সপ্তাহ খানেক আগেই এএফসি কাপের ম্যাচে ঘরের মাঠে ওড়িশা এফসি-র কাছে পাঁচ গোল হজম করতে হয়েছিল। ২-৫ গোলে হেরেই টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে গিয়েছে মোহনবাগান। সেই ক্ষত এখনও দগদগে হয়ে রয়েছে। বুধবার ফের সেই যুবভারতীতেই ওড়িশার মুখোমুখি হতে চলেছে জুয়ান ফেরান্দোর টিম।
এবার মঞ্চ আলাদা, লড়াইয়ের গল্পও ভিন্ন। তবে প্রতিশোধের আগুন সব মঞ্চইেই একই থাকে। সেটা দাউদাউ করে জ্বলে। আইএসএলে কিন্তু কখনও মোহনবাগানকে হারাতে পারেনি ওড়িশা। গত তিন মরশুমে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে মোট সাত বার। তার মধ্যে চার বার জিতেছে কলকাতার দলটিই। বাকি তিন ম্যাচ ড্র হয়েছে। এবারও ওড়িশাকে হারিয়ে বদলা পূরণ করতে পারবে বাগান ব্রিগেড?
ফেরান্দো আবার বদলার মানসিকতায় বিশ্বাসী নন। তবে নিজেদের বদলে খেলায় উন্নতি করাই তাঁর আসল লক্ষ্য। সেই সঙ্গে আইএসএলে জয়ের ধারা তিনি ধরে রাখতে চান।
মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে বাগান কোচ ফেরান্দো বলেছেন, ‘বদলার কথা ভাবছিই না। আমাদের সামনে একটা ম্যাচ। দ্রুত তার জন্য তৈরি হতে হবে আমাদের। শনিবার হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে খেলে রবিবার ফিরেছি আমরা। তার পরে হাতে দু'দিন ছিল তৈরি হওয়ার জন্য। এখনও আমাদের সামনে ২২টা ম্যাচ আছে। এই ম্যাচগুলোতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ সব নিয়ে ভাবছি না। খেলায় হার-জিত আছে। যা হয়ে গিয়েছে, সেগুলো অতীত। সেগুলো আর বদলানো সম্ভব না। আরও ভাল খেলা এবং জেতাই লক্ষ্য আমাদের। এর বেশি কিছু না।’
ওড়িশাকে হারাতে বিশেষ কোনও পরিকল্পনা রয়েছে? ফেরান্দো অবশ্য দাবি করেছেন, ‘আমাদের সেই কাজগুলোই করতে হবে, যা আমি সব সময়েই বলে থাকি। বল নিয়ন্ত্রণে রাখো, জায়গা তৈরি করো। এর চেয়ে বেশি বিশেষ কিছু করার নেই। অবশ্যই এটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। ঘরের মাঠে ম্যাচ হলে তো গুরুত্বপূর্ণ হবেই। তবে বেশি আগ্রাসন বা অনেক পরিবর্তন কোনওটারই দরকার নেই। এএফসি কাপের ম্যাচে কী হয়েছিল, তা আগেও বলেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য বুধবারের আইএসএল ম্যাচে জেতা ও তিন পয়েন্ট অর্জন করা।’
শনিবার আইএসএলের ম্যাচে হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে ৮৫ মিনিট পর্যন্ত গোলশূন্য থাকার পর শেষ এগারো মিনিটে (বাড়তি সময়-সহ) দু'টি গোল করে দলকে জেতান দুই ডিফেন্ডার ব্রেন্ডন হ্যামিল এবং আশিস রাই। দলের ফরোয়ার্ডরা যেখানে গোল করতে ব্যর্থ হন, সেখানে ডিফেন্ডাররা গোল করে জেতানোয় সমর্থকদের অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে। তবে কোচ এই উদ্বেগের বিষয়টি কার্যত উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘ফুটবলে আসল ব্যাপার হল জায়গা তৈরি করা এবং তা কাজে লাগানো। তাই আমার কাছে কে গোল করল, সেটা বড় ব্যাপার নয়। ব্রেন্ডন, আশিস, মনবীর এমন কী বিশাল, যে কেউ গোল করতে পারে। আসল কথা হল জায়গা তৈরি করতে পারছি কি না আমরা। ব্রেন্ডনের গোলের আগে কিন্তু কিয়ান এবং আর্মান্দো সেই জায়গাটা ওকে তৈরি করে দিয়েছিল। অনুশীলনে আমরা এ রকম করে থাকি।’
আরও পড়ুন: পাঁচে ৫ মোহনবাগানের, হায়দরাবাদকে হারিয়ে তিনে উঠল সবুজ-মেরুন
কোচের মতে, দলের সবাইকেই সব রকম ভূমিকা পালন করতে জানতে হবে। বলেছেন, ‘আশিসকে আমরা উইঙ্গারের মতোই ব্যবহার করি, ডিফেন্ডার নয়। রক্ষণেও একই ভাবে খেলি আমরা। ডিফেন্ডাররা সব সময়ই যে সফল হয়, তা নয়। তাদের সাহায্য করতে সব সময়ই মাঝমাঠ বা আক্রমণ থেকে খেলোয়াড়রা নেমে আসে। এবং সেটা নির্ভর করে প্রতিপক্ষ কতটা হাইপ্রেস ফুটবল খেলছে, তার ওপর। সব দলেরই আক্রমণ ও রক্ষণের প্রয়োজন আছে। আশা করি, আমাদের পরিকল্পনা সফল হবে। তাই স্কোরারের নাম, কে অ্যাসিস্ট করছে, আমার কাছে এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এগুলো শুধুই পরিসংখ্যানের জন্য।’
দিমিত্রি পেত্রাতোস বুধবারের ম্যাচে খেলতে পারবেন কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে তিনি না খেললেও দলের সিস্টেমে কোনও পরিবর্তন হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিলেন কোচ। তাঁর মতে, ‘যদি কোনও খেলোয়াড়কে পাওয়া না যায়, তা হলে পরিবর্ত খেলোয়াড়দের জন্য কিছুক্ষেত্রে স্টাইল বদলাতে হয়। বিশেষ করে পজিশনাল অ্যাটাকের ক্ষেত্রে। জেসন ও আর্মান্দোর চেয়ে দিমিত্রির খেলার ধরন আলাদা। আমাদের কাজ হল হাতে যে খেলোয়াড়রা রয়েছে, তাদের খেলার ধরন অনুযায়ী পরিকল্পনা তৈরি করা।’
ফেরান্দো আরও যোগ করেছেন, ‘আশিক, দিমি, আনোয়ারদের মিস করছি ঠিকই। কিন্তু আমাদের হাতে একটা ভালো দল আছে। বিকল্প সব সময়েই তৈরি থাকে। আমাদের বিকল্পরা তৈরিও। সিস্টেম ঘন ঘন পাল্টানো কঠিন। বিশ্বের কোথাও এটা হয় না। সিস্টেমের কথা মাথায় রেখেই মরশুমের শুরুতে দল গড়া হয়। সেই অনুযায়ীই সিস্টেম বাছাই করা হয়। তবে পরিকল্পনায় বদল আসতেই পারে। যে খেলোয়াড়দের পক্ষে যে পরিকল্পনা মানানসই হবে, সেই পরিকল্পনা অনুযায়ীই খেলা উচিত। লক্ষ্য তো শেষে একটাই। তিন পয়েন্ট পাওয়া।’
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।