ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করা হয়েছিল বাইরের লোকদের কাছে। ফেসবুকের কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কাণ্ডে তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল প্রযুক্তি ও রাজনীতির বিশ্ব। শেষ পর্যন্ত ক্লাস-অ্যাকশন মামলায় ৭২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিতে রাজি হয়েছে ফেসবুক। ভারতীয় মুদ্রায় যা ৫,৯৮২ কোটি টাকারও বেশি। বৃহস্পতিবার এই প্রস্তাবিত ক্ষতিপূরণের সম্মত হয় সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থা। আপাতত এটি ফেডারেল বিচারপতির অনুমোদন সাপেক্ষ। মার্কিন ডেটা সুরক্ষার ক্ষেত্রে কোনও ক্লাস অ্যাকশনে প্রদান করা সবচেয়ে বড় অঙ্ক এটি।
ব্রিটিশ রাজনৈতিক পরামর্শদাতা সংস্থা কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা। অনেকটা ভারতের প্রশান্ত কিশোরের I-PAC-এর মতো। ২০১৮ সালে জানা যায়, এই কেমব্রিজ অ্যানালিটিকাকে প্রায় ৮.৭ কোটি ব্যবহারকারীর ডেটা অ্যাক্সেস করার অনুমতি দিয়েছিল ফেসবুক। এর ফলে কীভাবে রাজনৈতিক ছক কষা যাবে, মানুষের অভ্যাস, প্রবণতা, তাদের কীভাবে টার্গেট করে বিজ্ঞাপন দেওয়া যায়, কার কী চাহিদা সেই বিষয়ে পরিসংখ্যান, তথ্য বানাতে সুবিধা হয় কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার। ২০১৮ সালে পুরো বিষয়টা ফাঁস হওয়ার পরেই শোরগোল পড়ে যায়। আরও পড়ুন: নতুন বছরের জন্য দু'টি ধামাকা অফার আনল রিলায়েন্স জিও
কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা এখন বন্ধ। ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতি হওয়ার পিছনে এই সংস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। ট্রাম্পের হয়ে প্রচার অভিযানের বরাত পেয়েছিল তারা। আর তা অত্যন্ত সফলভাবে করে সংস্থা। অভিযোগ, সোশ্যাল মিডিয়ায় লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারীর তথ্যকে কাজে লাগায় তারা। ভোটার প্রোফাইলিং এবং টার্গেট বিজ্ঞাপন করার উদ্দেশ্যে লক্ষ লক্ষ ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ব্যক্তিগত তথ্য অ্যাক্সেস করা হয়। এর মাধ্যমে একেবারে টার্গেট ভোটারদের চিহ্নিত করে ফেলে সংস্থা।
কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা সেই তথ্য ব্যবহারকারীদের সম্মতি ছাড়াই নিয়েছিল। ফেসবুক এক গবেষককে তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন একটি অ্যাপ কার্যকর করতে কাজে লাগিয়েছিল, তা লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারীর ডেটা সংগ্রহ করে। সেই গবেষকের থেকেই সমস্ত তথ্য নিয়ে নেয় কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা।
মেটা এই মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কিন্তু ফেসবুক কোনও ভুল স্বীকার করেনি। একটি বিবৃতিতে সংস্থা বলেছে, এই নিষ্পত্তির একটাই কারণ। সেটি নাকি তাদের 'কমিউনিটি এবং শেয়ারহোল্ডারদের জন্য সবচেয়ে সেরা সিদ্ধান্ত।'
তবে এর থেকে কী ফেসবুক কর্তৃপক্ষ শিক্ষা নিয়েছে? মেটা(আগে ফেসবুক নাম) জানিয়েছে, 'গত তিন বছরে আমরা প্রাইভেসির বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করেছি। একটি ব্যাপক প্রাইভেসি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করেছি।'
কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির পর ফেসবুকের প্রাইভেসি নীতি নিয়ে তীব্র বিতর্ক হয়। মার্কিন কংগ্রেসের শুনানিতে রীতিমতো সামনে বসিয়ে মেটার প্রধান মার্ক জুকারবার্গকে একের পর এক প্রশ্ন করা হয়। সেই ভিডিয়ো বার বার ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ব্যবহারকারীদের আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, ব্যক্তিগত ডেটার সুরক্ষিত রাখার দাবি করে ফেসবুক ইউজারদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। প্রকৃতপক্ষে তারা নিজের পছন্দ মতো হাজার হাজার বহিরাগতদের তাদের ডেটা অ্যাক্সেস করতে দেয়। আরও পড়ুন: ২০২২-এ WhatsApp বদলেছে অনেকটা, জানেন নতুন কী কী ফিচার্স এসেছে?
ফেসবুক যুক্তি দিয়েছিল যে, তার ব্যবহারকারীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুদের সঙ্গে কী শেয়ার করছেন, সেই তথ্যের কোনও প্রাইভেসির প্রয়োজন নেই। মার্কিন জেলা বিচারপতি ভিন্স ছাবরিয়া সেটি 'অত্যন্ত খারাপ ভাবনা' বলে অভিহিত করেন। ২০১৯ সালে তিনি মামলাটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন।