নগরে খোলা তলোয়ার নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোনও ব্যবস্থা নেই। এই সরকার সংখ্যালঘুদের রক্ষা করছে এবং এটি হিন্দু বিরোধী। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ এবং আমরা কর্ণাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বরের পদত্যাগ দাবি করছি... আমরা লড়াই চালিয়ে যাব...।' (আরও পড়ুন: UP-তে বাড়িতে ঢুকে কুড়ুলের কোপে খুন ২ শিশুকে, পরে এনকাউন্টারে খতম দুষ্কৃতী)
আরও পড়ুন: বাংলার হেভিয়েট মন্ত্রী অরূপের ভাই স্বরূপের বাড়িতে আয়কর হানা, ভোর থেকে তল্লাশি
তাঁর এই মন্তব্য ঘিরেই বিতর্ক তৈরি হয়। ডিএমকে এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ফের একবার বিজেপিকে 'তামিল বিরোধী' আখ্যা দিয়েছে। এই আবহে চাপে পড়ে গতকাল রাতের দিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষমা চেয়ে নেন শোভা করন্দলাজে। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ পোস্ট করে তিনি লেখেন, 'আমার তামিল ভাই-বোনেদের উদ্দেশে, আমি স্পষ্ট করতে চাই, আমি বর্তমান পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করার জন্যই ওই মন্তব্য করেছিলাম, ছায়া ফেলার জন্যে নয়। তবুও আমি দেখতে পাচ্ছি যে আমার মন্তব্য কারও কারও মনে কষ্ট দিয়েছে - এবং তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমার মন্তব্য শুধুমাত্র রামেশ্বরম ক্যাফে বিস্ফোরণের সাথে জড়িত ব্যক্তিকে নিয়ে ছিল। তারে কৃষ্ণগিরি বনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। তামিলনাড়ুতে যারা আমার এই মন্তব্যে কষ্ট পেয়েছেন, আমার হৃদয়ের গভীর থেকে আমি তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। উপরন্তু, আমি আমার আগের মন্তব্য প্রত্যাহার করছি।' এদিকে মন্ত্রীর এহেন ক্ষমাপ্রার্থনার পর ডিএমকে ফের তোপ দাগে এবং বলে, ‘অনিচ্ছাসত্ত্বেও তিনি ক্ষমা চেয়েছেন।’ (আরও পড়ুন: 'তারিখ পে তারিখ', DA মামলার পরের শুনানি কবে? এল আপডেট, মাথায় হাত সরকারি কর্মীদের)
আরও পড়ুন: লোকসভা ভোটের জন্য বদলে গেল UPSC প্রিলিমসের তারিখ, এখন কবে হবে পরীক্ষা?
উল্লেখ্য, গত ১ মার্চ দুপুর ১২টা ৫০ মিনিট ও ১টার মাঝে কোনও এক সময়ে বেঙ্গালুরুর হোয়াইটফিল্ড এলাকায় অবস্থিত জনপ্রিয় একটি ক্যাফেতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছিল বেলার দিকে। সেই বিস্ফোরণে অন্তত ১০ জন জখম হয়েছিলেন। সেই বিস্ফোরণের সঙ্গে যুক্ত থাকা সন্দেহে এক অভিযুক্তকে আটকও করেছে এনআইএ। কর্ণাটকের বেল্লারি জেলা থেকে আটক করে এনআইএ। ধৃতের নাম ছিল শব্বির। এর আগে বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ। তখন তদন্তকারীরা এই যুবকের সন্দেহভাজন গতিবিধি লক্ষ্য করে। টুপি পরিহিত সেই যুবককে ব্যাগ হাতে ক্যাফেতে প্রবেশ করতে দেখা গিয়েছিল। কিছুক্ষণ সেখানে থেকে ক্যাফের মধ্যেই নিজের কাঁধের ব্যাগটি রেখে বেরিয়ে যেতে দেখা যায় সেই যুবককে। সেই সন্দেহভাজনের সঙ্গে আরও একজনের কথাবার্তা হয়েছিল বলে জানতে পারে পুলিশ। সেই ব্যক্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। এদিকে যে মূল অভিযুক্তকে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে পুলিশ চিহ্নিত করেছে, তার মুখ ঢাকা ছিল। টুপি, মাস্ক, চোখে চশমার জেরে মুখ ঠিক ভাবে দেখা যায়নি ভিডিয়োতে। তাঁকে এক প্লেট ইডলি হাতে ক্যাফেতে ঘুরতে দেখা গিয়েছিল। পরে শহরের আরও সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বিভিন্ন জায়গায় সেই যুবককে চিহ্নিত করা হয়। এই আবহে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অভিযোগ করেন, শব্বির তামিলনাড়ুর কৃষ্ণগিরি জঙ্গলে জঙ্গি হামলার প্রশিক্ষণ নিয়েছে। যা নিয়ে জোর রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে দক্ষিণ ভারতে।